,

রাগীব আলীর পলায়ন নিয়ে সিলেটে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

সময় ডেস্ক ॥ শিল্পপতি ও কথিত দানবীর সিলেটের দক্ষিণ সুরমার বাসিন্দা রাগীব আলী গ্রেপ্তার এড়াতে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে তারাপুর চা-বাগান নিয়ে জালিয়াতিসহ তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা পুনরুজ্জীবিত করা হয়। এর একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ভয়ে সম্প্রতি জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে তিনি ভারতে পালিয়ে দেন। তার পালিয়ে যাওয়া নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। গুঞ্জন রয়েছে, রাগীব আলী ভারত থেকে যুক্তরাজ্যে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রীতিমতো এ নিয়ে তোলপাড় চলছে। এক সময় যারা রাগীব আলীর ঘনিষ্ঠজন ছিলেন, তারা তার ব্যাপারে সুর পাল্টে ফেলেছেন। ব্যক্ত করেছেন মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ বলেছেন, প্রকৃত দানবীর হলে রাগীব আলী দেশ ছেড়ে পালাতেন না। আবার কেউ কেউ বলেছেন, পালিয়ে না গিয়ে দেশে থেকে তার আইনি লড়াই করা উচিত ছিল। ২০১১ সালের ২৮ মার্চ রাগীব আলীকে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে ‘গণসংবর্ধনা’ দেওয়া হয়। ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর নগরের পাঠানটুলাস্থ একটি কমিউনিটি সেন্টারে সিলেটের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের উদ্যোগে দেওয়া হয় সংবর্ধনা। এ দুটি সংবর্ধনার উদ্যোক্তা ছিলেন রাগীব আলীর কয়েকজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি। দুটি সংবর্ধনায় রাগীব আলীকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রদানের দাবি করা হয়েছিল। ইউপি চেয়ারম্যানদের উদ্যোগে রাগীব আলীকে প্রদত্ত সংবর্ধনা পরিষদের সমন্বয়কারী ছিলেন দক্ষিণ সুরমার কদমতলির বাসিন্দা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সহ-সাংগঠানিক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট রফিকুল হক। আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে প্রদত্ত ‘গণসংবর্ধনার নেপথ্যেও ছিলেন তিনি। সম্প্রতি এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা বিশাল সম্পদের অধিকারী, তাদের মাঝে কিছু ভেজাল থাকে। রাগীব আলী এর ঊর্ধ্বে নন; ভেজাল থাকতেই পারে। তবে তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট হওয়ার পর তার দেশত্যাগ করা ঠিক হয়নি। তিনি মামলা মোকাবিলা করতে পারতেন। তাছাড়া আদালতের রায়ের আগে একজন মানুষকে জালিয়াত বলা যায় না। তিনি বলেন, আমার মনে হচ্ছে, দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত রাগীব আলীর একক সিদ্ধান্তে নয়। তার ঘনিষ্ঠজনদের পরামর্শে হয়তো তিনি দেশ ছেড়েছেন। তা না হলে তার বিশাল সাম্রাজ্য ছেড়ে তিনি যাওয়ার কথা নয়। এর পেছনে কোনো রহস্যও থাকতে পারে। রাগীব আলীকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়ার যে দাবি করা হয়েছিল, এ প্রসঙ্গে রফিকুল হক বলেন, রাগীব আলী দান করেছেন তা মিথ্যা নয়। নিজের খরচে ২০ থেকে ২২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালিয়েছেন। আর মানুষ সামনে যা দেখেন, সেটিই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। নেপথ্যে কী আছে সেটাকে গুরুত্ব দেন না বা জানা থাকে না। সেক্ষেত্রে রাগীব আলীর অভ্যন্তরীণ কোনো ব্যাপার থাকলে তার কাছের মানুষ ছাড়া কেউ জানার কথা নয়। মানুষ তার দান-খয়রাতকেই সামনে থেকে দেখে রাষ্ট্রীয় সম্মানা প্রদানের দাবি তোলেন। ইউপি চেয়ারম্যানদের উদ্যোগে রাগীব আলীকে প্রদত্ত সংবর্ধনা পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন সিলেট ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ও দক্ষিণ সুরমার মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মকন মিয়া। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, দানবীর রাগীব আলীর একটি বাড়ি আমার ইউনিয়নের সীমান্তে আর তার পুরনো বাড়িটি আমার ইউনিয়নে। সেক্ষেত্রে তিনি যদি একজন ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে আমার পরামর্শ নিতেন, আমি বলতাম আপনি মামলা মোকাবিলা করুন। তিনি একজন ‘দানবীর’ হিসেবে আমরা তাকে সহযোগিতা করতাম। তার দেশত্যাগ করার বিষয়টি আমার পছন্দ হয়নি। রাগীব আলীকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়ার দাবি প্রসঙ্গে মকন মিয়া বলেন, জালিয়াতির ব্যাপারটি আইনি ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমার কোনো মন্তব্য নেই। তবে তিনি একজন দানবীর হিসেবে আমার ইউনিয়নে তার ব্যক্তিগত টাকা দিয়ে অনেক উন্নয়ন করেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সেতু করেছেন। সেজন্য হয়তো তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়ার দাবি ওঠে। আমরাও চেয়েছিলাম একজন ‘দানবীর’ হিসেবে তিনি যেন রাষ্ট্রীয় সম্মান পান। সিলেটের ইউপি চেয়ারম্যানদের উদ্যোগে রাগীব আলীকে প্রদত্ত সংবর্ধনা পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন ওসমানীনগর উপজেলার ওসমানপুর ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা সৈয়দ মোতাহির আলী। রাগীব আলীর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, তার যাওয়ার কারণ সম্পর্কে আমার জানা নেই। তবে তা আইনি প্রক্রিয়ায় শেষ হওয়া উচিত। তিনি প্রকৃত অপরাধী হলে আদালত অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। রাগীব আলীকে প্রদত্ত সংবর্ধনা পরিষদের সদস্য ছিলেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষণাবন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা নসিরুল হক শাহীন। তিনি বলেন, রাগীব আলী কেন দেশ ত্যাগ করেছেন তা তিনি ছাড়া কেউ ভালো করে বলতে পারবেন না। এটা তিনিই ভালো জানেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাগীব আলীর জাল-জালিয়াতির বিষয়টি কেউ জানতেন না। এখন তার জালিয়াতির বিষয় বেরিয়ে আসছে। তবে আদালত থেকে প্রমাণিত না হওয়ার আগে তাকে অপরাধী বলা যায় না। রাগীব আলীকে প্রদত্ত সংবর্ধনা পরিষদের সদস্য সিলেট সদর উপজেলার খাদিমপাড়া ইউনিয়ের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বেলাল বলেন, রাগীব আলী দেশত্যাগ করা উচিত হয়নি। তিনি প্রকৃত দেশপ্রেমিক হলে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতেন। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা না রেখে তার দেশত্যাগ প্রমাণ করে তিনি অপরাধী। তিনি প্রকৃত দানবীর হলে এভাবে পালিয়ে যেতেন না। সংবর্ধনা পরিষদের আরেক সদস্য ছিলেন দক্ষিণ সুরমার সিলাম ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন। রাগীব আলীর দেশ থেকে পলায়ন সম্পর্কে তিনি বলেন, একজনের অপরাধ প্রমাণিত না হলে তাকে অপরাধী বলা যায় না। আমি এখনো বলব, একজন দানবীর হিসেবে রাগীব আলীকে রাষ্ট্রীয় সম্মান দেওয়া প্রয়োজন। গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদ আহমদ বলেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন। রাগীব আলীর বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পর তার দেশ ছাড়া ঠিক হয়নি। তার মামলা মোকাবিলা করা উচিত ছিল। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানুষ বহির্দৃষ্টি দিয়ে যেটা দেখেন, অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে তা দেখেন না। রাগীব আলীর কার্যক্রম মানুষ বহির্দৃষ্টিতেই দেখেছেন।


     এই বিভাগের আরো খবর