,

নবীগঞ্জে বৃদ্ধা নীলু হত্যাকান্ড: ঘাতক রঞ্জিত কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিনিধি ॥ নবীগঞ্জে ঘরে প্রবেশ করে নীলু সূত্রধর (৬০) নামে এক বৃদ্ধাকে কুপিয়ে হত্যার ৪ দিন পর গত শনিবার দিবাগত রাতে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার ঘুমড়াকান্দা মহল্লা এলাকা থেকে ঘাতক রঞ্জিতকে (২৪) গ্রেফতার করে একদল পুলিশ। রঞ্জিত নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউপির রাজনগর (ভুমিহীন) গ্রামের অভিনাশ সূত্রধরের ছোট ছেলে। অভিনাশ সূত্রধরের ৩ পুত্র ও ১ মেয়ের মধ্যে রঞ্জিত সবার ছোট। ঘটনার পরপরই রঞ্জিত এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। শনিবার সন্ধ্যায় সহকারী পুলিশ সুপার (নবীগঞ্জ-বাহুবল সার্কেল) মোঃ পারভেজ আলম চৌধুরী রঞ্জিতের মোবাইল ফোন ট্রাকিং করে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার ঘুমড়াকান্দা মহলায় অবস্থান করছে নিশ্চিত হন। সাথে সাথে তিনি পুলিশের ফোর্স পাঠিয়ে রঞ্জিতকে উল্লেখিত স্থান থেকে গ্রেফতার করে নবীগঞ্জ থানায় নিয়ে আসেন। পুলিশের প্রাথমিক  জিজ্ঞাসাবাদে ঘাতক রঞ্জিত ঘটনা সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। ঘাতক রঞ্জিত পুলিশকে জানায়, নিহত নীলু সুত্রধর তার সম্পর্কে ঠাকুর মা হয়। সে তার ঠাকুর মায়ের কাছে ঘটনার ১০/১২ দিন পূর্বে ২০ হাজার টাকা জমা রেখেছিল। ঘটনার দিন গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রঞ্জিত ঠাকুর মায়ের কাছ থেকে টাকা আনতে তাদের বাড়িতে যায়। সে তার ঠাকুর মায়ের কাছে টাকা চাইলে তিনি কিসের টাকা জানতে চান। তিনি রঞ্জিতের টাকার কথা অস্বীকার করলে তাদের মধ্যে বাকবিতান্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে নীলু সূত্রধরের ছোট মেয়ে রঞ্জিতের পিসি শিল্পী সূত্রধর তাকে দা দিয়ে কোপ দিতে গেলে রঞ্জিত প্রাণ রক্ষার্থে দা কেড়ে নিয়ে তাদেরকে এলোপাতাড়ি কোপ মারতে থাকে। উল্লেখ্য গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা রাতে নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের ইছবপুর গ্রামের মৃত চাঁনমণি সূত্রধরের ২য় স্ত্রী নীলু রানী সুত্রধর ও তার কন্যা শিল্পী সুত্রধরের উপর তাদের বসত ঘরে প্রবেশ করে রঞ্জিত হামলা চালায়। হামলায় ঘটনাস্থলে নীলু  সুত্রধর নিহত হন। তার মেয়ে শিল্পী  সুত্রধরকে আশংকাজনক অবস্থায় আত্মীয়রা প্রথমে ইনাতগঞ্জ বাজারের ডাক্তারের একটি প্রাইভেট চেম্বারে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। শিল্পীর শারীরিক অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাকে রাতেই সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শেষে গত শনিবার (০৬/০৪/২০১৯ইং) সন্ধ্যায় শিল্পী ঘটনাস্থল বাবার বাড়িতে আসেন। শিল্পী ঘটনার ১৫/১৬ দিন পূর্বে মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী মনোহরপুর গ্রাম থেকে মায়ের বাড়ীতে বেড়াতে আসেন। শিল্পী স্বপন সূত্রধরের স্ত্রী। এদিকে শিল্পী মায়ের হত্যাকারী রঞ্জিতকে আসামী করে নবীগঞ্জ থানায় গতকাল রোববার দুপুরে মামলা দায়ের করেন। পুলিশের সাড়শী অভিযানে হত্যাকান্ডের ৪ দিন পর ঘটনার সাথে জড়িত ঘাতককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এ ব্যাপারে নিহত নীলুর পুত্র কুয়েত প্রবাসী জীবন সূত্রধর জানান, পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রঞ্জিত আমার মায়ের কাছে টাকা রেখেছিল বলে যে জবানবন্দী দিয়েছে। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারণ প্রতি মাস শেষে আমি মাকে টাকা পাঠিয়ে দেই। তিনি এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান। সহকারী পুলিশ সুপার (নবীগঞ্জ-বহুবল সার্কেল) মোঃ পারভেজ আলম চৌধুরী জানান, আটককৃত রঞ্জিত হত্যাকান্ডের ঘটনাটি স্বীকার করে, তবে মামলার বাদী শিল্পী সূত্রধর ও রঞ্জিতের বক্তব্যের গড়মিল পাওয়া যায়। রঞ্জিতকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। রঞ্জিত স্বীকারোক্তিমূলক জবান বন্দি দিলে আগামীকাল ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্টে হাজির করা হবে। অন্যথায় কোর্টের মাধ্যমে রঞ্জিতের রিমান্ড চাওয়া হবে।


     এই বিভাগের আরো খবর