,

৭৫ লাখ টাকার ব্রিফকেস লুটের ঘটনায় তদন্তে ডিবি পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নবীগঞ্জে ৭৫ লক্ষ টাকা সহ ব্রিফকেস লুটের ঘটনা উদঘাটনে তদন্তে নেমেছে ডিবি পুলিশ। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা রাতে হবিগঞ্জ ডিবি পুলিশের তদনন্ত দল সরেজমিনে ঘটনাস্থল নবীগঞ্জ উপজেলার বাউশা গ্রামে গেলে শত শত লোকজন এই ব্রিফকেস লুটের  ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে স্বাক্ষ্য প্রদান করেন। জানা যায়, নবীগঞ্জের বাউশা ইউনিয়নের গহরপুর গ্রামের রেজ্জাক মিয়ার বাড়ী থেকে ব্রিফকেস ভর্তি ৭৫ লক্ষ টাকা লুটের ঘটনায় নবীগঞ্জ প্রসাশনের নীরব ভূমিকা পালন করলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গতকাল সন্ধায় হবিগঞ্জ ডিবি পুলিশের ওসি মোক্তাদির হোসেন এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে স্বাক্ষ্য গ্রহন করেন। শাহীনের শশুর আব্দুর রেজ্জাক ডিবি পুলিশকে জানান, তার মেয়ে জামাই শাহিন গত প্রায় এক মাস পূর্বে বুল্লা এলাকার একটি চা স্টলের কেবিনে নাস্তা করার জন্য প্রবেশ করলে দেখে চেয়ারে একটি ব্রিফকেস পড়ে রয়েছে। সে নাস্তা শেষ করে ঐ ব্রিফকেসটি হাতে করে নিয়ে চলে যায় হবিগঞ্জ শহরে তার বোনের বাসায়। খুলে দেখতে পায় শুধু টাকা আর টাকা। গুনে দেখে এতে ৭৫ লাখ টাকা আছে। এখান থেকে ১লক্ষ টাকা সে খরচ করে ফেলে। তার বোন কিছু টাকার কথা বললে শাহীন তার বোনকে টাকা দিবে বলে আশ্বাসও দেয়। কিন্ত কি করবে কোন দিক নির্দেশনা পাচ্ছিল না। ব্রিফকেস ভর্তি ৭৪ লাখ টাকা নিয়ে রাতে সিএনজি যোগে আমার বাড়িতে আসে। পরে আমার বসত ঘরের চৌকির নীচে গর্ত করে ওই ব্রিফকেস মাটির নীচে পূতে রেখেছিল। এ ঘটনাটি দেখে লোভ আসে সিএনজি চালক বদরের। কারন তার সিএনজিতে রাতে ব্রিফকেস নিয়ে আমার বাড়ি এসেছিল। সিএনজি চালক বদরের বাড়ি আমাদের গ্রামের মধ্যে এবং শাহিনের স্বমন্ধি  রব্বানের বন্ধু বটে। ব্রিফকেসে টাকা রয়েছে তা বুঝতে পেরে সিএনজি চালক বদর শাহীনের কাছে সিএনজি ক্রয় করার জন্য ৫ লাখ টাকা দাবী করে। এসময় শাহীন পরে টাকা দিবে বলে বদরকে আশ্বাস দেয়। বিষয়টি বদর মিয়া বিশ্বাস না করে শাহীনের মামা শ্বশুর গহরপুর গ্রামের আলাল মিয়া, জয়নাল মিয়া ও পূর্ব তিমির পুর গ্রামের মৃত তালেব আলীর পুত্র মালিক মিয়ার সাথে আলাপ করে। বদর ও আলাল মিয়া আরো কয়েকজনকে নিয়ে গত ১৪ অক্টোবর মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে দিয়ে জোর পূর্বক মাটির নীচ থেকে তুলে নিয়ে গেছে টাকা ভর্তি ব্রিফকেস। শাহিন মাটির নীচে পুঁতে রেখেও রক্ষা করতে পারল না স্বপ্নের ব্রিফকেস। পরে টাকাগুলো ভাগবাটোয়ারা হয়। নবীগঞ্জের স্থানীয় কিছু ক্ষমতাধর ব্যক্তিও ওই ৭৫ লক্ষ টাকার ভাগ পেয়েছেন বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, যে প্রায় ১৭ দিন পূর্বে শাহীন টাকার ব্যাগ নিয়ে একটি সিএনজিযোগে নবীগঞ্জের গহরপুর গ্রামে শ্বশুর বাড়ি আসে। এ ব্যাপারে পাশ্ববর্তী মাইজগাঁও গ্রামের জনৈক ব্যক্তি বলেন, ওই ঘটনার পরদিন আমি বিষয়টি শোনে সিএনজি চালক বদরের সাথে কথা বলেছি। সে আমাকে বলে শাহীনের স্বমন্ধি রব্বান কে নিয়ে হোটেল সোনালীতে যেতে। আমরা সেখানে গেলে বদর, মালিক, আলাল গংরা হাজির হয়ে বলে রাতে যে ব্রিফকেস রব্বানের বাড়ি থেকে এনেছি সেটার মধ্যে কোন টাকা ছিল না। এর পর থেকে বদর আর মালিক আমার সাথে আর কোন যোগাযোগ করেনি। গহরপুর গ্রামের শাহিনের শশুর আব্দুর রাজ্জাক, গ্রামের মুরুব্বি সুইল মিয়া, নুর মিয়া ও জমসেদ মিয়া ডিবি পুলিশ ও সাংবাদিকদের কাছে বলেন সন্ধ্যার সময় ৭/৮ জন লোক এসে আমাদের বাড়িতে রেজ্জাক মিয়ার ঘরে প্রবেশ করে তন্ন তন্ন করে খুঁজে চৌকির নীচ থেকে মাটি কুড়ে চকলেট রংয়ের ব্রিফকেস তুলে নিয়ে যায়। আমরা এসময় বাধাঁ দিলে তারা বলে আমাদের সাথে পুলিশ আছে বাড়াবাড়ি করবে না ধারালো অস্ত্র নিয়ে আসছি মেরে ফেলবো। এদের মধ্যে আলাল, বদর, জয়নাল, মালিককে চিনতে পারি বাকিরা কে চিনি না। এদিকে শাহীনের শ্বশুর আব্দুর রেজ্জাক বাদী হয়ে গত ২০ অক্টোবর সোমবার সকালে নবীগঞ্জ থানায় এ ব্যাপারে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এস.আই আব্দুর রহিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। গতকালও তদন্ত দলের সাথে ছিলেন এস.আই আব্দুর রহিম। ডিবি পুলিশের ওসি মোক্তাদির হোসেন বলেন, আমরা তদন্ত করে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছি। যাদের নাম তদন্তে এসেছে তাদেরকে গ্রেফতার করলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। জড়িতদের গ্রেফতারের তৎপরতা চলছে। এর সাথে যত বড় রাঘব বোয়ালই জড়িত হোক না কেন তদন্তে সত্যতা প্রমান পেলে অবশ্যই তাকে গ্রেফতার করবো। তবে এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের সার্বিক সহযোগীতা চান তিনি।


     এই বিভাগের আরো খবর