,

সময়ের ভাবনা ঃ এটিএম নূরুল ইসলাম খেজুর আসুন দেশ ও দেশের মানুষের জন্য স্ব স্ব অবস্থান থেকে কিছু করি।

ইংরেজী একটি প্রবাদের বাংলা অর্থ হচ্ছে ‘সময় এবং নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করেনা’। দৈনিক হবিগঞ্জ সময় চলতি মাসের ১৫ তারিখ থেকে তেমনি ভাবে কারো অপেক্ষার প্রহর না গুনে প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছে, এগিয়ে চলেছে নিজস্ব গতিতে। সংবাদপত্রের এ চলার পথ বাস্তবতার নিরিখে অনেকটাই কঠিন। দৈনিক হবিগঞ্জ সময়ের প্রকাশক তরুণ সাংবাদিক স্নেহস্পদ অনুজ মোঃ সেলিম মিয়া তালুকদার জেনে শোনেই ওই কঠিন থেকে কঠিনতম কাজে হাত দিয়েছেন এ জন্য তার দুঃসাহসিকতাকে সাধুবাদ জানাই। এখানে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের যৌবনের গান প্রবন্ধ বা ভাষন থেকে একটি লাইন উল্লেখ না করে লোভ সংবরন করতে পরছিনা। কবি বলেছেন ‘বহু যুবককে দেখিয়াছি-যাহাদের উর্দির নিচে বার্ধক্যের কঙ্কতাল মূর্তি। আবার বহু বৃদ্ধকে দেখিয়াছি-যাহাদের বার্ধক্যের জীর্ণাবরণের তলে মেঘ-লুপ্ত সূর্যের মতো প্রতীপ্ত যৌবন। তরুণ নামের জয়-মুকুট শুধু তাহারই-যাহার শক্তি অপরিমান, গতিবেগ ভজ্রোর ন্যায়, তেজ নির্মেঘ আষাঢ় মধ্যাহ্নের মার্তগুপ্রায়, অটল যাহার সাধনা, মৃত্যু যাহার মুঠিতলে’। কবি তারুণ্যকে প্রাধান্য দিয়েই উপরোক্ত কথা গুলো বলেছেন। তরুণ এবং সঠিক সময়ে দৈনিক হবিগঞ্জ সময়-এর প্রকাশক যে গুরু দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন তার এ দুরহ ও কঠিন দায়িত্বকে কবি নজরুলের ভাষায় ‘তরুণ অরুণের মতোই যে তারুণ্য-তিমির বিদারী, সেযে আলোর দেবতা। রঙ্গের খেলা খেলিতে তাহার উদয়, রঙ্গ ছড়াইতে ছড়াইতে তাহার অস্ত। যৌবন-সূর্য যেথায় অস্তমিত, দুঃখের তিমির-কুন্তলা নিশীথিনীর সেইতো লিলাভূমি’। প্রতিদিন মন চায় একটি করে কলাম লিখি। আর কলাম লিখা আমার নেশা। একসময় বেশ কয়েকটি জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক এবং সাপ্তাহিকে লিখছি সমসাময়িক বিষয়ের নানা কলাম। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে ব্যক্তিগত নানা ঝামেলা ও ব্যস্ততার কারনে ইচ্ছেটা পূরন করতে না পারার ব্যর্থতা স্বীকার করেই আজ লিখতে বসছি। অনুজ প্রকাশককে বলেছিলাম পত্রিকার যে সুন্দর নাম হয়েছে সেই ‘সময়’ (যদিও পূর্ণ নাম দৈনিক হবিগঞ্জ সময়)-এর উপর ভিত্তি করেই অনেক লিখা সম্ভব। পত্রিকার গেটআপ-মেক-আপ এবং ছাঁপা এবং সংবাদের উপস্থাপনা দেখছি পরখ করে। নবীন ওই প্রকাশক নিজেই পত্রিকাটির বার্তা সম্পাদক। কিন্তু প্রত্যহ পত্রিকাটি দেখলে মনে হয়না কোন নয়া বার্তা সম্পাদক পত্রিকাটি সাজিয়ে দিচ্ছেন। এমনটি ধরে রাখতে পারলে পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যায় আমার লেখার যে প্রত্যাশা তা পূরন করে দৈনিক হবিগঞ্জ সময় পাঠকমন জয় করার আমার যে আকাড়খা তা পূরন হবে এটাই সঠিক। কথা সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর পঞ্চতন্ত্র উপন্যাসের বইকেনা গল্পে তিনি বাঙ্গালীর বই কেনার প্রতি অনীহার বাস্তু রুপ তুলে ধরেছিলেন। এক শহরবাসিনী রমনী যিনি সর্বদা শহরের বিভিন্ন আড্ডায় রাতেও অংশ নিতেন তার স্বামীর জন্মদিনে তিনি উপহার কিনতে গিয়ে দোকানের পর দোকান ঘুরে একটি উপহারও যখন পছন্দ করতে পারছিলেননা তখন এক দোকানী একটি বই দেখিয়ে সেটি নেয়ার অনুরোধ করেন।  কিন্তু শহরবাসিনী ওই রমনী গর্বের সাথে বলেছিলেন এমন একটি বই নাকি তার সংগ্রহে আছে। লেখক আক্ষেপ করে বিষয়টি উপস্থাপন করেছিলেন যে একটি বই সংগ্রহ আছে বিধায় ওই মহিলা আর দ্বিতীয় বই কেনায় আগ্রহী ছিলেননা। লেখক তাঁর লেখায় আরো অনেক প্রাসঙ্গিক বিষয় উল্লেখ করেছেন সবিস্তারে। উল্লেখিত বইকেনা গল্পের অবতারনা করার কারন হলো এ যুগেও বই তেমন কেনেননা অনেকেই। তবে আমি সাধারণতঃ কোন বিয়ে কিংবা সামাজিক আচারানুষ্ঠানে গেলে বই উপহার দেয়ার চেষ্ঠা করি। এতে অনেকে নানা সমালোচনা করে তা আমি কর্ণে প্রবেশ করিনা। অর্থাৎ শোনেও না শোনার ভান করি। যে কথা বলার জন্য বইকেনা গল্পের অবতারনা তা হচ্ছে এ যুগে বই তেমন একটা না কিনলেও পাঠক নিয়মিত পত্রিকা কিনেন। সংবাদপত্র ও বই-এর মাঝে যোগসূত্র আছে। যে পাঠক পত্রিকা কিনেন ওই পাঠক একদিন বইও কিনতে লাইব্রেরীতে যান এমন অনেক উদাহরণ আছে। লেখা শুরু করেছিলাম সময় নিয়ে। সময় নিঠুর-নিষ্ঠুর ও নির্মম। বহতা নদীর মতো সময় পেরিয়ে যাচ্ছে আমাদের জীবন থেকে। সময় পেরিয়ে গেলেও রেখে যাচ্ছে অনেক সুখ-দুঃখের মধুর ও নিঠুর স্মৃতি। যে স্মৃতি রোমন্তন করে আমরা অতীতে ফিরে যাই। কখনো অসীম তৃপ্তি-সুখ কিংবা কখনো নির্মম অতীতের কঠিন বাস্তবতায় কেঁদে বুক ভাসাই। সময়ের বিবর্তনে যুগে যুগে দেশে-দেশে অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে। তবে সব কিছুরই স্মৃতি বা ইতিহাস লিপিবদ্ধ আছে এবং থাকবে। ইতিহাস ধ্বংস হয়না। আমাদের ভারত বর্ষে মোগল-পাঠান ও ব্রিটিশরা এলো। শাসন-শোষন করলো তারা। এক সময় চলে যেতে বাধ্য হলো। এক সময় ভারত ভাগ হয়ে আমারা পাকিস্তানের আওতায় চলে গেলাম। বাকস্বাধীনতার কোন সুযোগ দেয়নি পাকিস্তানীরা আমাদেরকে। সেই সাথে তাদের অনাচার-অত্যাচার আর নিঠুর শাসন-শোষন বাধ্য করলো ভাষা আন্দোলনে ঝাপিয়ে পরতে এ দেশের মানুষকে। মূলতঃ ভাষা আন্দোলন থেকেই আমাদের স্বাধীকার আন্দোলন যা পরবর্তীতে স্বাধীনতা আন্দোলনে রুপ নেয় এবং দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর অনেক কিছু হারিয়ে আমরা সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন হই। ওই সংগ্রামের স্মৃতি সুখের নয়, নয় ভুলার। সময় নিয়ে লিখতে গেলে এমন অনেক স্মৃতিই আমাদের মাঝে উঁকি দিবে এটাই স্বাভাবিক। কারন স্মৃতি কখনো হারিয়ে যায়না-হারায়না। সময়ের সঠিক মূল্যায়ন করে আমরা স্ব স্ব অবস্থান থেকে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কিছু করে যেতে পারলে সময়ের দূরবীন তা ধরে রেখে একদিন আপন কর্মের মূল্যায়ন করবে এটাই স্বাভাবিক এবং ইতিহাস।
লেখক ঃ দৈনিক খবর, যুগভেরী, প্রতিদিনের বাণী’র নবীগঞ্জ প্রতিনিধি
ও সভাপতি নবীগঞ্জ প্রেসক্লাব। ১৯-১০-২০১৪ খ্রিঃ


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরো খবর
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.