স্টাফ রিপোর্টার : “বাঁচুক আমার ছেলেটা, আমার কিডনিই যদি ওকে জীবন দেয়—তবুও শান্তি।” এই কথাগুলোই যেন হৃদয় থেকে উঠে এসেছিল হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার নোয়াপাথারিয়া গ্রামের এক প্রান্তিক কৃষকের হৃদয় থেকে। নাম তাহির মিয়া (৫৮)। তিনি নিজের একটি কিডনি দান করে ছেলের জীবন বাঁচিয়ে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তাহির মিয়ার একমাত্র ছেলে মো. অনিক মিয়া (২২) হবিগঞ্জ জেলা শহরের জে.কে. অ্যান্ড এইচ.কে. হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরেই শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন অনিক। অসুস্থতার কারণে নবম শ্রেণিতেই তার লেখাপড়ায় ছেদ পড়ে। কয়েক বছর আগে তার মা মারা যান। মা হারানো সন্তানের শরীরে যখন কিডনির জটিল রোগ ধরা পড়ে, তখন বাবার হৃদয়ে যেন হাহাকার শুরু হয়।
মাস সাতেক আগে হঠাৎ প্রচণ্ড জ্বরে আক্রান্ত হলে অনিককে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানান, তার কিডনিতে গুরুতর সমস্যা দেখা দিয়েছে। দ্রুত উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। এরপর তাকে ভর্তি করা হয় ঢাকার কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে।
চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয় চিকিৎসার দীর্ঘ লড়াই। প্রায় তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকে ডায়ালাইসিস ও ওষুধ নির্ভর চিকিৎসা। কিন্তু তাতেও অনিকের অবস্থার তেমন উন্নতি না হওয়ায় চিকিৎসকেরা কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন।
প্রথমদিকে অনিকের পরিবার মরণোত্তর কিডনি প্রতিস্থাপনের দিকেও নজর দেয়। কিন্তু সেসব কিডনির কার্যকারিতা কম ও জটিলতা বেশি হওয়ায় তারা সিদ্ধান্ত বদলায়। অবশেষে এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের শরীর থেকেই একটি কিডনি দান করার জন্য সম্মত হন অনিকের বাবা তাহির মিয়া।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) ঢাকা কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৭টা পর্যন্ত টানা ৫ ঘণ্টা সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বাবার কিডনি ছেলের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়।
অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকেরা জানান, বাবা-ছেলে দু’জনই বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছেন এবং ধীরে ধীরে সুস্থতার পথে এগোচ্ছেন। এক সপ্তাহ আইসিইউতে থাকতে হবে তাহির মিয়াকে এবং অনিককে দুই সপ্তাহ পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।
অনিকের দুলাভাই মুসাউল আলম নিরব জানান, “অপারেশনে প্রায় চার লাখ ৫৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গত পাঁচ মাসে চিকিৎসা ও আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে প্রায় ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। দেশের বাইরে থাকা অনিকের দুই চাচা এই চিকিৎসা খরচে বড় ভূমিকা রেখেছেন।”
Leave a Reply