,

চুনারুঘাটে এক মাসে ধর্ষণের শিকার ৮ জন

চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ চুনারুঘাটে গত এক মাসে ৮টি ধষর্ণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার থানায় মামলা হলেও কোন কোনটার আসামী ধরা পড়েছে না। তাদের মধ্যে অধিকাংশ ঘটনার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পুলিশ প্রশাসন। এসব মামলায় আসামীদের গ্রেফতার না হওয়া, দ্রুততম সময়ে বিচার না হওয়া, নেশায় আসক্তি, ইন্টারনেটে আসক্তি, অবাধ যৌনাচার এবং হয়রানির শিকার হওয়ার কারণে বাড়ছে ধর্ষনের ঘটনা। সর্বশেষ উপজেলার পীরের বাজার শিবিরে পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রী ধর্ষনের শিকার হয়েছে। এদিকে ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচীর হিসেবে দেখা যায়, গত ৪ মাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৪ শিশুসহ ১৩ নারী শিশু ও কিশোরী ধর্ষনের শিকার হয়েছে। এসব ঘটনায় ব্র্যাক তাদের নিজ খরচে ভিকটিকমে সহায়তা ও মামলার দায়িত্ব নিয়েছে। চুনারুঘাট পৌর এলাকার নতুন বাজার প্রকাশিত পীরের বাজারে আশ্রায়ন কেন্দ্রে থাকে হাজী ইয়াছির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর পরিবার। পিতা-মাতা দরিদ্র হওয়ায় মেয়েকে পাশের উজ্জল মিয়ার বাসস্থানে রেখে তারা গত ২ মে হাওর এলাকায় ধান কাটতে চলে যায়। ঐদিন রাতেই এলাকার মৃত শিরু মিয়ার ছেলে উজ্জ্বল মিয়া (৩৭) স্কুল ছাত্রীকে কৌশলে ঘুমের ওষুধ সেবন করিয়ে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে মেয়েটি ঘুমিয়ে পড়লে উজ্জ্বল মিয়া রাত ১টার দিকে তাকে ধর্ষণ করে। এভাবে পরপর দুইদিন ধর্ষণের কারণে রক্তকরণে মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। ফলে বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়। এই খবর পেয়ে মা-বাবাও বাসস্থানে চলে আসেন। কিন্তু মেয়েটির চিকিৎসা না হওয়ায় সে আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিষয়টি জানতে পেরে বুধবার সকালে ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচির সংগঠক অল্লিকা দাশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার উদ্দেশ্যে সেখানে যান। এই খবর জানতে পেরে চুনারুঘাট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এ ব্যপারে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদিকে গত বুধবার চুনারুঘাট উপজেলা মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় পুলিশের তথ্যেই দেখা যায়, গত এপ্রিল মাসে উপজেলায় ৭টি ধর্ষনের মামলা হয়েছে। একই সময়ে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১৯টি। যা অত্যেন্ত ভয়াবহ। চলতি মাসের শুরুতেই ২ মে ঘটে পীরের বাজার শিবিরে ধর্ষনের ঘটনা। গত এপ্রিল মাসে ধর্ষনের ঘটনার মধ্যে আহমদাবাদ ইউনিয়নে সুন্দরপুর গ্রামে ৬ বছরের শিশু ধর্ষনের আলোচিত ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ মামলায় পুলিশ র্ধষককে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে। এপ্রিল মাসে দেওরগাছ ইউনিয়নের জোয়াল ভাঙ্গা চা বাগানে ৮ বছরের আরও এক চা শ্রমিক শিশু ধর্ষনের শিকার হয়। একই মাসে দেউন্দি চা বাগানে এক গৃহবধু, আশ্রাবপুর গ্রামে ১৬ বছরের এক কিশোরী, একই মাসে হলহলিয়া গ্রামে ১৫ বছরের এক কিশোরী ধর্ষনের শিকার হয়। ফেব্রুয়ারী মাসে মানিক ভান্ডার গ্রামে ধর্ষনেরে শিকার হয় এক কিশোরী। এর পুর্বে ছয়শ্রী গ্রামে ৭ বছরের এক শিশু ধর্ষনের শিকার হয়েছে। এসব ঘটনার অধিকাংশের কোন বিচার হয়নি। ঘটনা ঘটার পরই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে দৌড়ঝাপ করতে দেখা যায়। কিছুদিন পরই থেমে যায় দৌড়ঝাপ। নির্যাতিতরা ঘুরতে থাকেন থানা পুলিশ আর আদালতে। দ্রুততম সময়ে বিচার না হওয়া, ডাক্তারি রিপোর্ট না পাওয়া এবং তদন্তে গাফিলতিসহ নানা কারনে বিলম্ভ ঘটে বিচারের। এতে হয়রানির শিকার বিচারপ্রার্থীরা বিচারের আশা ছেড়ে দিয়ে নিশ্চুপ থাকে। ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচির সংগঠক অল্লিকা দাশ জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৩টি ধর্ষণ ও ধর্ষনের চেষ্ঠার ঘটনা ঘটেছে। তারা এসব ঘটনার ভিকটিমকে আইনী এ বিষয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকা কাউন্সিলের চুনারুঘাট শাখার সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদুল হক সুজন বলেন, সামাজিক অবক্ষয়, অবাধ মাদক ব্যবহার, যুব সমাজে নেশা ও নারী আসক্তি থেকে এসব ঘটনা ঘটছে। সামাজিক সচেতনা এবং আইনের সঠিক ব্যবহার ও সুষ্ঠ বিচারর মাধ্যমেই সমাজ থেকে এ ব্যধি দুর করা সম্ভব। মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক নুরুল আমিন বলেন, নেশায় আসক্তি, ইন্টারনেটে আসক্তি, অবাধ যৌনাচার থেকে সমাজে এসব ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে শিশু ধর্ষনের ঘটনাগুলো আমাদের সমাজের মারাত্বক অবক্ষয়। সচেতনতাই পারে এসব দুর করতে। তিনি মনে করেন, সঠিক সময়ে এবং সুষ্ঠ বিচার না হওয়া ও পুলিশ এবং আদালতে হয়রানির কারণেও এসব বাড়ছে। সহায়তা এবং উপস্থিত আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। বর্তমানে এসব ঘটনার মামলা তদন্ত ও বিচারাধীন আছে। চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম আজমিরুজ্জামান জানান, একমাসে ৭টি ধর্ষন মামলা কথা স্বীকার বলে বলেন, এসব ঘটনার অধিকাংশই মিথ্যা বলে প্রমানিত হয়। এপ্রিল মাসে ধর্ষনের ঘটনার মধ্যে বিশেষ করে সুন্দরপুর এবং পীরের বাজারের শিবিরের ঘটনাটি সত্য বলে প্রমানিত হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য ঘটনাগুলে তদন্তে দেখা যায়, পুর্বে ছেলে মেয়ের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু বিয়ে না করা বা পরিবার মেনে না নেওয়ায় এ ধরনের ধর্ষনের মামলা হচ্ছে। তিনি বলেন, সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে সঠিক সময়ে ডাক্তারি রিপোর্ট না আসায় এবং মামলার জট থাকায় তদন্তে কিছুটা দেরী হয়। ফেল চার্জশীট দিতে কিছুটা দেরি হচ্ছে।


     এই বিভাগের আরো খবর