,

হবিগঞ্জ জেলাকে বাল্য বিয়ে মুক্ত ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, মসজিদের ইমাম, কাজী, পুরোহিতসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে নিয়ে হবিগঞ্জকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাল্যবিয়ে মুক্ত জেলা ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রবিবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণ নিমতলায় জেলা প্রশাসন আয়োজিত বিশাল সমাবেশে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ জামাল উদ্দীন আহমেদ এ ঘোষণা দেন। এর আগে সকালে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মোঃ জামাল উদ্দীন আহমেদ বেলুন উড়িয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শুরু করেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ‘কন্যা শিশুর বিয়ে নয়, করবে তারা বিশ্ব জয়’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সমাবেশ শুরু হয়। জেলা প্রশাসক সাবিনা আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র, জেলা পরিষদ প্রশাসক ডাঃ মুশফিক হুসেন চৌধুরী, সিভিল সার্জন ডাঃ দেবপদ রায়, সরকারি বৃন্দাবন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুল মালেক, আওয়ামীলীগ জাতীয় পরিষদ সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী, শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ছালেক মিয়া। বক্তব্য রাখেন চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহমেদ জামিল, হবিগঞ্জ সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌস আরা, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি মোঃ ফজলুর রহমান, জেলা ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা নুরুল আমিন, বিশিষ্ট কবি রোটারিয়ান তাহমিনা বেগম গিনি, মহিলা সংস্থার সভানেত্রী জমিলা বেগম, হবিগঞ্জ উন্নয়ন সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ শাহীন, অ্যাডভোকেট আকবর হোসেন জিতু, জেলা কাজী সমিতির সভাপতি আব্দুল জলিল, বিকেজিসি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুধাংশু কুমার কর্মকার প্রমূখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলের অধ্যক্ষ সৈয়দা রওশন সুলতানা ও জেলা কালচারাল অফিসার অসিত বরণ দাশগুপ্ত। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার মোঃ জামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন- বাল্য বিবাহ একটি সামাজিক ব্যাধি। বাল্য বিবাহ দেয়া মানে কন্যা শিশুকে হত্যা করা। বাল্য বিবাহ দেয়ার পর একটি শিশুর মধ্যে যে আশা আকাঙ্কা থাকে তা ধ্বংস হয়ে যায়। তাই বাল্য বিবাহকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। তিনি উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন- প্রাপ্ত বয়স হওয়ার আগে যারা প্রেম করে বাল্য বিবাহ করে তাদের অবস্থার খোঁজ খবর নেন। দেখতে পাবেন তারা কতটা সুখে আছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন- ভারতে পতিতালয়গুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় সেখানে অল্প বয়সে প্রেম করে প্রতারণার শিকার হয়ে মেয়েরা পতিতাবৃত্তিতে লিপ্ত হয়েছে। প্রাপ্ত বয়স না হওয়ার আগ পর্যন্ত যে মেয়েরা প্রেমের ফাঁদে পা দিয়ে নিজের জীবনকে ধ্বংস করে দেয়, সেসব মেয়েরা বুদ্ধিমান হতে পারে না। বুদ্ধিমান মেয়েরা নিজের জীবন না গড়ে তোলার আগ পর্যন্ত প্রেম কিংবা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় না। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন- কোন বখাটে স্কুল থেকে যাওয়ার পথে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যদি বলে- তোমাদের বাড়িতে নিয়ে যাবো। তোমরা বলবে তোদের জেলখানায় নিয়ে যাবো। এরপর যদি কোন মেয়েকে উক্ত্যক্ত করে তাহলে প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করলে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। কাজী ও ইমামদের উদ্দেশ্যে বিভাগীয় কমিশনার বলেন- এফিডেভিট দেখে কাজী ও ইমামগণ বিয়ে পড়িয়ে থাকেন, সেটা বেআইনী। আজকের পর থেকে যেসব ইমাম ও কাজী এ ধরণের বিয়ে পড়াবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন- নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কোন চেয়ারম্যান যদি অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে প্রাপ্ত বয়স্কের জন্ম নিবন্ধন সনদ দেন, তাহলে ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন- প্রতিটি শিশুকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হিসেবে দেখতে চাই। তাই আসুন সকলে মিলে হবিগঞ্জ জেলাকে বাল্য বিবাহ মুক্ত রাখি। জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম বলেন- দেশের অর্থনৈতিক সামাজিক ও রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর উপস্থিতি ক্রমশ বেড়েই চলছে। চলমান নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে সবচেয়ে বড় বাধা হলো বাল্য বিবাহ। এটি সমাজের জন্য অভিশাপ। নারী শিক্ষা অগ্রগতি ব্যাহত, মাতৃমৃত্যু ঝুঁকি, শিশু মৃত্যুর হার বৃদ্ধি ইত্যাদির মুল কারণ হলো বাল্য বিয়ে। আসুন সকলে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ করি। পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র বলেন- বাল্য বিবাহের কারণে অতীতে আমরা কাজী ও ইমামকে ধরে এনে শাস্তি দিয়েছি। কিন্তু প্রত্যেক মাসে কাজী, অভিভাবকদের সম্মতি না নিয়েও বাল্য বিবাহ হচ্ছে। আসুন আমরা সবাই মিলে কাজ করে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ করি। সমাবেশে বক্তারা বলেন- আজকের পর থেকে আমরা যেখানে বাল্য বিবাহ দেখব সেখানেই প্রতিরোধ করে নিজ নিজ এলাকাকে বাল্য বিবাহ মুক্ত রাখব। সমাবেশে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার নেতৃবৃন্দসহ কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অংশশ্রহণ করে। সমাবেশে বিভাগীয় কমিশনার উপস্থিত সকলকে বাল্যবিয়ে মুক্ত হবিগঞ্জ গড়ার শপথ পাঠ করান।


     এই বিভাগের আরো খবর