মতিউর রহমান মুন্না ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে এবার ভোটযুদ্ধে মুখোমুখি হয়েছেন দুই বর্ষীয়ান নেতার পুত্র। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্ষীয়ান নেতা দেওয়ান ফরিদ গাজীর তনয় শাহনেওয়াজ মিলাদ গাজী। তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়বেন। এই আসনেই ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনীত প্রার্থী প্রয়াত মন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার তনয় ড. রেজা কিবরিয়া লড়বেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে। হেভিওয়েট এই দুই প্রার্থীর বাড়ি নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নে। দুই জোটের হেভিওয়েট দুই প্রার্থী মনোনয়ন পাওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে নতুন আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। দুই প্রার্থী নৌকা ও ধানের শীষের মনোনয়ন পাওয়ায় এলাকাবাসী ও সাধারণ ভোটাদের মধ্যে চলছে আলোচনার ঝড়। এ আসন থেকে কে
হবেন একাদশ সংসদ নির্বাচনের বিজয়ী এমপি তা নিয়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চায়ের দোকানে সাধারণ মানুষের মধ্যে চলছে আলোচনা। মিলাদ গাজীর বাড়ি দেবপাড়া ইউনিয়নের দেবপাড়া গ্রামে ও ড. রেজা কিবরিয়ার এর পাশবর্তী জালালসাফ গ্রামে।
আওয়ামীলীগের মনোনিত প্রার্থী শাহনেওয়াজ মিলাদ গাজীর পিতা দেওয়ান ফরিদ গাজী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বেশ কয়েকবার হবিগঞ্জ-১ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন এবং শেখ হাসিনার আস্থা অর্জন করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় তিনি মৃত্যূবরণ করেন। সেখানে উপনির্বাচেন বিজয়ী হন বিএনপির শেখ সুজাত মিয়া। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও মিলাদ গাজীকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও জোটগত কারণে আওয়ামীলীগ আসনটি ছেড়ে দেয় জাতীয় পার্টিকে। তখন বিনা প্রতিন্ধন্দ্বিতায় এমপি হন জাতীয় পার্টির নেতা এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু। এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেওয়ান ফরিদ গাজীর ছেলে দেওয়ান শাহনেওয়াজ মিলাদ গাজী নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেওয়ায় স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীর মাঝে উৎসাহ উদ্দিপনা বিরাজ করছে। নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করতে তারা চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যাপক প্রচারণা।
অপর প্রার্থী ড. রেজা কিবরিয়া গণফোরামের হয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছেন। তার বাবা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় হবিগঞ্জ সদর আসনের এমপি হিসেবে দায়িত্বপালনকালে ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারী হবিগঞ্জের বৈদ্যের বাজারে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এ আসনে ড. রেজা কিবরিয়াকে ধানের শীষে প্রতীকে নির্বাচনে মনোনিত করায় স্থানীয় বিএনপির বিশাল একটি অংশে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাকে সহজভাবে মেনে নিতে পারছেননা অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীরা। কারণ এ আসনেই মনোনয় প্রত্যাশী ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সুজাত মিয়া। তাকে দলীয়ভাবে মনোনিতও করা হয়। শেষ পর্যন্ত জোটগত কারণে ঐক্যফ্রন্ট থেকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে শেখ সুজাত কে বাদ দিয়ে ড. রেজা কিবরিয়াকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্ধ দেওয়া হয়। এ ছাড়াও এই আসনেই রয়েছেন আরো প্রার্থী। মহাজোটের বাহিরেও লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক, চৌধুরী ফয়সল শোয়েব (মই), মো. নূরুল হক (গামছা) ও জুবায়ের আহমেদ (মোমবাতি)। এদের মধ্যে আলোচনায় বর্ষীয়ান দুই নেতার ছেলে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ায় এই আসনে কে হবেন বিজয়ী তা সবার আলোচনার শেষ নেই।