,

জাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে জীবন গেল ২৫ জনের

সময় ডেস্ক ॥ ময়মনসিংহে জাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে নারী ও শিশুসহ ২৫ জন নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। এ ঘটনায় সাতজনকে আটক করা হয়েছে। গঠিত হয়েছে তদন্ত কমিটি। পৌর এলাকার নূরানী জর্দা ফ্যাক্টরির মালিকের বাসায় শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম দ্য রিপোর্টকে জানান, এ ঘটনায় সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফ্যাক্টরির মালিক শামিম তালুকদারসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে এ পর্যন্ত ১২ জনের লাশ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান ওসি। নিহতরা হলেন- শহরের পাটগুদাম বিহারী ক্যাম্পের সিরাজুলের ছেলে সিদ্দিক (১২), কৃষ্ণা মিয়ার স্ত্রী সখিনা (৪০) ও তার ছেলে লাল মিয়া (০৫), মৃত বারেকের স্ত্রী সামু বেগম (৬০), লালু মিয়ার স্ত্রী হাজেরা খাতুন (৭০), শহরের ধোপাখলা এলাকার গবিন্দ বসাকের স্ত্রী মেঘলা বসাক (৫৫), নারায়ন চন্দ্র সরকারের স্ত্রী সুধা রানী সরকার (৫৫), মৃত বজেন্দ্রর স্ত্রী রিনা (৬০), মৃত সুলতান মিয়ার স্ত্রী জামেনা বেওয়া (৬৫), চরপাড়া এলাকার হায়দার আলীর স্ত্রী হাসিদা বেগম (৫৫), আকুয়া দক্ষিণ পাড়ার জালালের স্ত্রী নাজমা বেগম (৫০), সালামের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৫৫), রবি হোসেনের স্ত্রী ফাতেমা আক্তার (৫২), কাঠগোলা বাজারের আব্দুল মজিদের স্ত্রী রেজিয়া আক্তার (৫৫), কাঁচারীঘাট এলাকার মাহাতাব উদ্দিনের স্ত্রী ফজিলা বেগম (৭৫), থানাঘাট এলাকার আব্দুস সালেকের স্ত্রী খোদেজা বেগম (৫০), চর ঈশ্বরদিয়ার লাল মিয়ার স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৬০), তারাকান্দা থানার বালিডাঙ্গা গ্রামের মোসলেম মিয়ার স্ত্রী মরিয়ম (৫০)। বাকিদের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও জাকাতের কাপড় বিতরণের উদ্যোগ নেন ময়মনসিংহ শহরের অমৃত বাবু রোড এলাকার বাসিন্দা নূরানী জর্দ্দা ফ্যাক্টরির স্বত্ত্বাধিকারী শামীম তালুকদার। শহরের বিহারী ক্যাম্প, দুলদুল ক্যাম্প ও থানাঘাট বস্তিসহ শহরের বস্তি এলাকায় হতদরিদ্রদের মধ্যে ৬শ কার্ড বিতরণের মাধ্যমে শুক্রবার সকাল থেকে জাকাতের ওই শাড়ি-লুঙ্গি বিতরণের দিন ধার্য করেন। কাপড় পাওয়ার আশায় সেহরির পর থেকে আনুমানিক দুই থেকে তিন হাজার মানুষ অপেক্ষা করতে থাকেন ওই বাড়ির সামনেসহ আশপাশের অলিগলিতে। ভোর পৌঁণে ৫টার দিকে কাপড়ের জন্য গেটের ভেতর প্রবেশ করতে চাইলে ফ্যাক্টরির কর্মচারীরা তাদের বাঁধা দেন এবং ভেতর থেকে লাঠিপেটা করেন। এ সময় হুড়োহুড়ো করে ভীরের চাপে পদদলিত হয়ে ঘটনাস্থলেই প্রায় ১০ জন নিহত হন। আহত হন অর্ধ শতাধিক। পরে স্থানীয়রা তাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে মারা যান আরও ১৭ জন। ঘটনার পরপর পুলিশ সুপার খন্দকার মঈনুল হক ২০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বলেন, এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। পরে সকাল ১১টায় তিনি জানান, নিহতের সংখ্যা ২৭ জনে দাঁড়িয়েছে। হাসপাতাল মর্গ থেকে পুলিশ ১২ জনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে মহিলার সংখ্যাই বেশি। এদিকে জাকাত নিতে আসা হতদরিদ্র জয়নাল, খসরু ও রেবেকা বেগমসহ স্থানীয়দের অভিযোগ, ভিড় এড়াতে তাদের লাঠিপেটা করা হয়েছে। ফলে দিগবিদিক ছুটোছুটি করে এতগুলো মানুষ লাশ হলো। তাদের দাবি, মৃতের সংখ্যা ৩০ জনের বেশি হবে। আশপাশের অলিগলিতেও কয়েকটি লাশ রাস্তার উপর পড়ে থাকতে দেখেছেন তারা। এদিকে, নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। স্বজনদের কান্নায় ভারি হচ্ছে পরিবেশ।


     এই বিভাগের আরো খবর