,

ইনাতগঞ্জে মসজিদের নামফলক বাণিজ্যসহ দুর্নীতির অভিযোগ

সংবাদদাতা ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের একটি মসজিদে নামফলক বাণিজ্য ও নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন ওই মসজিদের ভূমিদাতা পরিবার। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে নেই আয় ব্যয়ের কোন হিসাব। মসজিদ সুরক্ষায় ভূমিদাতা পরিবারের পক্ষ থেকে হয়েছে মামলা মোকদ্দমা। এদিকে ইনাতগঞ্জ বাজার জামে মসজিদ নাম পরিবর্তন করে স্থানীয় এক মৃত লন্ডন প্রবাসীর স্ত্রীর নামে করা হয়েছে মসজিদের নামফলক। এতে করে বিব্রত এলাকার মানুষ। নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের ইনাতগঞ্জ পশ্চিম বাজারে নির্মিত মসজিদ নিয়ে ঘটেছে এমন কান্ড। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের মুনসুরপুর গ্রামের সাংবাদিক নবীগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সহ সভাপতি আশাহিদ আলী আশার দাদা ওয়াহাব উল্লাহ তার নিজ ভুমিতে ইনাতগঞ্জ বাজার জামে মসজিদ নামে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠিা করেন। পরবর্তীতে তার পিতা ইব্রাহীম উল্লাহ মসজিদে ভূমিদাতা হিসেবে ১৯৮৯ ইং সালের ১৫ জানুয়ারী ৩৩/৮৯ নম্বর রেজিষ্টারী কবলার মাধ্যমে ইনাতগঞ্জ বাজার জামে মসজিদের নামে ওয়কাফ্ নামা প্রদান করেন। এবং ইনাতগঞ্জ জামে মসজিদ নামকরণে জায়গা হস্তান্তর করেন তৎকালীন কমিটির কাছে। পরবর্তীতে প্রায় ২ মাস পরই ১৯৮৯ সালের ১৫ মার্চ অদৃশ্য কারনে মসজিদের নাম বদল করে দেয়া হয়। ইনাতগঞ্জ জামে মসজিদ বদল করে সালেহা জামে মসজিদ নামে নামকরণ করা হয়। এতে করে মসজিদের ভূমিদাতা পরিবার ও গ্রামবাসীর মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। জনমনে বিরাজ করে নানা প্রশ্ন। শুরু হয় দ্বন্দ। এই দ্বন্দ গড়ায় ওয়াহাব উল্লাহ’র পুত্র ইব্রাহীম উল্লাহ এবং নাতি আশাহিদ আলী আশা পর্যন্ত। দীর্ঘ এতটা বছর কেটে গেলেও এই দ্বন্দের কোনো সুরাহা পাননি মসজিদের ভূমিদাতা পরিবার। বিগত ৩০ বছর ধরে মসজিদ নিয়ে অনিয়ম দুর্নীতি ও নামফলক বাণিজ্য বন্ধ ও মসজিদ সুরক্ষার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন আশাহিদ আলী আশা। সর্বশেষ ২০১৯ ইং সালে ইনাতগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বজলুর রশিদ ও ইনাগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক সামছু উদ্দিন খানের মধ্যস্থতায় নবীগঞ্জ থানার সাবেক ওসি ইকবাল হোসেন, ইনাগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ খালেদ আহমেদ পাঠান, মাসুদ আহমেদ জিহাদী, বড় ভাকৈড় ইউনিয়নের সাবেক চেয়ার‌্যান মোঃ আকতার মিয়া ছুবা, নবীগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক শাহ আবুল খায়ের, নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন মিঠুসহ এলাকার বিশিষ্ট গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতে সালিশ বিচার অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সালিশ বিচার ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি বোর্ড গঠন করে। বোর্ডের সুপারিশ গুলো লিখিত আকারে গৃহিত করা হয়। এসময় সালিশ বিচারেও আশাহিদ আলীর পরিবারকে মসজিদের ভূমিদাতা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। এই মসজিদের ভেতরে আশাহিদ আলীর আশার নামেও কিছু জায়গা রয়েছে বলে সিদ্ধান্তে বলা হয় এবং জামাল মিয়া নামে এক ব্যক্তি মসজিদে কিছু জায়গা হস্তান্তর করবেন বিনিময়ে তাকে ৪ লাখ টাকা মসজিদ কমিটির পক্ষে ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রদান করারও কথা ছিল পাশাপাশি মসজিদের ভূমিদাতা পরিবারের নাম থাকবে নামফলকে। সালিশ বিচারে ২ মাসের ভেতরে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও বছর পেরিয়ে গেলেও তা কার্যকর হয়নি। প্রশাসন ও স্থানীয় গণ্যমান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সালিশ বিচারের সিদ্ধান্ত মানছেন না বর্তমান মসজিদ কমিটি। উচ্চ পর্যায়ের সকল ব্যক্তিদের উপস্থিতি সালিশ বিচার কার্যকর না হওয়ায় সন্দেহের তীর আরোও ঘনভীত হচ্ছে। এছাড়াও মসজিদের নামফলকে দেখা গেছে ভিন্ন ভিন্ন দুটি লিখা! প্রথমটিতে লেখা সাবেক ইনাতগঞ্জ জামে মসজিদ! দ্বিতীয়টিতে লেখা রয়েছে সালেহা জামে মসজিদ! মসজিদ নিয়ে এত হযবরল অবস্থা কেন? জানতে চাইলে মসজিদ কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মসজিদ নিমার্ণের জন্য টাকা ছিল না তাই তৎকালীন লন্ডন প্রবাসী আরজান আলী টাকা দিয়েছিলেন ভবন নির্মাণ করার জন্য। এজন্য তার স্ত্রীর সালেহা বেগমের নামে মসজিদের নামফলক করা হয়েছে। তবে ভূমিদাতা পরিবারের আশাহিদ আলী আশার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এক বছর ধরে শালিষের রায় কেন কার্যকর হচ্ছে না এটা তার বোধগম্য নয়। সালিশ বিচারের সিদ্ধান্ত কেন মানা হচ্ছে না জানতে চাইলে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাজ্বী হেলিম প্রশ্নটি এড়িয়ে যান। অভিযোগ রয়েছে নামফলক দেখিয়ে লন্ডন প্রবাসী ছাহেলা বেগমের কাছ থেকে আর্থিকভাবে ফায়দা হাসিল করা হচ্ছে। ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ আহমেদ জিহাদী বলেন, মসজিদের নাম পরিবর্তন করার পেছনে একটি মহল বড় ধরনের দুর্নীতির সাথে জড়িত রয়েছে। আমরা ধারণা করছি নামফলক দেখিয়ে অর্থও হাসিল করা হচ্ছে, যা আমাদের বিব্রত করছে। আর না হয় ইনাতগঞ্জ জামে মসজিদ নামটি পরির্বতন করা হবে কেন? এ ব্যাপারে মসজিদ ভূমিদাতা পরিবারের সদস্য সাংবাদিক আশাহিদ আলী আশা বলেন, আমার দাদা ওয়াহাব উল্লাহ এবং আমার পিতা ইব্রাহীম উল্লা মহানসৃষ্টিকর্তার এবাদত বন্দেগী করার জন্য মসজিদ নির্মাণের জন্য জায়গা দিয়েছেন, মহাল আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য। ২৫ বছর যাবৎ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে হামলা, মামলার শিকার হয়েছি কিন্তু প্রতিবাদ থেকে সরে দাড়াইনি। সত্যকে জয় করতে আমার পরিবার নিঃস্ব। এই মসজিদে কোনো প্রকার অন্যায় অনিয়ম দুর্নীতি প্রতিষ্টা করা হবে তা সহ্য করা হবে না। মসজিদের নাম বিক্রি করে অর্থ বাণিজ্য, ব্যক্তির পকেট ভরা বন্ধ করা হবে ইনশাআল্লাহ। মসজিদের উন্নয়ন ও দুর্নীতিমুক্ত করতে কাজ করছি। আল্লাহ সহায় থাকলে থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে।


     এই বিভাগের আরো খবর