,

বাহুবলে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষের ঘটনায় আহত যুবকের মৃত্যু : আবারও উত্তপ্ত এলাকা ॥ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন

বাহুবল প্রতিনিধি ॥ বাহুবল উপজেলার মিরপুর বাজারে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষের ঘটনায় আহত এক যুবক মারা গেছে। আহত যুবকের মৃত্যুর খবরে এলাকায় আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পশ্চিম জয়পুর গ্রামের সুজন মিয়া সরকার (২৫) নামের ওই যুবক মারা যায়। তার মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে জয়পুর সহ কয়েকটি গ্রামের লোকদের মাঝে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। তবে পুলিশের তড়িৎ হস্তক্ষেপে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন এলাকাবাসী। উল্লেখ্য, বাহুবল উপজেলার নতুন বাজারে অবস্থিত ওমেরা সিলিন্ডার্স এর পুরাতন মালামাল ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে গত ২৮ আগষ্ট দুপুরে পূর্বজয়পুর গ্রামের আব্দুল হামিদ-হারুন মিয়া ও চারগাঁও যশমঙ্গল গ্রামের বেলায়েত ও দুলাল মিয়ার গ্র“পের মাঝে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এরই জের ধরে পরদিন ২৯আগষ্ট চারগাঁও যশমঙ্গল গ্রামের লোকজন পূর্বজয়পুর গ্রামের হারুন মিয়া, তমিজ খান ও সামছুল ইসলাম মাষ্টারকে মিরপুর চৌমহনা থেকে তুলে নেয়ার চেষ্টা করে। উপস্থিত লোকজন তমিজ খান ও সামছুল ইসলাম মাষ্টারকে আটকে রাখলেও হারুন মিয়াকে চারগাঁও গ্রামের লোকজন ধরে নিয়ে তাজুল ইসলাম চৌধুরীর অফিসে তালাবদ্ধ করে আটকে রাখে। এ খবর জানাজানি হওয়ায় পূর্ব জয়পুরের লোকজন নতুন বাজারে বেরিকেট দিয়ে দুই ঘন্টা যানচলাচল বন্ধ রাখে। এরই প্রেক্ষিতে পূর্বজয়পুর গ্রামবাসীর উদ্যোগে ৩১আগষ্ট ৮ ও ১২ পরগনার মুরুব্বীয়ান সহ এলাকাবাসীদের নিয়ে চারগাঁও গ্রামের জুলুমের বিরুদ্ধে পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ৮পরগনার নেতা আকাদ্দুছ মিয়া বাবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পরামর্শ সভায় চারগাঁও গ্রামের জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলার সিদ্ধান্ত হয়। এদিকে ২সেপ্টেম্বর সন্ধা ৭টার দিকে চারগ্রামের কথিত নেতা তাজুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে শতাধিক লাটিয়াল মিরপুর বাজারে বানিয়াগাঁও ও কচুয়াদী গ্রামের কয়েকটি দোকানে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট শুরুকরে। এ সময় বানিয়াগাঁও সহ পশ্চিম জয়পুরের লোকজন একত্রিত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। প্রায় আড়াই ঘন্টা স্থায়ী ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলাকালে পুলিশ সহ উভয়পক্ষে অন্তত দেড়শতাধিক লোক আহত হয়। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ ৩শ ৮৭ রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। গুরুতর আহতদের বাহুবল, হবিগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার ও সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সিলেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পশ্চিমজয়পুর গ্রামের মৃত ইব্রাহিম মিয়া ওরফে মিঠার বাপের পুত্র সুজন মিয়া সরকার (২৫) গতকাল শুক্রবার দুপুরে মারা যায়। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়ায় বাহুবল মডেল থানার নবাগত ওসি মোঃ মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিকেল ৪টার দিকে হবিগঞ্জের সিনিয়র এ এসপি রাসেলুর রহমান রাসেল, বাহুবল উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) শফি উল্লাহ এলাকা পরিদর্শন করেন। উল্লেখ্য, সৃষ্ট এই সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে এমপি এডভোকেট আলহাজ্ব মোঃ আবু জাহির ও হবিগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমুদুল হক বিষয়টি সালিশে নিস্পত্তির জন্য গত বৃহস্পতিবার সন্ধায় উভয়পক্ষের মুরুব্বীয়ানের উপস্থিতিতে আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় মিরপুর জামেয়া হুসাইনিয়া মাদ্রাসা মাঠে সালিশ বিচারের তারিখ ধার্য করেছিলেন। এ সালিশ বিচারের দিন তারিখ ধার্য্য করার পরপর এলাকাবাসী স্বস্থির নিঃস্বাস ফেলছিলো। কিন্তু সুজন মিয়া সরকারের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠল বাহুবল দক্ষিনাঞ্চলের জনপদ।


     এই বিভাগের আরো খবর