,

হবিগঞ্জে কিবরিয়া হত্যা মামলায় মেয়র জি.কে গউছ কারাগারে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে ওসিসহ আহত ২০

জুয়েল চৌধুরী ॥ সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ.এম.এস কিবরিয়া হত্যা মামলার চার্জশীটভূক্ত আসামী হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র আলহাজ্ব জি.কে গউছকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল রোববার বেলা সাড়ে এগারটায় জি.কে গউছ হবিগঞ্জের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রোকেয়া (২য় পৃষ্ঠায় দেখুন) আক্তার এর আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করেন। দীর্ঘ ৫৫ মিনিট শুনানী শেষে বিজ্ঞ বিচারক আসামী জি.কে গউছের জামিন আবেদন না-মঞ্জুর করেন। আদালতে বাদীপক্ষে সরকারী কৌসুলী (পিপি) এম আকবর হোসেন জিতু, চৌধুরী আবু বকর সিদ্দিকী, নিলাদ্রী শেখর পুর কায়স্থ টিটো, এবং বিবাদী পক্ষে আরিফ চৌধুরী, খালেকুজ্জামান চৌধুরী, আলহাজ্ব সালেহ আহমেদ, সামসু মিয়া চৌধুরী, মঞ্জুর উদ্দিন আহমেদ শাহীন, কামাল উদ্দিন আহমেদ সেলিম ও এম.এ মজিদসহ উভয়পক্ষে শতাধিক আইনজীবী মামলা পরিচালনায় অংশ নেন। মেয়র আলহাজ্ব জি.কে গউছকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ওসিসহ বিএনপি’ অন্তত ২০ নেতাকর্মী আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ যুবদল ও ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের ৩০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। আহতদের মধ্যে হবিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিনকে প্রথমে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল পরে ঢাকা রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে তার অবস্থা আশংকাজনক বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন। গতকাল রবিবার বেলা একটায় হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ.এম.এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় চার্জশীটভূক্ত আসামী হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক, পৌর মেয়র আলহাজ্ব জি.কে গউছ রবিবার দুপুরে হবিগঞ্জের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রোকেয়া আক্তার এর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করেন। দীর্ঘ ৫৫ মিনিট শুনানী শেষে বিজ্ঞ বিচারক আসামী জি.কে গউছের জামিন আবেদন না-মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর প্রতিবাদে বিএনপির অঙ্গ সংগঠন যুবদল, ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা কোর্টপ্রাঙ্গণ থেকে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। পরে এ মিছিল থেকে কিছু দুর্বৃত্তরা শহরের সার্কিট হাউজ রোড এলাকার গণপূর্ত ভবন, জেলা পরিষদ রেস্ট হাউজ, ৮টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা (টমটম) এবং একটি মাইক্রোবাস ও একটি কার ভাংচুর করে। এ সময় পুলিশের সাথে মিছিলকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। দোকানপাঠ বন্ধ করে মানুষ দিকবিদিক ছুটাছুটি শুরু করে। পুলিশ শতাধিক রাউন্ড টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট নিপে করে প্রায় ১ ঘন্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। পরে এ সংঘর্ষ শহরের ফায়ার সার্ভিস ও শায়েস্তানগর এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে সদর থানার ওসি নাজিম উদ্দিন (৪০)সহ ২০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। দুপুর থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত পুলিশ শায়েস্তানগর, মাহমুদাবাদসহ বিভিন্নস্থানে সাড়াশি অভিযান চালিয়ে ৩০ জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে। এদের মধ্যে জেলা যুবদলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শারফিন চৌধুরী রিয়াজ, গুলিবিদ্ধ শাহরিয়া, রাসেল, তানভীর, আলীম, পলাশ ও মৃদুল এবং মাসুদ চৌধুরী রয়েছেন। এব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহিদুল ইসলাম জানান, আটকের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ পর্যন্ত ৩০ জন আটক করা হয়েছে। তবে যাচাই বাচাই করে জড়িত না থাকলে ছেড়ে দেয়া হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে। ইতোপূর্বে ২১ ডিসেম্বর কিবরিয়া হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মেহেরুননেছা পারুল হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চতুর্থ দফার সম্পুরক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবং হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক ও হবিগঞ্জ পৌর মেয়র আলহাজ্ব জি.কে গউছসহ ৩৫ জনকে আসামী করা হয়। ওই দিন আদালত হারিছ চৌধুরী, আরিফুল হক চৌধুরী এবং আলহাজ্ব জি.কে গউছসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারী করেন। প্রসঙ্গত, ২০০৫ ইংরেজী সনের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে এক জনসভা শেষে শহরে ফেরার পথে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ.এম.এস কিবরিয়াসহ ৫ জন।


     এই বিভাগের আরো খবর