,

নিহত ওয়াসিমের ফাইল ছবি

শেরপুরে চলন্ত বাস থেকে ফেলে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নবীগঞ্জের ওয়াসিমকে হত্যা!

ভাড়া নিয়ে বাগবিতণ্ডার জের ধরে তাকে ধাক্কা দেয় হেলপার!

মতিউর রহমান মুন্না ॥ ভাড়া নিয়ে বাগবিতণ্ডার জের ধরে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নবীগঞ্জের ওয়াসিম আফনানকে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা সিলেট মহাসড়কের শেরপুর নামক স্থানে। নিহত ওয়াসিম (২১) সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র এবং নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের রুদ্র গ্রামের (ঘোড়ি বাড়ির) মোঃ আবু জাহেদ মাহবুব ও ডাঃ মীনা পারভিনের ছেলে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছে। অপরদিকে, চাপা দিয়ে পালিয়ে যাওয়া সেই বাসটিকে আটক করেছে পুলিশ। ওয়াসিমের সহপাঠী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওয়াসিম শনিবার সকালে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে নিজ এলাকায় বিয়ের অনুষ্ঠানে আসে। অনুষ্ঠান শেষে বিকালে তারা বাড়ি থেকে আউশকান্দি বাজারে যান। সেখান থেকে সিলেট-ময়মনসিংহ রুটে চলাচলকারী উদার পরিবহনের একটি বাসে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। গাড়িটি শেরপুর এলাকায় যাওয়ার পর ভাড়া নিয়ে বাসের হেলপার ও চালকের সাথে তাদের বাগবিত-া হয়। এক পর্যায়ে সেই বাসের হেলপার তাকে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এতে ঘটনাস্থলেই ওয়াসিমের মৃত্যু হয়। এদিকে শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় গতকাল শনিবার রাতে সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। পরে সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। ওয়াসিমের এই অকাল মৃত্যুর সংবাদে তার নিজ বাড়ি রুদ্র গ্রাম এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

সিলেটের হুমায়ুন রশীদ চত্বরে সড়ক অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা।

সিলেটের হুমায়ুন রশীদ চত্বরে সড়ক অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা।

সবাই ঘাতক বাস চালক ও হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছেন। ওই বাসের অপর যাত্রী নয়ন রঞ্জন জানান, ভাড়া নিয়ে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে হেলপার, ওয়াসিম ও রাকিবকে ধাক্কা দিয়ে বাসের দরজা লাগিয়ে দেন। এ সময় চালক দ্রুত গতিতে বাস চালানো শুরু করেন। এতে রাকিব সড়কে ছিটকে পড়লেও ওয়াসিমের পা দরজার সঙ্গে আটকে যায়। একপর্যায়ে ওয়াসিম বাসের পেছনের চাকায় পিষ্ট হয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাদের দুইজনকেই সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওয়াসিমকে মৃত ঘোষণা করেন। সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের শেরপুর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই কামরুল ইসলাম বলেন, ওয়াসিম আফনানকে চাপা দিয়ে উদার পরিবহনের বাসটি (ঢাকা মেট্রো-ভ-১৪-১২৮০) পালিয়ে যাচ্ছিল। বাসটিকে ধাওয়া করে বেগমপুর এলাকা থেকে আটক করা হয়। তবে বাস ফেলে চালক ও হেলপার পালিয়ে যায়। উদার পরিবহনের ওই বাসটির বিরুদ্ধে ওয়াসিম আফনানকে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে বাস থেকে ফেলে চাপা দিয়ে হত্যার’ অভিযোগ ওঠেছে। এদিকে- বাসচাপায় ওয়াসিমের মৃত্যুর প্রতিবাদে রাতে সিলেট নগরীর প্রবেশদ্বার হুমায়ুন রশীদ চত্বরে সড়ক অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বাসের চালক-শ্রমিকের ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দেয়। এক পর্যায়ে তারা উদার পরিবহনের কাউন্টারের দিকে এগিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের বাঁধা দেয় বলে জানান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।  অপর দিকে বাস চালক জুয়েল আহমদ (২৬) কে আটক করেছে পুলিশ।

আটক বাস চালক জুয়েল

আটক বাস চালক জুয়েল

জুয়েল মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থানার বাড়াউরা গ্রামের মৃত আজিদ মিয়ার পুত্র। দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ গতকাল শনিবার রাত পৌণে ১১টার দিকে কদমতলী বাসটার্মিনাল এলাকা থেকে তাকে আটক করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট মেট্টোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জেদান আল মুসা।


     এই বিভাগের আরো খবর