,

আমার স্বামী জি.কে গউছের মেয়র হওয়াটাই কি অপরাধ?..আলহাজ্ব ফারজানা গউছ হেপী

প্রেস বিজ্ঞপ্তি ॥ ২০০৪ সালে সম্মানীত হবিগঞ্জ পৌরবাসীর ভোটে আমার স্বামী আলহাজ্ব জি.কে গউছ অবহেলিত হবিগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আপনাদের সকলের পরামর্শে হবিগঞ্জ পৌরসভাকে একটি মডেল পৌরসভায় রূপান্তরের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে হবিগঞ্জের পরিত্যাক্ত রেল টেকের উপর বাইপাস সড়ক নির্মাণ, নতুন বাস টার্মিনাল নির্মাণ, খোয়াই নদীর হবিগঞ্জ-বানিয়াচং রাস্তার উপর জেনারেল এম.এ রব ব্রীজ, হবিগঞ্জ-নবীগঞ্জ রাস্তায় শাহ এএমএস কিবরিয়া ব্রীজ, হবিগঞ্জ-পইল রাস্তায় এম সাইফুর রহমান ব্রীজ নির্মাণ, শহরের প্রধান সড়কে রোড ডিভাইডার স্থাপন ও শহরের বেবীস্ট্যান্ড এলাকায় পানির ২য় ট্রিটম্যান্ট প্লান স্থাপন সহ শহরে অসংখ্য ড্রেইন ও রাস্তা নির্মাণ করেন। ফলে হবিগঞ্জ পৌরবাসী এখন উন্নত নাগরিক সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। এই সুযোগ সুবিধা আরও বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ইউজিআইআইপি-১ প্রকল্পে হবিগঞ্জ পৌরসভা অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল এবং উল্লেখ করার মত রাস্তা ও ড্রেইন নির্মাণ করা হচ্ছিল। ঠিক সেই সময় ১/১১ তত্বাবধায়ক সরকার সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে আপনাদের ভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যান আমার স্বামী জি কে গউছকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে যন্ত্রনা দেয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক রাখা হয়। এমনকি কুমিল্লা কারাগারে ফাঁসির আসামীর জন্য নির্মিত সেলে আমার স্বামীকে দীর্ঘ ৮ মাস তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। শুধু তাই নয়, বালু মিশ্রিত ভাত খাবারের জন্য দেয়া হতো আমার স্বামীকে। এই পরিস্থিতিতে আমার স্বামী প্রায় মৃত্যু পথযাত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে আইনী পক্রিয়ায় মুক্ত হয়ে তিনি আমাদের সকলের মধ্যে ফিরে আসেন। এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক, মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করার পর মহামান্য হাইকোর্ট থেকে ২ বার জামিন হওয়ার পরও তাকে প্রতিবারই জেল গেইটে আটক করা হয়েছিল। দীর্ঘ সাড়ে ১৯ মাস সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে দেশের বিভিন্ন কারাগারে তাকে আটকে রাখা হয়েছিল। জামিনে মুক্ত হওয়ার পর দীর্ঘ সময়ে বিচারের মধ্য দিয়ে সবগুলো মামলার দায় থেকে আমার স্বামী আইনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই অব্যাহতি পান। মিথ্যা অভিযোগে আমার স্বামীকে হবিগঞ্জ কারাগার, কুমিল্লা কারাগার ও ঢাকা কারাগারসহ বিভিন্ন কারাগারে সাড়ে ১৯ মাস বন্দী করে রাখাকালে বিভিন্ন প্রকল্প থেকে প্রায় ২১ কোটি টাকা ফেরত গিয়েছিল। যা বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। এতে হবিগঞ্জ পৌরসভার অপুরণীয় ক্ষতি হয়েছিল। হবিগঞ্জবাসী বিশ্বাস করেন- যদি আলহাজ্ব জি কে গউছকে সাড়ে ১৯ মাস কারাগারে আটকে রাখা না হতো তাহলে ২১ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হবিগঞ্জ শহরেই হতো এবং তাতে হবিগঞ্জ শহরের চেহারার আমূল পরিবর্তন ঘটতো। ২০১১ সালে ১৮ জানুয়ারী হবিগঞ্জ পৌরসভার প্রথম মেয়র নির্বাচনে চরম প্রতিকুলতায় মধ্যেও আপনারা দয়া করে হাজার হাজার ভোটের ব্যাবধানে কোন কিছুর বিনিময় ছাড়াই আমার স্বামীকে মেয়র নির্বাচিত করে আমাদেরকে কৃতজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ করেছেন। আমরা এই ঋণ জীবনে কোন দিন শোধ করতে পারব না। ২য় বার হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই আমার স্বামী এই সম্মানীত পৌরবাসীর নাগরিক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি কল্পে দীর্ঘ ৩ বছর অকান্ত পরিশ্রম করে বিশ্ব ব্যাংক এর ইউজিআইআইপি-৩ প্রকল্পের প্রায় ১শ কোটি টাকা বরাদ্ধ নিয়ে আসেন। যা চলতি অর্থ বছর থেকেই প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজে সেই টাকা ব্যয় করার কথা। কিন্তু দুঃখের বিষয় ২০০৫ সালে আমার শশুর মরহুম আলহাজ্ব গোলাম মর্তুজা (লাল মিয়া) সাহেবের সাথে আমার স্বামী জি কে গউছ পবিত্র হজ্বব্রত পালন করার জন্য পবিত্র মক্কা শরীফে অবস্থান করছিলেন। সেই সময় আমাদের সকলের অহংকার ও হবিগঞ্জের গর্ব সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া সাহেব আততায়ীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। যা আমাদের জন্য কলঙ্কের। দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর পর হবিগঞ্জ পৌরসভায় যখন উন্নয়নের জোয়ার সৃষ্টি হয়, ঠিক সেই সময় সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমুলকভাবে কিবরিয়া হত্যা মামলার ৩য় সম্পুরক চার্জশীটে আমার স্বামীকে আসামী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আদালত কর্তৃক চার্জশীট গৃহিত হওয়ার পরই কোন ধরনের দ্বিধা না করে ন্যায় বিচারের স্বার্থে স্বেচ্ছায় আদালতে আত্মসমর্পন করেছেন আপনাদের মূল্যবান ভোটে নির্বাচিত হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব জি কে গউছ। আদালতে আত্মসমর্পন করার পর থেকেই প্রায় দেড় মাস হবিগঞ্জ কারাগারে বন্ধি ছিলেন তিনি। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, আমাদের পরিবারের কোন সদস্যকে না জানিয়ে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিরাজমান অবস্থায় পার্শ্ববর্তি মৌলভী বাজার কারাগারে আলহাজ্ব জি কে গউছকে স্থানান্তরিত করা হয়। আবার আমাদেরকে কোন ধরনের সংবাদ না জানিয়ে গত ১৭ ফেব্র“য়ারী হবিগঞ্জ কারাগারে তাকে নিয়ে আসা হয়। পরদিন ১৮ ফেব্র“য়ারী হবিগঞ্জ থেকে আবারও আলহাজ্ব জি.কে গউছকে মৌলভীবাজার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যা মামলার আইনী কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে হবিগঞ্জ কোর্টে, কিবরিয়া হত্যা মামলার বিচার কাজ সম্পন্ন হবে সিলেটের দ্রুত বিচার নিষ্পত্তি আদালতে। কিবরিয়া হত্যা মামলার ক্ষেত্রে মৌলভীবাজার কোনো অংশ হতে পারে না। এখানেই প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে আলহাজ্ব জি কে গউছকে কেন মৌলভীবাজার কারাগারে স্থানান্তর করা হবে? আমার স্বামী বেশ কিছু দিন যাবত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। তার বুকের ব্যথা মারাত্বক আকার ধারণ করেছে, প্রেসার কোনোভাবেই স্বাভাবিক রাখা যাচ্ছে না। হঠাৎ প্রেসার বেড়ে যায় তো কিছুক্ষণ পর তার অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই নির্জন কারাগারে আমার স্বামীর জীবন মারাত্বক হুমকির সম্মুখিন। দেশের এই রাজনৈতিক অস্থিরতায় আলহাজ্ব জি কে গউছকে এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে স্থানান্তর তার জীবন আরও হুমকির সম্মুখিন হয়েছে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, কিবরিয়া হত্যা মামলার একাধিক আসামী হবিগঞ্জ কারাগারে বন্ধি অবস্থায় আছেন। যাদের কারও কারও বিরুদ্ধে কিবরিয়া হত্যা মামলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় একাধিক মামলা রয়েছে। অথচ অন্য কোন আসামীকে দেশের অন্য কোন কারাগারে স্থানান্তর করা হচ্ছে না। আমার স্বামী আপনাদের ভোটে নির্বাচিত মেয়র জি কে গউছকে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রনা প্রদানের জন্যই এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে স্থানান্তর করা হচ্ছে। এতেই প্রমানীত হয় আমার স্বামী গভীর ষড়যন্ত্র ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। আমার স্বামী আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আদালতে আত্মসমর্পন করেছেন। আমি ও আমার পরিবার সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের প্রতি জোড় হাত করে অনুরোধ করছি- আপনাদের কোন ভূল সিদ্ধান্তের কারনে আমার স্বামীর জীবন যেন বিপন্ন না হয়। সরকার যদি আদালতে প্রভাব বিস্তার না করে তাহলে অতীতের ন্যায় কিবরিয়া হত্যা মামলা থেকেও আলহাজ্ব জি কে গউছ নির্দোষ প্রমাণীত হয়ে হবিগঞ্জ পৌরবাসীর কাছে ফিরে আসবেন ইনশাআল্লাহ। সম্মানীত পৌরবাসী, দলমত ও ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আপনারা যেভাবে আমার স্বামীকে ভোট দিয়েছেন, তার জন্য দোয়া করেছেন, সহযোগীতা করেছেন আমরা আপনাদের কাছে আম”ত্যু ঋনি। আপনারাই আমাদের অভিভাবক। তাই অতীতে আপনারা আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছেন, বর্তমানেও আমাদের দুর্দিনে আপনারা আমাদের জন্য দোয়া ও সহযোগীতা করবেন বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। হাত জোড় করে আপনাদের কাছে এই মিনতিই করছি।


     এই বিভাগের আরো খবর