,

১৯৭১:মুক্তিযুদ্ধ বানিয়াচঙ্গের বদলপুর যুদ্ধের কাহিনী

(গত দিনের পর) এদিকে আজমিরীগঞ্জ থানার পিটুয়াকান্দি গ্রামের স্নাতকোত্তর আব্দুর রহমান জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের পথ প্রদর্শক হিসেবে সাথী হয়ে যায় (যিনি বর্তমানে শাল্লা শহীদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক) তার নির্দেশ অনুযায়ী নিরাপদ চিহ্নিত নৌপথ সাউধেরশ্রী গ্রামের গাছের ডোয়ার বিল হয়ে শাল্লা থানার মৌরাপুর গ্রাম, সেখানে গিয়ে দেখা যায় ভারী অস্ত্র বোঝাই নৌকারোহী যোদ্ধা কাজল, রশিদ, নিলু, আহবাব ছাড়াই নৌকার বহর মৌরাপুর হতে যাত্রাপুরের ঘুঙ্গীয়ারগাঁও নিকটবর্তী নদীতে পৌছে মুক্তারপুরের ছায়ার হাওরে প্রবেশ করে। ইতোমধ্যে আহতরা নৌকায়ই মারা যায়। সারারাতে রাস্তা অতিক্রমের সময় ৬টার দিকে খালিয়াজুরি থানার শ্যামপুরে এসে শোনা যায় এম.এম.জি’র ব্যাপক গোলা বর্ষণের আওয়াজ। ঐদিকে পাক বাহিনীও সন্ধ্যায়ই আহত ও নিহত পিটুয়ারকান্দির রণক্ষেত্র ত্যাগ করে। ঐদিকে পাকসেনারা রাতে বদলপুর থেকে অর্ধ কি:মি: দুরে অবস্থান নেয়। পাক সেনাদের ধারণা মুক্তিযোদ্ধারা দূরে এম্বুস নিয়ে রয়েছে। তাই সকালে গান বোট থেকে গোলাবর্ষণ করতে করতে গ্রামে চলে আসে। ঐদিকে রাশিদুল হাসান কাজল, আব্দুর রশীদ, আহবাব চৌধুরী, নুরুল হক নিলুসহ ভারী অস্ত্রশস্ত্র বোঝাই নৌকাটি আটকা পড়ে যায়। নৌকার চালকরা সমূহ বিপদ আঁচ করতে পেরে নৌকা চালাতে অপারগতা প্রকাশ করায় তারা রাতে হরলাল দাসের বাড়িতে রাত্রি যাপন করে। রাতে রাইফেল নিয়ে আবু লাল দাসও হরলাল দাসের বাড়িতে হাজির। আবু লাল প্রশিক্ষণের পর প্রথমবারের মত যুদ্ধে অংশ নেয়। দুপুরে সফিকুল হক চৌধুরী (টুআইসি) তাকে পিয়ারী মোহন দাসের বাড়ির গোলা ঘরের পিলারের নীচে পজিশন নিয়ে নদীর দিকে শত্র“র আগমন লক্ষ্য রাখার দায়িত্ব দেন এবং সন্ধ্যায় তিনি সহযোদ্ধা দাস পাটির্র মুক্তিযোদ্ধারা বদলপুর ত্যাগ করেছে তা টের পাননি। কারণ তিনি শ্রবণ প্রতিবন্ধী রাত ১০ টা পর্যন্ত সেখানেই ছিল। সেখান থেকে পানি পথে সাতড়িয়ে ও হেটে আড়িয়ামুগুর আসতে পেরেছে কারণ তার বাড়ি সংলগ্ন হারুনী গ্রামে। অপর দিকে দাস পার্টি শ্যামপুর থেকে সকাল ৯ টার দিকে কুড়ি বুলনপুর পৌছে বদলপুর যুদ্ধের রিপোর্ট টরেটক্কা যোগে টেকেরঘাট সাব সেক্টরে পাঠানো হয়। রিপোর্ট পাঠানো হয় ৩ জন মারা গেছে, ৪ জন গোলা বারুদসহ ভারী অস্ত্র নিয়ে নিখোজ ও ৭জন আহত। মারা যাওয়া ৩ জনের মধ্যে শুধু গোপেন্দ্র দাসের লাশ সাথে রয়েছে, জগৎজ্যোতি ও আবু লালের মৃতদেহ আনা সম্ভব হয়নি। কুড়িগাম থেকে ঐ সময়ই সুবেদার (অবঃ) দরবেশ আলী চৌধুরী তার সঙ্গীয় আমীর হোসেন মাস্টার, সৈয়দ অলিউর রহমান, বাবুল আক্তারসহ আরও ২/৩ জনকে টেকেরঘাটে পাঠিয়ে দেয়া হয়, সাথে নিহত আহতদেরও পাঠানো হয়। নবীগঞ্জ আমড়াখাই গ্রামের যুবক বদলপুর যুদ্ধে নিহত গোপেন্দ্র দাসের লাশ টেকেরঘাট সাব-সেক্টরে পৌছানোর পর সামরিক মার্যাদায় একেবারে ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ড লাগোয়া স্থানে শহীদ সিরাজুল ইসলামের সমাধির পাশে দাফন করা হয়। ঐদিকে হেড কোয়ার্টার থেকে ভারী অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধারের জন্য কঠোর নির্দেশ আসে। একই সঙ্গে কাজল, রশিদ, আহবাব ও নিলুকে পাওয়া মাত্র গুলি করে মৃত্যুদন্ড কার্যকরেরও নির্দেশ দেয়া হয়। এদিকে দাস পার্টিকে ৭ দিনের পূর্ণ বিশ্রাম নিতে দিরাই’র ভাটিপাড়া চলে যেতে হয়। ওদিকে রাশীদুল হাসান চৌধুরী ও আবু লাল দাস স্বশরীরে সকল ভারী অস্ত্রশস্ত্র সমেত ভাটীপাড়া হাইস্কুলে উপস্থিত হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। ওরা জীবনের ঝুকি নিয়ে একটি বারকী নৌকাতে অস্ত্রশস্ত্র বোঝাই করে দিরাই নদীতে টহলরত পাকবাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে চলে আসে। কাজল ও আবু লাল জেলে সেজে এবং হাতে সার্বক্ষণিক জাল রেখে নৌকাতে অবস্থান করছিল। কাজল ও আবুকে পেয়ে সহযোদ্ধারা প্রথমে কিংকর্তব্যবিমুর হয়ে পড়ে। তাদের আগমন বার্তা তাৎক্ষণিক টেকেরঘাট সাব-সেক্টর হেডকোয়াটারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। (সমাপ্ত)

বানিয়াচঙ্গ থেকে ফিরে
মোঃ রহমত আলী।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরো খবর
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.