,

নবীগঞ্জে ভূয়া চুক্তিপত্র বানিয়ে সরকারী গাছ কাটতে গিয়ে আটক ৩

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার নবীগঞ্জ-কাজীরবাজার সড়কের পাশের সরকারী গাছ ভূয়া বিক্রির চুক্তিপত্র তৈরী ও চল-ছাতুরী করে গাছ কাটার সময় তিনজনকে আটক করেছে নবীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। এ ব্যাপারে থানায় তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা দায়েরের করা হয়েছে। সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ বিন হাসান ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতাউল গণি ওসমানী তারা স্থানীয় হাওড় পরিদর্শনে যাওয়ার পথে নবীগঞ্জ-কাজীরবাজার সড়কে দেখতে পান রাস্তার পাশের রোপনকৃত সরকারী গাছ কাটা হচ্ছে। এ সময় তারা গাড়ী থামিয়ে সেখানে গিয়ে গাছ কাটার কারণ জানতে চান। তখন তারা জানায় হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ এবং সড়ক ও জনপদ বিভাগ থেকে ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে ১শ গাছ কাটার অনুমতি পেয়েছে তারা। এ সময় কোন কাগজ আছে কিনা জিজ্ঞাস করলে তারা একটি চুক্তিপত্র দেখায়। এতে লেখা জেলা পরিষদ এবং সড়ক ও জনপদ যৌথ বিক্রয়ের চুক্তিপত্র ও আদেশনামা। ওই চুক্তিপত্রে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ডাঃ মুশফিক হোসন চৌধুরী ও সওজের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল কদ্দুছ এর স্বাক্ষরিত চুক্তিতে ৫ জন ক্রেতার নাম লেখা এবং ১শ টি গাছ কেটে নিয়ে আরো ১শ টি চারা গাছ লাগানোর কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু চুক্তিপত্রে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ভূয়া পদবি এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডাঃ মুশফিক হোসেন চৌধুরীর স্বাক্ষর জাল ধরা পড়ে। পাশাপাশি সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষে আব্দুল কুদ্দুছ প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলীর নাম উল্লেখ করা হয়। কিন্তু সেখানে এ ধরনের কোন পদই নেই এবং এ নামে কোন ব্যক্তি চাকুরী করেন না। মূলত জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নাম কুদ্দুছ আলী সরকার। চুক্তিপত্রটি জাল মনে হলে ইউএনও এবং এসিল্যান্ড চ্যালেঞ্জ করে গাছ কাটায় জড়িত নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামের মনির উদ্দিনের পুত্র তোফায়েল আহমেদ, কুর্শি ইউনিয়নের কুর্শি গ্রামের নজীর মিয়া চৌধুরীর পুত্র মহসিন মিয়া চৌধুরী এবং নবীগঞ্জ পৌর এলাকার আনমনু গ্রামের ময়না মিয়ার পুত্র নূর মিয়াকে আটক করেন। এক পর্যায়ে আটককৃতরা প্রতারনার কথা শিকার করে। পরে তাদেরকে নবীগঞ্জ থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আটক হওয়ার পূর্বেই তারা তিনটি গাছ কেটেছিল। তবে আটককৃতের মধ্যে নূর মিয়া ২য় পক্ষ। তিনি তোফায়েল ও মহসিনের কাছ থেকে ওই গাছগুলো ক্রয় করেছেন। এ ঘটনায় নবীগঞ্জ এলজিইডি অফিসের সার্ভেয়ার ও সহকারী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতাউল গণি ওসমানী জানান, ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় সরকারী গাছ কাটতে দেখলে জিজ্ঞেস করলে তারা ক্রয় করেছে বলে জানায়। প্রতারক চক্র ভূয়া কাগজ বানিয়ে ২ লাখ ১০ হাজার টাকায় গাছ ক্রয় দেখিয়ে অপর একটি পক্ষের কাছে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় বিক্রি করেছে বলে স্বীকার করে। তিনি আরও জানান, চুক্তিপত্রে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নাম উল্লেখ করলেও রাস্তাটি মূলত এলজিইডির অধিনে। আটককৃতদেরকে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার এসআই সামছুল ইসলাম জানান, উপজেলা প্রশাসন ও এলজিইডি আসামীদেরকে আটক করেছে পুলিশে দিয়েছে। এ ব্যাপারে এলজিইডি অফিসের সার্ভেয়ার ও সহকারী প্রকৌশলী বাদী হয়ে মামলা দায়েরের করেছেন। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ বিন হাসান জানান, ভূয়া চুক্তিপত্র তৈরী করে সরকারি গাছ কাঁটার অপরাধে ৩ জনকে আটক করে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডাঃ মুশফিক হোসেন চৌধুরী জানান, তারা কোন গাছ বিক্রি করেননি। প্রতারক চক্র তার স্বাক্ষর জাল করেছে। তিনি প্রতারকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।


     এই বিভাগের আরো খবর