,

মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা ও শশ্মানের ভুমি দখলকারী নজাপতের নানান অপকমর্মের কাহিনী

উত্তম কুমার পাল হিমেল ॥ নবীগঞ্জের করগাঁও ইউনিয়নের জন্তরী গ্রামে জনৈক ভুমিদস্যু বহু অপকর্মের হোতা নজাপত মিয়া কর্তৃক শ্মশানঘাটের ভুমি দখল করতে না পেরে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা গৌরাঙ্গ সরকারের পুত্র গোপাল সরকারকে হাত পা বেধেঁ গায়ে কেরোসিন ঢেলে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। আলোচিত এ ঘটনার সুষ্ট বিচার চেয়ে অগ্নি˜দ্ধ গোপাল সরকারের বড় ভাই রাখাল সরকার বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করলে অভিযোগটি আমলে নেওয়ার পরই সুচতুর নজাপত গা-ঢাকা দেয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য নবীগঞ্জের কয়েকটি সংগঠন সরজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে বেরিয়ে আসে অভিযুক্ত নজাপতে আরো অনেক অপকর্মের বিবরণ। অভিযোগ সূত্রে জানাযায়, উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের জন্তরী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা গৌরাঙ্গ সরকারের বাড়ির পেছনে থাকা একটি শ্বশান রয়েছে যা জন্তরী গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন প্রাচীরকাল থেকে ব্যবহার করে আসছেন। কিন্তু এই শ্বশানের জায়গা নিজ দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠেন একই গ্রামের কতিপয় প্রভাবশালী মৃত আরিফ উলাহর ছেলে নজাপত মিয়া। সে এই শ্বশান ব্যবহার না করার জন্য অনেক দিন পূর্ব থেকেই বাধা আপত্তি করে আসছে নিরীহ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের। এক পর্যায়ে মতার অবৈধ দাফট দেখিয়ে শ্বশানের জায়গা জবর দখল করে ফেলে ঐ নজাপত মিয়া। গ্রামের নিরীহ লোকজন তার এ কাজে বাধা দিতে সাহস পায়নি। পরে নজাপতের নিকট থেকে হিন্দু সমপ্রদায়ের শ্বশানের জায়গা উদ্ধারের জন্য গোপাল সরকার গ্রামের অন্যান্য লোকজনের স্বারসহ জেলা প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) স্থানীয় তহশীলদারের স্বারক নং-৫৮ ধারায় ১১/০৬/১৫ই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে গোপালের পরিবারসহ স্থানীয় হিন্দু সম্পদায়ের মানুষদের এই জায়গাটি শ্বশান হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতি দেন। এই প্রতিবেদনের পর নজাপত মিয়া ও তার ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে গোপালসহ গ্রামের নিরীহ লোকজনের উপর। এরই প্রেক্ষিতে গত ২১শে আগষ্ট শুত্রবার রাত নজাপত গোপালকে হুমকি দিয়ে বলে এই শ্মাশানটি তোমরা আর ব্যবহার করবেনা এবং শ্মশানের এই জায়গাটি তোমাদের প্রয়োজন নেই মর্মে একটি লিখিত দিতে হবে। এতে গোপাল রাজি না হওয়ায় তাকে লাথি, কিল, ঘুষিসহ হাতুরে মারপিট করে এবং গোপালকে ওই শ্মশানেই হত্যা করিবে বলেও হুমকি দিয়ে তাকে রাস্তায় ফেলে চলে যায়। ওই দিনই রাত অনুমানিক ১২ টার দিকে গোপালের বাড়িতে গিয়ে দেশীয় প্রাণ নাশক অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে গোপালের রুমে ঢুকে প্রাণে হত্যার উদ্দ্যোশ্যে মারপিট করে। এসময় গোপাল তার ভাইসহ অন্য সদস্যরা গোপালের রুমে গেলে অস্ত্রের মুখে তাদেরকে জিম্মিকরে করে হত্যার হুমকি প্রর্দশন করে ভুমিদস্যু নজাপত ও তার লোকজন। এ সময় নজাপতের ছেলে খালেদ মিয়া তার হাতে থাকা কেরোসিনের ড্রাম থেকে কেরোসিন গোপালের শরীরে ঢেলে দেয় এবং নজাপত মিয়া তার হাতে থাকা একটি দিয়াশলাই এর কাটিতে আগুন ধরিয়ে গোপালের শরীরে আগুন লাগিয়ে চলে যায় বলে অভিযোগে পাওয়া গেছে। যাওয়ার সময় হুমকি দিয়ে যায় এ বিষয়ে কাউকে বললে বা মামলা মোকদ্দমা করার চেষ্টা করলে সবাইকে হত্যা করা হবে। আগুনে গোপালের দুই হাতসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে ঝলসে যায়। এমনতাঅবস্থায় নজাপত ও তার লোকজন পাহাড়া দিতে থাকে, ফলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ারও সুযোগ দেয়নি। পরের দিন স্থানীয়রা তাকে মূমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তার অবস্থা আশংকাজনক দেখে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করেন। ঘটনাটি অবগত হয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা জাহীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি এডভোকেট রাজীব কুমার দে তাপস, সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা মানবাধিকার কাউন্সিলের সাধারন সম্পাদক প্রভাষক উত্তম কুমার পাল হিমেলসহ উপজেলার হিন্দু নেতৃবৃন্দ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং সুষ্ট তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানান। বিষয়টি নিয়ে জন্তরী ও আশপাশের গ্রামের লোকজনের সাথে কথা বলে পাওয়া গেছে বহু অপকর্মেও হোতা নজাপতের বিরুদ্ধে নানা তথ্য। জন্তরী গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লোকজন জানান, বছর দুয়েক আগে জন্তরী গ্রামের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা গৌরাঙ্গ সরকারের মা মৃত্যুবরণ করলে ঐ নজাপত মিয়া তার লাশ শ্মশানঘাটে দাহ করতে বাধা দেয়। নিরুপায় হয়ে ঐ পরিবারের লোকজনের অনুনয় বিনয়ের পর দাহ না করে মাটিতে পুতে রাখার অনুমতি দেয় নজাপত। যা হিন্দু ধর্মের লোকজনের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করে। গত ২ বছর পুর্বে জন্তরী গ্রামের সম্ভু দাশের মৃত বাচ্চাকে ঐ শ্মানের ভুমিতে পুতে রাখলে পরদিন ঐ নজাপতের হুমকির মুখে লাশ তুলে নিতে বাধ্য হয় ঐ পরিবারের লোকজন। দুষ্কৃতিকারী নজাপত মিয়া এহেন কর্মকান্ডে অতিষ্ট হলেও নিরীহ লোকজন মান সম্মানের ভয়ে মুখ খোলতে সাহস পাননা। বহু অপকর্মের হোতা নজাপতের এহেন নানা অপকর্মে গ্রামের কতিপয় লোকজন সহযোগীতা করে আসে। তাই ভুক্তভোগী এ গ্রামের লোকজন নজাপতের এসব অপকর্মের বিচার ও তার দখল থেকে শ্মশান ঘাটের ভুমিসহ জবরদখলকৃত অন্যান্য লোকজনের সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান।


     এই বিভাগের আরো খবর