,

স্ত্রী লাভলীর নিকট হস্তান্তরের ৬ ঘন্টা পর নবীগঞ্জের ইউপি চেয়ারম্যানের শিশু পুত্র তাননুর ইসলামের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টর ॥ আদালতের নির্দেশে দু’শিশু সন্তানকে পুলিশের মাধ্যমে স্ত্রীর নিকট সমজিয়ে দেয়ার প্রায় ৬ ঘন্টা পর ৯ মাসের শিশু পুত্র সীমান্ত ইসলাম ওরফে তাননুর ইসলাম মারা গেছে। জানা যায়, চুরির অভিযোগ এনে নবীগঞ্জ উপজেলার কালিয়ারভাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম তার দ্বিতীয় স্ত্রী লাভলী বেগমকে আসামী করে মামলা দায়ের করলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পরে গত বুধবার লাভলী বেগম জামিনে মুক্তি লাভ করেন। এদিকে লাভলী বেগমকে পুলিশ গ্রেফতারের পর তার দু’সন্তান ২ বছরের শিশু কন্যা তানহা ইসলাম ও ৯ মাসের শিশু পুত্র সীমান্ত ইসলাম ওরফে তাননুর ইসলাম তাদের পিতা ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের নিকট থাকে। গত ১৪ জানুয়ারী লাভলী বেগম জামিনে মুক্তি পাবার পর গত ১৫ জানুয়ারী আদালতে দায়েরকৃত একটি মামলা তার দু’সন্তানকে স্বামী ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম হত্যা করতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করে তাদের উদ্ধারের আবেদন জানান। এর প্রেক্ষিতে আদালত দু’শিশুকে উদ্ধার করে লাভলী বেগম এর জিম্মায় দেয়ার জন্য নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ প্রদান করেন। আদেশের প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত প্রায় ৮ টার দিকে নবীগঞ্জ থানার এসআই করিম সঙ্গীয় পুলিশ নিয়ে চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের বাড়ি থেকে দু’শিশু তানহা ইসলাম ও সীমান্ত ইসলাম ওরফে তাননুর ইসলামকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। এ সময় চেয়ারম্যান নজরুল থানায় উপস্থিত হয়ে পুলিশকে জানান, লাভলী তার পিতা ও ভাইদের মাধ্যমে তার সন্তানদের ক্ষতি হতে পারে। এ অবস্থায় চেয়ারম্যান নজরুল রাত ১০টার দিকে লাভলী বেগম, তার বাবা লেদু মিয়া, ভাই শেকুল ইসলাম ও শোয়েব ইসলামের মাধ্যমে তার সন্তানদের ক্ষতি হতে পারে উল্লেখ করে থানায় একটি জিডি করেন। রাত প্রায় ১২ টার দিকে পুলিশ তানহা ও তাননুরকে লাভলী বেগমের নিকট হস্তান্তর করেন। এদিকে রাতে শিশু তাননুর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সিলেট মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। গতকাল শুক্রবার সকালে শিশু তাননুর মারা যায়। এ ব্যাপারে কলিয়ারভাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমার বাড়িতে পুলিশ আসলে তাদের নিকট আসার কারণ জানতে চাই। তারা জানান, আদালতের নির্দেশে শিশু তানহা ও তাননুরকে উদ্ধার করতে এসেছি। এ সময় আমি আমার আদরের শিশুদের নিয়ে পুলিশের সাথে থানায় যাই। আমি থানায় একটি জিডিও করি। এ অবস্থায় পুলিশ আমার উপস্থিতিতেই আমার প্রিয় দু’সন্তানকে লাভলী, তার পিতা ও ভাইয়ের নিকট সমজিয়ে দেয়া হয়। তিনি জানান, আমি লোক মুখে জানতে পারি আমার আদরের ছেলে মারা গেছে। তিনি দাবী করেন, লাভলী তার বাবা ও ভাইদের পরামর্শে তার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। এর পর আমার ছেলের লাশ তারা কি করেছে তাও আমি জানি না। উল্লেখ্য, চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম যখন ৯ মাসের শিশু তাননুল ইসলামকে তার মা লাভলী বেগমের নিকট হস্তান্তর করছিলেন তখন তাদের শিশুপুত্র তাননুর প্রচন্ড জ্বরে কাতরাচ্ছিল। রাতেই শিশু দুইটি গ্রহনের পর নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান লাভলী ও তার স্বজনরা। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান শিশু তাননুল ইসলাম নিউমুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অথবা হবিগঞ্জ সদর অধুনিক হাসপাতালে প্রেরণের নির্দেশ দেন। ওই রাতেই তাননুর ইসলামকে সিলেট ওসমানী মেডিকেলে নিয়ে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশু তাননুর ইসলাম গত শুক্রবার ভোর রাতে মারা যায়। বিষয়টি নবীগঞ্জ থানা পুলিশকে মৌখিকভাবে অবহিত করে গতকাল বিকেলে শিশু তাননুল ইসলামের দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। শিশু তাননুল ইসলামের অকাল মৃত্যু নিয়ে নবীগঞ্জের সর্বত্র নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে।


     এই বিভাগের আরো খবর