,

নবীগঞ্জের কুশিয়ারা নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন

মতিউর রহমান মুন্না ॥ নবীগঞ্জের বিবিয়ানা বিদ্যুৎ প্লান্ট সংলগ্ন আউশকান্দি ইউনিয়নের পারকুল গ্রামে কুশিয়ারা নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালীরা সরকারের অনুমতি না নিয়ে অবৈধভাবে এ বালু উত্তোলন করে বিবিয়ানা বিদ্যুৎ প্লান্টে বিক্রি করছে। এতে নদী ভাঙনের আশংকা করছেন এলাকাবাসী এবং হুমকির মুখে রয়েছে বিবিয়ানা বিদ্যুৎ প্লান্ট ও কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষ। অনুমোদন না নিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে সরকার হারাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব। অন্য দিকে লক্ষ লক্ষ টাকা মুনাফা অর্জন করে অনেকেই আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছেন। এনিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয় সুত্রে জানাযায়, নবীগঞ্জ উপজেলার পারকুল গ্রামের বিবিয়ানা বিদ্যুৎ প্লান্ট সংলগ্ন কুশিয়ারা নদীতে একাধীক স্থানে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করছেন কয়েকটি বালু খেকো সিন্ডিকেট। আর এ বালু বিক্রি করা হচ্ছে বিবিয়ানা বিদ্যুৎ প্লান্টে। কুশিয়ারা নদীর পানিতে ভাসমান ড্রেজার মেশিন বসিয়ে পাইপের মাধ্যমে নদীর গভীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে নদীর পাড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। আশ পাশের আবাদি জমি ও বসতবাড়ি হুমকির মুখে পড়েছে। স্থানীয়রা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করে তাদের পরিবেশ বিপর্যয় থেকে বাঁচাতে আকুতি জানিয়েছেন। স্থানীয়রা এ প্রতিনিধিকে জানান, এভাবে বালু উত্তোলন করায় নদীর গভীরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমেই ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদী তীরবর্তী বাড়িঘর ও আবাদি জমি হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। এর আগে একই কারণে তাদের কিছু জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে তাদের অবশিষ্ট জমি ও বিলীন হয়ে যাবে। প্রকাশ্যে নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হলেও স্থানীয় লোকজন তাদের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া নদী ভাঙন দেখা দিলে হুমকির মুখে পড়তে পারে বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্টও। এ ঘটনায় এলাকার সাধারণ মানুষ এর প্রতিকার করতে না পারলেও তাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অপর দিকে অনুমোদন না দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে সরকার হারাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব। সেই সুযোগে লক্ষ লক্ষ টাকা মুনাফা অর্জন করে অনেকেই আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছেন। এর নেপথ্যে রয়েছে কয়েকটি প্রভাবশালী কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সূত্রে জানা যায়, এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের কোনো অনুমতি না নিয়েই প্রতিদিন লাখ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করছে। পরে এ বালু বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্টসহ বিভিন্ন কোম্পানিতে দেয়া হচ্ছে। এভাবে পরিকল্পনাবিহীনভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর তীরবর্তী এলাকা ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতিপূর্বে কুশিয়ারা নদীর ভাঙনে নবীগঞ্জের দীঘলবাক হাইস্কুলসহ ওই এলাকার মসজিদ, মন্দির মাদ্রাসা ও অসংখ্য বাড়িঘর এবং সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার পেচির বাজার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া অতিরিক্ত বালু উত্তোলনের ফলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এদিকে, গত ২০১৪ সনের শেষের দিকে উপজেলার এই এলাকায়ই অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ড্রেজার মেশিন, প্রচুর পরিমাণ পাইপ এবং প্রায় ৫০ লাখ ঘনফুট বালু জব্দ করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এক পর্যায়ে মালামালসহ বালুর পরিমাণ উল্লেখ করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ফের নিলামে বিক্রি করা হয়। এ ব্যাপারে প্রশাসনেরও দায়সারা ভুমিকার কারনে প্রশ্নবিদ্ধ রয়েছে। সিলেটের ওসমানী নগর ও নবীগঞ্জ থানার বিশাল এই সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালূ উত্তোলনের সাথে জড়িত। প্রকাশ্যে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজিনা সারোয়ার এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মৌখিক ভাবে গতকাল একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত পুর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।


     এই বিভাগের আরো খবর