,

জেলা পরিষদ নির্বাচন ২৮ ডিসেম্বর : এখনও চুড়ান্ত হয়নি নির্বাচন ও আচরণ বিধি

সময় ডেস্ক ॥ জেলা পরিষদ নির্বাচন আগামী ২৮ ডিসেম্বর। দিনক্ষণ ঘোষণা হলেও এখনও পর্যন্ত জেলা পরিষদ নির্বাচনের বিধি ও আচরণ বিধি চুড়ান্ত করে গেজেট আকারে প্রকাশ ও প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। এই জন্য তারা হাতে বেশি সময় নেই বলেও মনে করছে। আগামী ১০-১৩ নভেম্বরের মধ্যে জেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। আর তফসিলের আগেই কমিশন নির্বাচন বিধি ও আচরণ বিধি চুড়ান্ত করে গেজেট আকারে প্রকাশ ও প্রজ্ঞাপন জারি করতে চাইছে। এখন নির্বাচন বিধি ও আচরণ বিধির খসড়াটি আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় খসড়াটি পর্যালোচনা করছে। সেটি পর্যালোচনা শেষে আইন মন্ত্রণালয় এই ব্যাপারে ভেটিং দিবে। তারা ভেটিং দেওয়ার পর সেটি চুড়ান্ত করে এর পর প্রজ্ঞাপন জারি ও গেজেট প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন। এই ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলা পরিষদ নির্বাচন বিধি ও আচরণ বিধি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পর্যালোচনা করার পর সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। নির্বাচন ও আচরণ বিধির খসড়া যেটি নির্বাচন কমিশন করেছে সেটাতে আইন মন্ত্রণালয় কবে নাগাদ ভেটিং দিতে পারে এই ব্যাপারে জানতে চাইলে আইন মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আগামী সপ্তাহে ভেটিং দেওয়া হবে। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, তফসিল ঘোষণা হতে পারে ১০-১৩ নভেম্বর। সেই ক্ষেত্রে হাতে তো বেশি সময় নেই। তফসিলের আগে এটা চুড়ান্ত করা প্রয়োজন নয় কি এমন প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, এটা আমরা আগামী সপ্তাহে দিয়ে দিলে পরের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করবে নির্বাচন কমিশন। আচরণ বিধিতে কোন পরিবর্তন আসছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব কিছু দেখার পর বলতে পারবো। এদিকে নির্বাচন কমিশনার আব্দুল মোবারক বলেন, নির্বাচন বিধি ও আচরণ বিধি সম্পন্ন হলে এরপর আমরা নির্বাচনের প্রয়োজনীয় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবো। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নির্বাচনের তারিখ জানানোর পর কমিশন থেকেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। জেলা পরিষদ নির্বাচন আইন এর আগে সংসদে পাস হয়েছে। ১৬ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জেলা পরিষদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিতে চাইছে না। তাদের আশঙ্কা বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নিলে তারা পরাজিত হবে। আর ভোটের নিয়মটাও করা হয়েছে একইভাবে। সরকারের লক্ষ্য ৬৪ টি জেলা সবটাতেই নিজেদের দলের লোক নির্বাচিত করানো। সেই ভাবে আইনেও সংশোধনী আনা হয়েছে। এখন চলছে আইনের বিধি ও রুল জারির কাজ। সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশন এবার অনলাইনেও মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ রেখেছে। জেলা পরিষদ নির্বাচনের বিধিতে আরো বিভিন্ন বিষয় রাখা হয়েছে। জেলা পরিষদ নির্বাচনের সংশোধিত আইনে আদালত কর্তৃক চেয়ারম্যান ও সদস্যদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়া সাপেক্ষে সাময়িক বরখাস্তের বিধান রয়েছে। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানদের জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। প্রার্থীর প্রস্তাবক ও সমর্থক থাকবে জনপ্রতিনিধিরাই। ৫ সেপ্টেম্বর জারি হওয়া জেলা পরিষদ সংশোধন অধ্যাদেশের আওতায় স্থানীয় সরকারের এ প্রতিষ্ঠানে নির্দলীয় নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনও নির্দলীয়ভাবে এর বিধিমালা প্রনয়ণ করে। সেখানে সুযোগ রাখা হয় এ ভোটে প্রস্তাবক ও সমর্থক হতে হলে তাকে ভোটার হতে হবে। স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরা জেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোটার। প্রত্যেক জেলায় একটি করে ভোট কেন্দ্র থাকবে। ভোটের সময় ও স্থান, ভোটার তালিকাসহ সামগ্রিক নির্বাচন পরিচালনার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা বিধিমালায় রাখা হয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী ২৫ বছর বয়সী বাংলাদেশের যে কোনো ভোটার জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। তবে ভোট দিতে পারবেন না। জন প্রতিনিধিরা ভোটার। কিন্তু তারা প্রার্থী হতে পারবেন না। বর্তমানে পার্বত্য জেলা ছাড়া দেশের ৬১ জেলা পরিষদে ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রশাসক করা হয়। এবার তাদের মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে। প্রশাসনকদের কেউ নির্বাচন করতে চাইলে জেলা পরিষদের প্রশাসকের পদ ছাড়তে হবে। জেলা পরিষদের আইনের সংশোধনী ৬ অক্টোবর জাতীয় সংসদের অনুমোদন পায়। প্রতিটি জেলায় স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের ভোটে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য নির্বাচিত হবেন। প্রত্যেক জেলায় ১৫ জন সাধারণ ও পাঁচজন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নির্বাচিত হবেন। জেলা পরিষদের সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নির্বাচনের জন্য ওয়ার্ডের সীমানাও নির্ধারণ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ভোটকেন্দ্র হবে জেলা সদরে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সীমানা নির্ধারণ, ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হবে। তা করে ২৮ ডিসেম্বর এই নির্বাচন হবে। নভেম্বরে তফসিল ঘোষণা করা হবে। প্রত্যেক জেলার অন্তর্ভুক্ত সিটি করপোরেশনের (যদি থাকে) মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিল ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিল এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের সদস্যদের নিয়ে এই নির্বাচকমন্ডলী হবে। অর্থাৎ সকল স্থরের জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কলেজ অব ইলেক্টোরাল গঠিত হবে। তারা জেলা পরিষদের চেয়াম্যান ও সদস্য নির্বাচিত করবেন। উপজেলা পরিষদে এখন ভাইস চেয়ারম্যান পদ যুক্ত হওয়ায় সংশোধিত জেলা পরিষদ আইনের খসড়ায় নির্বাচকমন্ডলীতে তাদের নাম রয়েছে। নির্বাহী ক্ষমতা চেয়ারম্যানের হাতেই থাকবে। তবে পরিষদ চাইলে এর সব বা যে কোনো নির্বাহী ক্ষমতা কোনো অস্থায়ী প্যানেল চেয়ারম্যান বা কোনো সদস্য অথবা সরকার অনুমোদিত কোনো উপযুক্ত কর্মকর্তাকে দিতে পারবে। চেয়ারম্যান না থাকলে এর সদস্য বা সরকারের কোনো মনোনীত কর্মকর্তা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। চেয়ারম?্যানের অনুপস্থিতিতে সরকার কত দিনের জন্য অন্য কাউকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে বসাতে পারবে সে বিষয়ে খসড়ায় স্পষ্ট কিছু নেই। জেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের শপথের সময় পরিচিতির জন্য পিতা বা স্বামীর নামের সঙ্গে মায়ের নাম যোগ করার কথাও সংশোধিত আইনে রয়েছে। সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে আগামী ডিসেম্বরে জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠান করানো। সরকার পরিকল্পনা অনুযায়ী এই নির্বাচন করানোর জন্য সব কাজ করছে। স্থাণীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরে জেলা পরিষদের নির্বাচন হবে। সেই হিসাবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।


     এই বিভাগের আরো খবর