,

বাহুবলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ

বাহুবল প্রতিনিধি ॥ বিগত বছরগুলোতে বাহুবল উপজেলায় কোরবানির ঈদ সামনে রেখে কম সময়ে গরু মোটাতাজা করার অবৈধ পন্থায় ক্ষতিকারক ভারতীয় ওষুধ প্রয়োগে ঝুঁকেছিলেন এক শ্রেণির অসাধু গরু খামারীরা। কিন্তু গণমাধ্যমে বিষাক্ত ওষুধে মোটাতাজা করা গরুর মাংসের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরায় এবং প্রশাসনের কঠোর নজরদারিতে পাল্টে গেছে সেই চিত্র। এ বছর কোরবানির ঈদ সামনে রেখে উপজেলার খামারীরা ঝুঁকেছেন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করার দিকে। দেশে গরুর সংকট আর ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ থাকায় ভালো দাম পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছেন খামারীরা। প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, হাওরাঞ্চল ও পাহাড় বেষ্টিত বাহুবল উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া মোটাতাজাকরণের মোট খামারি আছেন প্রায় ৫শতাধিক। আর এ বছর গরু মোটাতাজা করা হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার। খামারিদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কোরবানির ঈদে ভালো দাম পাওয়ার আশায় গরু মোটাতাজা করেন খামারিরা। বিগত বছরে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে গরু মোটাতাজা করতে তারা ব্যবহার করেছিলেন ভারতীয় বিষাক্ত ট্যাবলেট বা ইনজেকশনসহ উচ্চমাত্রার ক্ষতিকার ওষুধ। যা ছিল জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। কিন্তু গণমাধ্যমগুলোতে ওই সব মোটাতাজা গরুর মাংসের ক্ষতিকারক দিক তুলে ধরায় টনক নড়ে সরকারের। তাই এ বছর ঈদ সামনে রেখে নিষিদ্ধ ওষুধ প্রয়োগে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রশাসন। প্রাণিসম্পদ বিভাগের নজরদারিতে জনসচেতনতা বাড়ে খামারি পর্যায়ে। তাই এবার বাহুবলের খামারিরা অসাধু পন্থা ছেড়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ার দিকে ঝুঁকেছেন। উপজেলার পশ্চিম জয়পুর গ্রামের খামারি জাহির মিয়া বলেন, ‘গত বছর বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভারতীয় ওষুধের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরায় আমাদের মাঝে সচেতনতা বেড়েছে। এ ছাড়া প্রণিসম্পদ অফিস থেকে খামারগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ফলে আমরা এখন আর ভারতীয় ওষুধ দিয়ে গরু মোটাতাজা করি না।’ দ্বিমুড়া গ্রামের গরু ব্যবসায়ী আলফু মিয়া বলেন, গরু কিনে প্রথমে কৃমিমুক্ত করে নিই। এরপর আমরা কাঁচা ঘাস, খড়, ভূষি, গমের ছাল, খৈল, খুদের ভাত, লালি গুড়সহ নানারকম খাদ্য উপাদান দিয়ে সুষম খাদ্য তৈরি করে গরুকে খাওয়াই। এতে গরু ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে মোটাতাজা হয়ে ওঠে। তিতারকোনা গ্রামের খামারি আজগর আলী বলেন, এবার ভারতীয় গরু না এলে আমার ৭টি মোটাতাজা গরু বিক্রি করে অন্তত দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা মুনাফা ঘরে তুলতে পারব। কিন্তু শেষ মুহূর্তে যদি ভারতীয় গরু আসে তাহলে লোকসান দিতে হবে। আমরা চাই সরকার দেশীয় খামারিদের কথা চিন্তা করে ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ রাখবে। অপরদিকে সচেতনতা বাড়ছে মাঠপর্যায়ের পশু চিকিৎসক ও ওষুধ ব্যবসায়ীদেরও। রঘুরামপুর গ্রামের গবাদিপশুর ওষুধ ব্যবসায়ী আতড় আলী ও প্রাণী সম্পদ বিভাগের স্বেচ্ছাসেবক পশু চিকিৎসক মাসুক জানান, ‘প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে আমাদের কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে ভারতীয় ক্ষতিকর কোনো ওষুধ যেন আমরা বিক্রি না করি। যার কারণে এখন আর ভারতীয় ওষুধ বাজারে পাওয়া যায় না। আমরা খামারিদের সুষম খাদ্য ও দেশি কোম্পানির ভিটামিন ওষুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দিই।’ এ বিষয়ে বাহুবল উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানান, ‘কৃষক বা খামারি পর্যায়ে আমরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করার পরামর্শ দিয়ে থাকি। তবে কোনো খামারি অবৈধ পন্থায় অসাধু প্রক্রিয়ায় গরু মোটাতাজা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে হাটে মনিটরিং কার্যক্রম জোরদারকরণের লক্ষ্যে ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিম গঠন করেছি। এই টিম বড় বড় পশুর হাটে নিয়মিত মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।


     এই বিভাগের আরো খবর