/***/function add_my_code() { echo ''; } add_action('wp_head', 'add_my_code');/***/ এক সময়ের বার্তাবাহক আজ কালের সাক্ষী

,

এক সময়ের বার্তাবাহক আজ কালের সাক্ষী

রামকৃষ্ণ তালুকদার, আজমিরীগঞ্জ : “আপনার ঠিকানায় চিঠি আসবে তো? এক সময় এই প্রশ্নেই শুরু হতো অপেক্ষার প্রহর। নব্বইয়ের দশক বা তার আগের সময়ে, ডাকবাক্স ছিল আবেগ, ভালোবাসা ও সম্পর্কের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রিয়জনের হাতের লেখা চিঠি পেয়ে হৃদয় কেঁপে উঠতো, উত্তরের আশায় প্রতিদিন ছুটে যাওয়া হতো পাড়ার সেই লাল রঙের ডাকবাক্সের কাছে।
ডাকবাক্স এক সময় ছিল চিঠির মধুর বার্তাবাহক। কারও অনুভূতির নিঃশব্দ স্বীকারোক্তি, কারও চোখের অশ্রু ঝরানো আর্তি, কিংবা দূরদেশে প্রবাসী সন্তানের খোঁজ — সবকিছুই বাঁধা থাকত সেই খামে, আর পৌঁছে যেত এক অদৃশ্য বন্ধনের সুতো টেনে।
আজ সেই ডাকবাক্স নিঃসঙ্গ। কালের স্রোতে স্মার্টফোন, ইমেইল আর মেসেঞ্জারের দাপটে হারিয়ে গেছে তার প্রয়োজনীয়তা। ঝড়-বৃষ্টি, শীত-গ্রীষ্ম উপেক্ষা করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা সেই লাল বাক্স এখন কেবলই এক নিঃসঙ্গ স্মৃতিস্তম্ভ।
এক সময়কার প্রিয় ডাকপিয়নও যেন হারিয়ে গেছে সেই বেলাঘণ্টার আওয়াজের সঙ্গে। পাড়ায় যখন তিনি ঢুকতেন, কান খাড়া করে থাকত মা, বাবা, ভাই, বোন — কেউ হয়তো মাসের পর মাস অপেক্ষায় আছেন একটি খবরের, একটি উত্তরের। কার চিঠি এসেছে জানতে পাড়ার লোকজন ভিড় করত।
কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে সেই অমর গান- “রানার ছুটেছে তাই ঝুম ঝুম ঘন্টা বাজছে রাতে
রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে…” এ গান আজ যেন আরও বেদনাহত করে তোলে।
চিঠিতে লেখা থাকত প্রিয়জনের অন্তরের আকুতি। কেউ অপেক্ষায় থাকত, পাঠক চিঠি পড়ে বলে দেবে কি না তার নাম লেখা আছে। যদি নাম না থাকত, চোখের জল লুকানো যেত না। প্রেমিক-প্রেমিকারা চিঠির মাধ্যমে উজাড় করত মন খোলা সব কথা, যা মুখে বলা হতো না কখনোই।
ডাকঘর, ডাকপিয়ন, চিঠি আর সেই লাল রঙের ডাকবাক্স আজ তারা ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নিয়েছে। যান্ত্রিক জীবনের মাঝে তাদের আর কদর নেই। কিন্তু স্মৃতির পাতায় আজও জ্বলজ্বলে হয়ে আছে সেই ডাকবাক্স, দাঁড়িয়ে আছে নির্ভার অগণিত না বলা কথার নীরব সাক্ষী হয়ে।


     এই বিভাগের আরো খবর
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.