,

মাদকের স্বর্গরাজ্য মাধবপুর!

মাধবপুর প্রতিনিধি ॥ মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিনত হয়েছে মাধবপুর উপজেলা। প্রায় প্রতিদিনই পুলিশ, বিজিবি, মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের হাতে ধরা পড়ছে মাদকের চালান। মাদক বহনকারী ও চুনোপুটি মাদক ব্যবসায়ীরা ধরা পড়লেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের তালিকাভুক্ত অস্ত্র ও চোরাচালানকারীসহ মাদকের মূলহোতারা রয়েছে বেশ আরামেই। রাঘব বোয়ালরা মাদক আইনের বাইরে থাকায় মাধবপুরে মাদকের প্রসার রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে সচেতন মহল ধারনা করেছেন। ২০১৪ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের তালিকায় মাধবপুর উপজেলা প্রায় ১৭ জন অস্ত্র ও চোরাচালানকারীর নাম প্রকাশিত হয়েছিল। সেই ১৭ জন ধর্মঘর, চৌমুহনী, বহরা, শাহজাহানপুর ও জগদীশপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। তালিকাভুক্ত ১৭ জনের সৃষ্টি শতাধিক মাদক, চোরাকারবারসহ দুর্ধষ অপরাধীর বিচরণ রয়েছে মাধবপুরে। তাদের বেপরোয়া চলাফেরায় সাধারণ জনগণ ভীতস্বন্তস্ত্র। দুধর্ষ মাদক ও চোরাচালান সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় উপজেলার সাধারণ জনগ। আইনশৃংখলা বাহিনী, সীমান্তরক্ষি বাহিনী, মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর এই মাদকের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবৎ অভিযান পরিচলানা করে আসলেও অভিযানের সাথে পাল্লা দিয়ে মাদকের প্রসারতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রামে গঞ্জের সকল স্থানেই হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় সকল প্রকার মাদকদ্রব্য। উপজেলার শাহজহানপুর, জগদীশপুর ও নয়াপাড়া এই তিনটি ইউনিয়নে রেল ও সড়ক পথ এমনকি চা বাগান বেষ্টিত হওয়া মাদকের স¤্রাজ্য গড়ে ওই এলাকা গুলোতেই। অভিযোগ রয়েছে, কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী স্থানীয় ইউপি সদস্যের পৃষ্টপোশকতায় মাদক ও চোরাচালানকারীরা হয়ে উঠেছে সর্বেসর্বা। এলাকায় বিচরন করে বুক ফুলিয়ে। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ট্রাক, প্রাইভেটকার, পিকআপ এমনকি মহিলা ও স্কুল কলেজ পাড়ুয়া শিশুকিশোর দ্বারা প্রেরন করা হয়ে থাকে। ২০০৮ সালে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান(র‌্যাব)’র সাথে ক্রস ফায়ারে নিহত হন মাদক স¤্রাট নয়াপাড়া ইউনিয়নের আব্দুল হাকিম। এর আগে তেলিয়াপাড়া ইউনিয়নের মাদক স¤্রাট আব্দুল সোবহান মাদক মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় নিহত হয়। তাদের উত্তসূরীরা মাদকের রাজ সিংহাসনে বসে দাপটের সাথে মাদকের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। গত ৪ঠা মে পুলিশের মহাপরিদর্শক ও র‌্যাবের ডিজি’র নির্দেশে মাদক নির্মূলে দেশব্যাপি সাঁড়াশি অভিযান অব্যহত থাকলেও মাধবপুরে নির্বিঘেœ চলছে মাদক ব্যবসা। প্রায় প্রতিদিন কোন কোন এলাকা থেকে মাদক মাদকসহ পাচারকারী ধরা পড়লেও মূল হোতা ও নিয়ন্ত্রনকারীরা থেকে যাচ্ছে অধরায় ! যেকোন মূল্যের বিনিমনেয় মামলার এজাহার থেকে বাদ দেওয়া হয় মূলহোতাদের নাম। সীমান্তবর্তি উপজেলা মাধবপুরের সর্বত্র হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় মাদক। মাদকের সহজ লভ্যতায় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে মাদকাসক্তির সংখ্যা। সন্তানদের নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছে অভিভাবকসহ সচেতন মহল। প্রায় ৩০কিঃমিঃ সীমান্ত এলাকার কাটাতার ভেদ করে পার্শ্ববর্তি ভারত থেকে ফেন্সিডিল, গাজাঁ, ইয়াবাসহ সকল প্রকাশ মাদকদ্রব্য মাধবপুরে প্রবেশ করে সড়ক ও রেল পথে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাচার করা হয়। মাদক ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রনে শতাধিক মাদকের স্পট ছাড়াও এখানে ভ্রাম্যমান মাদক বিক্রেতার সংখ্যা রয়েছে কয়েকশ। মাদক ব্যবসায়ীদের সংখ্যাবৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে উপজেলা ব্যাপি তাদের দাপটও বেড়েই চলেছে। গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্ভর কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী হাবিব ও তার পরিবারের লোকজন সোহাগ (৩৪) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে। উপজেলা ধর্মঘর থেকে বাঘাসুরা ১১টি ইউনিয়নের প্রত্যেকটি গ্রামেই রয়েছে মাদক বিক্রেতাদের সিন্ডিকেট ও স্পট। মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের পরিদর্শক খাইরুল আলম লোকবলের অভাবে বড় চালান আটক করা সম্ভব হয়না বলে স্বীকার করে তিনি জানান খুচরা বিক্রেতা ও সেবনকারীদের আটক করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা প্রদান করা হয়ে থাকে। সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার এস এম রাজু আহমেদ জানান- মাদক নির্মূলকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে মাদক রিরোধী সামাজিক সচেতনা বৃদ্ধি, মাদক উদ্ধার ও নিয়ন্ত্রনে আইনি পদক্ষেপ গ্রহন অব্যহত আছে। মাদক সংশ্লিষ্ট যেই হোক না কেন আইনের আওতায় আনা হবে। সচেতন মহল ও অভিভাবকবৃন্দ মনে করেন দেশ ব্যাপি মাদকের বিরুদ্ধে যে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখা হয়েছে সেই রুপ মাধবপুরে রাখতে না পারলে পুরো মাধবপুর মাদকের কালো থাবায় নিমজ্জিত হয়ে যাবে।


     এই বিভাগের আরো খবর