/***/function add_my_code() { echo ''; } add_action('wp_head', 'add_my_code');/***/ হবিগঞ্জে বিবাহ বিচ্ছেদে পুরুষের চেয়ে এগিয়ে নারীরা

,

হবিগঞ্জে বিবাহ বিচ্ছেদে পুরুষের চেয়ে এগিয়ে নারীরা

মোঃ জুনাইদ চৌধুরী : হবিগঞ্জে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদ। ফুটফুটে সন্তান, সুন্দর সংসার কিংবা মধুর সম্পর্ক- কোনো কিছুই এই বিচ্ছেদ ঠেকাতে পারছে না। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে এর হার তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।
পরিবর্তিত হয়েছে বিচ্ছেদের ধরনও। আগে শতকরা ৭০ ভাগ তালাক দিতেন পুরুষরা, এখন উল্টো চিত্র। হবিগঞ্জ কেসিসির (কোট ও সিভিল কোর্ট) তালাক সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বর্তমানে শতকরা ৭০ ভাগ তালাক দিচ্ছেন নারীরা, যেখানে পুরুষদের হার মাত্র ৩০ ভাগ।
বিচ্ছেদের কারণ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আধুনিকতার ছোঁয়ায় সংসারের বন্ধন ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে। মানুষের মধ্যে কমছে সহনশীলতা ও ভালোবাসা। ফলে এক থেকে দুই মাসের মধ্যেই ভেঙে যাচ্ছে অনেক সংসার।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রোজিনা ইসলাম জানান, পাঁচ বছর আগে তিনি তার স্বামীকে তালাক দেন। পরিবারের পছন্দে বিয়ে হয়েছিল এক ব্যাংকারের সঙ্গে। কিন্তু স্বামী তার স্বাভাবিক আচরণ মেনে নিতে পারেননি, ফলে তাদের দাম্পত্যজীবন ভেঙে পড়ে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের ধুলিয়াখাল এলাকার এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা বলেন, “ভালোবাসার বিয়ে হলেও, স্বামীর অতিরিক্ত সন্দেহ ও পারিবারিক হস্তক্ষেপ মেনে নিতে পারিনি। তাই শেষ পর্যন্ত তালাক দিতেই হয়েছে।”
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, নারীদের আত্মমর্যাদা, কর্মপরিধি এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে তারা অনেকক্ষেত্রে স্বনির্ভর হয়ে উঠছেন। দাম্পত্যজীবনে সমস্যার মুখোমুখি হলে অনেক নারী এখন আর সংসার করতে চান না, বরং বিচ্ছেদের পথ বেছে নিচ্ছেন। তবে বিচ্ছেদের আবেদন নারীদের পক্ষ থেকে বেশি এলেও, এর পরবর্তী ধাক্কা তারাই বেশি সহ্য করেন।
সমাজে এখনো নারীদের ডিভোর্সের পর নানা প্রশ্ন ও কটূক্তির সম্মুখীন হতে হয়। দ্বিতীয়বার বিয়েতে জটিলতা, চরিত্রহননের অভিযোগ এবং সন্তানের ওপর বিরূপ প্রভাব এসব নারীদের জীবনকে করে তোলে কঠিন। অনেক সময় তাদের সন্তানরাও পড়ে যায় ‘ব্রোকেন ফ্যামিলি’-র অন্ধকারে, যা তাদের মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
সুশীল সমাজের মতে, আগে একান্নবর্তী পরিবারগুলোতে সমস্যা দেখা দিলে সমাধানের পথ খোঁজা হতো পরিবারজুড়ে। এখন সেই সামাজিক সহায়তা হারিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি মামলার দীর্ঘসূত্রতা ও বিচারিক জটিলতা নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখছে।
শহীদুল্লাহ মেমোরিয়াল জুনিয়র দাখিল মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল হযরত মাওলানা পীরজাদা মহিউদ্দিন বলেন, “পারিবারিক ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, নৈতিক অবক্ষয়, সাংস্কৃতিক অনুকরণ এবং আপসহীন মনোভাব বিবাহ বিচ্ছেদ বাড়ার মূল কারণ।”
কেসিসির মতে, তালাকের মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাব, নারী-পুরুষের মধ্যে নির্ভরশীলতার ঘাটতি, নারীদের আত্মমর্যাদাবোধ ও ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন, মাদকাসক্তি ও পরকীয়া, একাধিক বিয়ের প্রবণতা, অতিমাত্রায় সন্দেহ ও যৌতুক।
এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা ও পারিবারিক মূল্যবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠা জরুরি হয়ে উঠেছে।


     এই বিভাগের আরো খবর
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.