,

নবীগঞ্জে শতক বাজার কমিটির নির্বাচন নিয়ে সংর্ঘষের ঘটনায় একাধিক পাল্টা পাল্টি মামলায় উত্তপ্ত এলাকা

উত্তম কুমার পাল হিমেল/এমদাদুল হক ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার শতক বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সংঘর্ষের ঘটনায় একাধিক পাল্টাপাল্টি মামলায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ওই এলাকার জনপদ। এছাড়া কতিথ সামছু বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ট ৭ মৌজার মানুষ। তার ভয়ে ভীত তটস্থ এলাকার লোকজন। উক্ত সামছু বাহিনীর প্রধান সামছু মিয়া ও সেকেন্ড ইন কমান্ড তার ছেলে আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। প্রতিদিনই শতক বাজারে আসা কোন না কোন মানুষ তার বাহিনীর হাতে লাঞ্চিত হতে হয়। সুদি ব্যবসা থেকে শুরু করে অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে তার গড়া ওই বাহিনী। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া শতক বাজারে রক্তয়ী সংঘর্ষের ঘটনার নায়কও ছিল সামছু মিয়া, তার ছেলে আব্দুল মতিন ও তার বাহিনী। উক্ত সংঘর্ষের ঘটনায় প্রায় অর্ধ শতাধিক লোক আহত হয়। গুরুতর আহতদের সিলেট ওসামানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ টহল জোরদার করা হয়েছিল। এ ঘটনায় গুরুতর আহত সাবের আহমদ চৌধুরী বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা নং-১ তারিখ ০১/০৮/২০১৫ইং দায়ের করেন। উক্ত মামলার খবর পেয়ে সামছু বাহিনী বেপরোয়া হয়ে উঠে। পরে নিরাপত্তার জন্য সাবের চৌধুরী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। এর জবাবে সামছু মিয়া বিজ্ঞ আদালতে দরখাস্থ মামলা নং-২২০/১৫ইং দায়ের করেন। উক্ত মামলা পাল্টা মামলার ঘটনায় উত্তোপ্ত হয়ে উঠে উপজেলার দিনারপুর পরগনার শতক এলাকার জনপদ। এ ব্যাপারে শতক বাজারে সরেজমিনে গেলে নানা শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায় সামছু বাহিনীর নানা কাহিনী। বাজারের ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণী পেশার লোকজন জানান, শতক বাজারের সংঘর্ষের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই বয়স্ক আব্দুল জব্বার নামের এক ব্যক্তি লাঞ্চিত হয়েছে সামছু মিয়া ও তার বাহিনীর হাতে। ভয়ে কারো কাছে বিচার দেয়ার সাহস পায়নি। ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে শতক বাজার কমিটি হয়নি। সম্প্রতি ওই এলাকার লন্ডন প্রবাসী মাজহারুল ইসলাম বজলু বাড়িতে আসলে স্থানীয় লোকদের নিয়ে বসে নির্বাচনের উদ্যোগ নেন। বিগত ১৭ জুলাই সোমবার গোপন ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্টিত হয়। মোট ভোটার করা হয় ১৩ জন। এরমধ্যে ৭ মৌজার ১২ জন এবং বাজার ব্যবসায়ী সমিতির ১ জন। নির্বাচন শান্তি পুর্ণভাবে সম্পন্ন হওয়ার স্বার্থে স্থানীয় ওর্য়াড মেম্বার আলফাজ মোহাম্মদ আনফালকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু উক্ত মেম্বার ভোটার না হয়েও নিজের পছন্দের সভাপতি প্রার্থী ভোট প্রদান করায় সভাপতি প্রার্থী সাবের আহমদ চৌধুরী ৬, দিলাওর মিয়া ৬ ও সাইফুল ইসলাম চৌধুরী পান ২ ভোট। পরে আনফাল মেম্বারসহ নির্বাচনে দায়িত্বরতরা তাদের মনগড়াভাবে দিলাওর মিয়াকে সভাপতি ঘোষনা করলে বিপত্তি ঘটে। তাৎক্ষনিক ভাবে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সাবের চৌধুরী লিখিত আবেদন করে ১৪ ভোটের কারণ জানতে চান। এ নিয়ে ৩০ জুলাই শালিসে বসলে উপস্থিত মুরুব্বীয়ানদের আলোচনার এক পর্যায়ে সন্ত্রাসী সামছু মিয়া, তার ছেলে আব্দুল মতিন তাদের বাহিনী নিয়ে হট্ট্রগোল সৃষ্টি করেন। ফলে সংঘর্ষের সুত্রপাত ঘটে। স্থানীয় লোকজন বলেন, মেম্বার আনফাল অবৈধ ভোট প্রয়োগ না করলে এবং সামছু বাহিনীর লোকজন হট্রগুলের সৃষ্টি না করলে এত বড় সংঘর্ষ ঘটতো না। এদিকে গুরুতর আহত সাবের চৌধুরী মামলা দায়ের করলে প্রতিপক্ষ সামছু মিয়াও একটি মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলায় সামছু মিয়া ঘটনাস্থল যা উল্লেখ করেছেন তা বাস্তবে মিল পাওয়া যায়নি। এছাড়া মামলায় তিনি ইসমাইল মিয়ার দোকানের ৬০ হাজার টাকা এবং মাসুক মিয়ার দোকানের ১ লাখ ২৫ হাজার ৫শ’ টাকা লুটপাটের অভিযোগ আনেন। অথচ সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইসমাইল মিয়া ঘরের বাহিরে চা বিক্রি করেন। অন্যোর দোকান থেকে চিনি, চা বাকীতে এনে সারা দিন বিক্রি করে যান পান বাকীর টাকা পরিশোধ করে কোন রকম জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। অপর ব্যবসায়ী মাসুক মিয়ার কোন দোকান ঘরের হদিস পাওয়া যায়নি। তার একটি বিট রয়েছে উক্ত বাজারে কোন দোকান পাঠ নেই। কথা হয় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সেক্রেটারী সেলিম মিয়া, ব্যবসায়ী ছালিক মিয়া, রুকু মিয়া, শামীম মিয়া, আব্দাল মিয়ার সাথে। তাদের সকলের একই অভিযোগ সামছু মিয়া, তার ছেলে মতিন ও তার সহযোগী চান মিয়া, আব্দুল মুহিত (কড়ই), চানু মিয়াসহ তাদের লোকজনের অত্যাচারে মানুষ চরম ভাবে অতিষ্ট। কেউ প্রতিবাদ করারও সাহস পায় না। অভিযোগে প্রকাশ, সামছু মিয়া আদম ব্যবসার পাশাপাশি সুদি ব্যবসার একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেছেন শতক বাজারে। এমেতাকান খান ওরফে চিন্তার মা নামের এক মহিলা দিয়ে সুদি টাকা প্রাপ্ত লোকদের লাঞ্চিত করেন অহরহ। সামছু মিয়ার সুদি টাকার খপ্পড়ে পরে অনেক মানুষ সর্বশান্ত হয়েছে। কেউ কেউ ভিটেবাড়ি হারিয়েছে। টাকা দিতে ব্যর্থ হলে নারী নির্যাতন মামলাসহ বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় ফাসাঁনো হয় অসহায় লোকদের। সন্ধ্যার পরই ইসমাইল মিয়ার চা’য়ের ষ্টলে বসে জুয়া খেলার আড্ডা। যা নিয়ন্ত্রন করেন সামছু বাহিনীর প্রধান সামছু মিয়া। বাজার ঘুরে দেখা যায়, অনেকেই মূখ খোলতে সাহস পায় না সামছু বাহিনীর ভয়ে। ইতিপুর্বে অনেক নিরীহ মানুষ তাদের অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। সুদের টাকার জন্য শতক (বড়ইতলা) গ্রামের সাহাব উদ্দিন ভিটবাড়ি হারাতে হয়েছে। ২০০৬ সালে উক্ত সামছু তার বাহিনী নিয়ে শতক গ্রামের জামাল উদ্দিনের কাছ থেকে বাজার থেকে জোরপুর্বক চাল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় তৎকালীন সময় মামলাও হয়। তার বিরুদ্ধে নারী ব্যবসারও অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানান, সামছু ও তার ছেলে মতিন এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিলে ওই এলাকার আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রনে আসবে।


     এই বিভাগের আরো খবর