,

শিক্ষকদের নির্যাতন করায় এসআই ক্লোজড ॥ ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন : বাহুবলে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ঘেরাওকে কেন্দ্র করে পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষ ॥ ৫ জন গুলিবিদ্ধ আহত অন্তত ২৫

বাহুবল প্রতিনিধি ॥ বাহুবল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সামছুন্নাহার পারভীনের ঘুষ-দুর্নীতির প্রতিবাদে কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকরা। পরে আন্দোলনকারীরা মডেল থানার সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করলে পুলিশ লাটিচার্জ করে। এসময় ২ শিক্ষক ও ২ জন ছাত্রকে পুলিশ আটক করে মারধর করে। পরে ছাত্র-জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে থানা ঘেরাও করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে পুলিশ অস্ত্র উচিয়ে গুলিনিক্ষেপ করে পাল্টা জবাব দেয়। এ অবস্থায় উভয় পক্ষে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে ৫ জন গুলিবিদ্ধ সহ অন্ততঃ ২৫ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় ২ জনকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ এবং অন্যান্যদের বাহুবল ও হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত সোমবার দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র ও সহকারী পুলিশ সুপার সুদিপ্ত রায় ঘটনাস্থলে পৌছে আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনায় বসেন। আলোচনা শেষে আটককৃতদের ছেড়ে দিয়ে ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন ও আন্দোলকারীদের উস্কানী দেয়া ও শিক্ষকদের নির্যাতনের কারণে থানার এসআই দেলোয়ার হোসেনকে ক্লোজড করেন। উল্লেখ্য, বাহুবল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সামছুন্নাহার পারভীনের ঘুষ-দুর্নীতির প্রতিবাদে বাহুবলের দীননাথ ইনস্টিটিউশন মডেল হাইস্কুল ও ছদরুল হোসেন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবকরা গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় ঘেরাও করে। এ সময় ছাত্রছাত্রীরা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম, বাহুবল মডেল থানার এসআই কাজী জিয়া উদ্দিন ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা চালায়। এ সময় উত্তেজিত ছাত্ররা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের উদ্দেশ্যে জুতা নিক্ষেপ করলে তা পুলিশের উপর পরে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বাহুবল মডেল থানার এসআই কাজী জিয়াউদ্দিন কয়েক ছাত্রকে চড়-থাপ্পড় মারেন। এতে ছাত্রছাত্রীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। পরে পরিস্থিতি সামাল দেন বাহুবল উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাই। তিনি উপস্থিত হয়ে সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস দিলে ছাত্ররা স্কুলে ফিরে যাওয়ার পথে বাহুবল থানার সামনে গিয়ে পূনরায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এনিয়ে মডেল থানা পুলিশের সাথে শিক্ষার্থীদের বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে উঠলে পুলিশ বেদড়ক লাঠিচার্জ শুরু করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা দিক্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। এক পর্যায়ে মডেল থানার ওসি (তদন্ত) বিশ্বজিৎ-এর নেতৃত্বে পুলিশ দীননাথ মডেল হাইস্কুলের সিনিয়র শিক্ষক অশোক আচার্য্য ও মহীউদ্দিন এবং ২ ছাত্রকে রাস্তা থেকে ধরে লাঠিপেটা করতে করতে থানায় নিয়ে যায়। এ দৃশ্য দেখে স্থানীয় জনতা ও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোব্ধ হয়ে থানা ঘেরাও করে ইটপাটকেল নিপে করতে থাকে। পরে পুলিশ সর্টগানের গুলি ও রাবার বুলেট এবং টিআর সেল নিক্ষেপ করে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এ ঘটনায় ৫ ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ সহ ২৫ জন আহত হয়। আহতদের মাঝে গুরুতর অবস্থায় বড়ইউড়ি গ্রামের আব্দুল মতিন (৫৫) কে গুরুতর অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ছাত্র তাইজুল হক, বিজন বণিক ও রহমান সহ অন্ততঃ ২৫জনকে আহত অবস্থায় বাহুবল ও হবিগঞ্জ আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ সময় পুলিশ ২ শিক্ষক সহ ৪ জনকে আটক করে। ঘটনার পরপর হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র ঘটনাস্থলে পৌছে আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনায় মিলিত হন। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বাহুবল মডেল থানার ওসি মনিরুজ্জামান জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ৯০ রাউন্ড সর্টগানের গুলি ও ১৮ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। পরে পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশে এএসপি সুদীপ্ত রায়-এর নেতৃত্বে ৩ সদস্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং এসআই দেলোয়ার হোসেনকে ক্লোজড করা হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিক্ষক সহ আটক ৪ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।


     এই বিভাগের আরো খবর