,

জার্মানির কান্না, ব্রাজিলের বাজিমাত

সময় ডেস্ক ॥ ফুটবল এমনই। সর্বশেষ বিশ্বকাপে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাকে কান্নায় ভাসিয়ে শিরোপা উৎসব করে জার্মানরা। আর এবার জার্মানদের কান্নাভেজা রাতে জয় নিয়ে সমর্থকদের উল্লাসে মাতালো ব্রাজিল। গতরাতে ‘ই’ গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে সার্বিয়ার বিপক্ষে পরিষ্কার ২-০ গোলে জয় কুড়ায় নেইমার অ্যান্ড কোং। আর অপর ম্যাচে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেরা অঘটনের জন্মদিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ২-০ গোলে হার দেখে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানি। ই’ গ্রুপের আরেক ম্যাচে ২-২ গোলে সমতায় খেলা শেষ করে সুইজারল্যান্ড ও কোস্টারিকা।
প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে আগামী ২রা জুলাই এফ গ্রুপের রানার্সআপ দলের বিপক্ষে খেলবে ব্রাজিল। রাশিয়া বিশ্বকাপের স্টেডিয়ামগুলোর মধ্যে স্পার্তাক স্টেডিয়াম আয়তনে সবচেয়ে ছোট। ৪৫ হাজার দর্শকধারণ ক্ষমতার এই স্টেডিয়ামের মিডিয়া ট্রিবিউনও অন্যসব স্টেডিয়ামের চেয়ে মাঠের বেশ কাছে। খেলোয়াড় টেন্টের ঠিক পেছনেই মিডিয়া কর্মীদের বসার স্থান এই স্টেডিয়ামে। এখানে বসে লেখার চেয়ে খেলা উপভোগ করাটাই আর্দশ মনে হচ্ছিল। সাম্বার ছন্দে ব্রাজিলের শুরুটাও ছিল দারুণ। শুরুর মিনিট থেকে তিতের শিষ্যদের বেশ সংঘবদ্ধ মনে হচ্ছিল। ব্রাজিলের আক্রমণভাগের তারকাত্রয়ী নেইমার, জেসুস, কুটিনহোর নৈপুণ্যে ব্যতিব্যস্ত সময় কাটছিল সার্বিয়ান ডিফেন্সের।  তবে দশম মিনিটে ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়েন ব্রাজিলের ডিফেন্স তারকা মার্সেলো। গ্রুপের বাধা টপকাতে সার্বিয়ার দরকার ছিল জয়। ব্রাজিলের এক পয়েন্ট। মার্সেলোর ইনজুরির পরই সার্বিয়া বেশ কয়েকবার আক্রমণ শানায়। কিন্তু ফরোয়ার্ডদের এলেমেলো শটে সেগুলো আর নিশানা খুঁজে পায়নি। আগের দুই ম্যাচে নেইমারের খেলায় কিছুটা চিন্তিত ছিল ব্রাজিল সমর্থকরা। কোস্টারিকার বিপক্ষে গোল পেলেও গতকাল পুরো ম্যাচে তার চিরচেনা ছন্দে দেখা যায়নি নেইমারকে । এমন পরিস্থিতিতে নেইমারের পাশে দাঁড়ানো বিশ্বকাপ জয়ী তারকা রোনাল্ডোকেও ব্রাজিলের খেলোয়াড় টেন্ট থেকে সেলসাওদের উৎসাহ যোগাতে দেখা যায়। মস্কোয় ম্যাচের শুরুতেই গোল পেতে পারতো ব্রাজিল। দ্বিতীয় মিনিটে ডি বক্সের মাথা থেকে সার্বিয়ার গোলবারে নেয়া ফিলিপ্পে কুটিনহোর শট প্রতিহত হয় অফসাইডে থাকা সতীর্থ খেলোয়াড়ের গায়ে লেগে। আর চতুর্থ মিনিটে অফসাইড ফাঁদ ভেঙে সার্বিয়ার ডি বক্সে ঢুকে পড়েন গ্যাব্রিয়েল জেসুস। তবে কাছ থেকে নেয়া জেসুসের কোনাকুনি শট রুখে দেন সার্বিয়ান গোলরক্ষক ভøাদিমির স্টয়কোভিচ। দশম মিনিটে অন্য ধাক্কা খায় সেলেসাওরা। ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়েন ব্রাজিলের ডিফেন্স তারকা মার্সেলো।

brazil-match-20180628015937

২৫তম মিনিটে বল পায়ে কারিকুরি শেষে ফের ডি বক্সে ঢুকে পড়েন জেসুস। তবে এ থেকে পাওয়া সুযোগে নেইমারের কোনাকুনি শট যায় পোস্টের বাইরে। ২৯তম মিনিটে জেসুসের শট প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের গায়ে প্রতিহত হয়। ৩৪তম মিনিটে প্রতিআক্রমণে সুযোগ তৈরি হয় সার্বিয়ার। তবে বারের ওপর দিয়ে বল মারেন ভিত্রোভিচ। আর দুই মিনিট পরই ডেডলক ভাঙেন পাউলিনহো। এফসি বার্সেলোনার দুই তারকার বোঝাপড়ায় গোল নিয়ে এগিয়ে যায় ব্রাজিল। মিডফিল্ডার কুটিনহোর লব থেকে পাওয়া সুযোগে আলতো টোকায় সার্বিয়ান গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে বল জালে জড়ান পাউলিনহো। বিরতির পর শুরুতে দু’দলের খেলা ছিল অনেকটাই নিরুত্তাপ। তবে ৫৪ মিনিটে সুযোগ নষ্ট করেন নেইমার। আর ৫৯ থেকে পরের ৭ মিনিটে তিনবার সুযোগ তৈরি করে সার্বিয়া। তবে গোল আদায়ে ব্যর্থ হয় তারা। আর ৬৭তম মিনিটে নেইমারের কর্নার থেকে দারুণ হেডে থিয়াগো সিলভার গোলে চাপ কমে ব্রাজিলিয়ানদের। ব্রাজিলের শুরুর একাদশ :অ্যালিসন, থিয়াগো সিলভা, মিরান্দা, ফ্যাগনার, মার্সেলো, কৌতিনহো, ক্যাসেমিরো, পাওলিনহো, উইলিয়ান, গ্যাব্রিয়েল জেসুস এবং নেইমার।
জার্মানির ৮০ বছরের লজ্জা: বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম সেরা অঘটনের আখ্যা পাচ্ছে এটি। গতকাল শিরোপাধারী জার্মানদের নিয়ে ছেলেখেলা করলো দক্ষিণ কোরিয়া। আর ম্যাচ শেষে ফুটবলের পরাশক্তি জার্মানির বিপক্ষে ২-০ গোলে জয় কুড়ায় এশিয়ান জায়ান্টরা। এতে এবারের বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিলো জার্মানি। জার্মানরা এমন লজ্জায় ডুবলো ৮০ বছরে প্রথমবার। গ্রুপের অপর ম্যাচে একাতেরিনবার্গ অ্যারেনায় মেক্সিকোকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়নের আসনে বসে সুইডেন। বিশ্বকাপে ইতিহাসে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার গ্রুপ পর্বে বাদ পড়লো চারবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি। ১৯৩৮ বিশ্বকাপে এমন ভোগান্তির অভিজ্ঞতা হয় ইউরোপিয়ান পরাশক্তিদের। এ নিয়ে টানা তিন বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে দেখা গেলো শিরোপাধারী দলকে। ২০১০ বিশ্বকাপে ইতালি ও ২০১৪তে গ্রুপ পর্ব থেকেই তল্পিতল্পা গুটায় শিরোপাধারী স্পেন। গতকাল কোরিয়ার রক্ষণভাগ ব্যতিব্যস্ত করে রাখলেও গোলের দেখা পাননি ওজিল-ক্রুস-ভারনার-রয়সরা। উলটো ম্যাচের যোগ করা সময়ে জোড়া গোল হজম করে বসে ছন্নছাড়া হয়ে পড়া জার্মানরা। ভিডিও অ্যাসিসটেন্ট রেফারিকে (ভিএআর) আশীর্বাদ করতে পারেন কোরিয়ানরা। তাদের দুই গোলই শুরুতে বাতিল করেছিলেন ম্যাচের রেফারি। তবে ভিএআর সহায়তা নিয়ে পরে  রেফারি গোলের বাঁশি বাজান দু’বারই। তিন ম্যাচে সমান ২ জয় ও ১ হারে সুইডেন-মেক্সিকোর সংগ্রহ সমান ৬ পয়েন্ট । তবে গোল ব্যবধানে এগিয়ে সুইডেন। এক জয়, দুই হারে জার্মানির অর্জন ৩ পয়েন্ট। শেষ ম্যাচে ঐতিহাসিক জয় দেখে দক্ষিণ কোরিয়া। বিশ্বকাপে আগের দুই সাক্ষাতে জার্মানির বিপক্ষে হারের স্মৃতি ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার। শেষ ষোলোতে ‘ই’ গ্রুপের রানার্সআপদের মুখোমুখি হবে সুইডেন। যেটি হতে পারে ব্রাজিল, সুইজারল্যান্ড কিংবা সার্বিয়া। ‘ই’ গ্রুপের শীর্ষ দলের মোকাবিলা করবে মেক্সিকো। গ্রুপে চার দলের সামনেই দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার দরজা খোলা ছিল। টানা দুই ম্যাচ জিতেও স্বস্তি ছিল না মেক্সিকোর। আর দুই ম্যাচ হেরেও দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার সুযোগ ছিল কোরিয়ারও। সেক্ষেত্রে মেক্সিকোর কাছে সুইডিশদের হার দেখতে হতো তাদের।  কাজান অ্যারেনায় বল দখল ও আক্রমণে অনেক এগিয়ে ছিল জার্মানি। কোরিয়ার আক্রমণ ঠেকাতে ঘাম ঝরাতে হয় জার্মান ডিফেন্ডারদের। প্রথমার্ধের ১৯ মিনিটে কোরিয়ার ফ্রি-কিক থেকে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন জার্মান গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নয়্যার। তবে সন হিউং মিন দৌড়ে এসে শট নেয়ার আগেই বল গ্লাভসবন্দি করেন তিনি। অধিনায়ক কি সুং ইউয়েংকে ছাড়াই জার্মানির বিপক্ষে নামতে হয় দক্ষিণ কোরিয়াকে। মেক্সিকোর বিপক্ষে আগের ম্যাচে পায়ের (কাফ) ইনজুরিতে পড়েন এই সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার। ২০০৬ সালে কোচের দায়িত্ব নেয়ার পর জোয়াকিম লোর অধীনে কোনো বড় প্রতিযোগিতায় সেমিফাইনালের আগে বিদায় নেয়নি জার্মানি। এবার উদ্বোধনী ম্যাচে জার্মানিকে ১-০ গোলে হারিয়ে চমক দেখায় মেক্সিকো। আগের ম্যাচে সুইডেনের বিপক্ষে ইনজুরি সময়ের শেষ মিনিটের গোলে ২-১ ব্যবধানের নাটকীয় জয় পায় জার্মানি। সুইডেনের কাছে ১-০ ও মেক্সিকোর বিপক্ষে ২-১ গোলে হার মানে দক্ষিণ কোরিয়া। বিশ্বকাপে এ নিয়ে তৃতীয়বার দক্ষিণ কোরিয়ার মুখোমুখি হয় জার্মানি। আগের দুই ম্যাচেই জয় পায় ইউরোপিয়ান পরাশক্তিরা। সবশেষ ২০০২ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়াকে ১-০ গোলে হারায় জার্মানি। আর ১৯৯৪ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের রোমাঞ্চকর ম্যাচে জার্মানির কাছে ৩-২ গোলে হার দেখে কোরিয়ানরা। রাশিয়া বিশ্বকাপের আগে সব মিলিয়ে দুইদলের মধ্যকার তিনটি ম্যাচ মাঠে গড়ায়। জার্মানির বিপক্ষে দক্ষিণ কোরিয়া একমাত্র জয় দেখে ২০০৪ সালের প্রীতি ম্যাচে।
মেক্সিকোকে উড়িয়ে সুইডেনের ইতিহাস: বাঁচা-মরার ম্যাচে গতকাল মেক্সিকোকে ৩-০ গোলে হারিয়ে মাঠ ছাড়ে সুইডেন। প্রথমার্ধে দুইদলের কেউই গোলের দেখা পাননি। ম্যাচের ৫০তম মিনিটে লিড নেয় সুইডেন। মিডফিল্ডার ভিক্টর ক্লাইসনের ক্রস থেকে বাম পায়ের ভলিতে বল জালে পাঠান সুইডিশ লেফটব্যাক লুডভিগ অগাস্টিনসন। ৬২ মিনিটে পেনাল্টি থেকে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন সুইডেন অধিনায়ক আন্দ্রেস গ্রাঙ্কভিস্ট। ম্যাচে ফিরতে মরিয়া মেক্সিকো আত্মঘাতী গোলে ম্যাচ থেকেই ছিটকে যায়। ৭৪ মিনিটে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের জালে পাঠান মেক্সিকান ডিফেন্ডার এডসন আলভারেজ। বিশ্বকাপে এর আগে সুইডেন ও মেক্সিকো একবারই মুখোমুখি হয়। ১৯৫৮ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে মেক্সিকানদের ৩-০ গোলে হারায় স্বাগতিক সুইডেন। প্রীতি ম্যাচসহ সব মিলিয়ে আগের ৯ বারের দেখায় চার ম্যাচে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সুইডিশরা। মেক্সিকোর জয় ২ ম্যাচে। বাকি ৩ ম্যাচ ড্র। এই ম্যাচের আগে সুইডেনের বিপক্ষে সবশেষ পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই অপরাজিত থাকে মেক্সিকো (২ জয় ও ২ ড্র)।


     এই বিভাগের আরো খবর