,

ফুলকলির খাদ্য সামগ্রী থেকে সাবধান!, লক্ষ লক্ষ টাকা জরিমানা দিয়েও থামছেনা ভেজাল পণ্য উৎপাদন

সময় ডেস্ক ॥ ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে একের পর এক জরিমানা দিয়ে যাচ্ছে। তবুও ভেজাল ও মানহীন পণ্য তৈরী থেমে নেই চট্টগ্রামের স্বনামধন্য খাদ্যপণ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ফুলকলি। আর এসব পণ্য খেয়ে সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে নানা রকম রোগে। ভেজাল রোধে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ রাখার জন্য সচেতন মহল জোর দাবি জানালেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন শুধু অভিযান চালিয়েই দায় এড়াচ্ছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আবছার প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক এম.এ সবুরের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। ব্যবস্থাপক এম.এ সবুরের কাছে জানতে চাইলে এ বিষয়ে তিনিও কোন কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করেন। তবে ভেজাল ও মানহীন খাদ্য পণ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ফুলকলির কারখানায় ভেজাল ও মানহীন কোন পণ্য তৈরী হয় না। স্বাস্থ্যসম্মত উন্নত উপকরণে ভোগ্যপণ্য তৈরী করা হয়ে থাকে। যদি তাই হয় তাহলে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে একের পর এক জরিমানা করার কারণ কি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি নীরব থাকেন। তবে আরেকটি পক্ষ এ বিষয়ে বলেন, ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান সরকারের রাজস্ব বাড়ানো একটি কৌশল। প্রশাসনের মাধ্যমে এটি সরকারের এক ধরণের চাঁদাবাজি। কিন্তু জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলছেন অন্য কথা। তিনি বলেন, ফুলকলি সম্পূর্ণ অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে খাদ্যপণ্য তৈরী করছে। নগরীর বাকলিয়া রাহাত্তারপূল ও বায়েজীদ কারখানায় যতবার অভিযান চালানো হয়েছে ততবার অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশ দেখেছে ভ্রাম্যমান আদালত। শুধু তাই নয়, ফুলকলির তৈরী ভোগ্যপণ্যে অত্যন্ত নিম্মমানের চাল, ডাল, চিনি, ময়দা ও ভেজাল ভোজ্যতেলসহ নানা খাদ্য উপকরণ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আবার স্বাদ ও ফ্লেভারের জন্য ব্যবহার করা হয় স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বিভিন্ন মেয়াদোত্তীর্ণ রাসায়নিক উপকরণ। যা খেলে মানবদেহের কিডনি, পিত্তাশয়, যকৃত, হৃদপিন্ড মারাত্বক জটিল রোগে আক্রান্ত হবে। ভেজাল ও মানহীন এসব পণ্য খাওয়া মানে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া। সূত্র জানায়, ফুলকলির কারখানায় সর্বশেষ গত ২২শে মে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালানো হয়। এ সময় ভেজাল ও মানহীন পঁচাবাসী খাবার তৈরী ও বিক্রীর দায়ে প্রতিষ্ঠানটিকে এক লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। সেই সাথে ভেজাল ও মানহীন পণ্য তৈরী ও পচা-বাসী খাবার বিক্রি বন্ধে কঠোরভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরপরও থেমে নেই ভেজাল ও মানহীন পণ্য তৈরী। এর আগে ২০১৭ সালেও নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ভেজাল ও নিম্মমানের খাদ্যপণ্য তৈরীর দায়ে ৪ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করে ভ্রাম্যমান আদালত। ২০১৬ সালেও একই অভিযোগে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করে র‌্যাব। এভাবে প্রতিবছর একের পর এক জরিামানা দিয়ে গেলেও ফুলকলির থেমে নেই অস্বাস্থ্যকর, নোংরা পরিবেশে ভেজাল ও মানহীন ভোগ্যপণ্য তৈরী।  বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১ শত ১০টি শাখা খুলে এসব পণ্য বিক্রী করছে ফুলকলি। ভেজাল ও নিম্মমানের এসব পণ্য বিক্রীর দায়ে শাখাগুলোকেও বারবার জরিমানা করেছে প্রশাসন। গত ২৩শে মে সিলেটের বন্দরবাজার শাখাকেও ভেজাল পণ্য বিক্রীর দায়ে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমান আদালত। সিলেট জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে সালিক রুমাইয়া অভিযানে নেতৃত্ব দেন। আলাপকালে বাকলিয়া রাহাত্তারপূল কারখানার একাধিক শ্রমিক জানান, ঈদ উপলক্ষে ফুলকলি এবার লাচ্ছা সেমাই তৈরী করেছে ব্যাপকভাবে। যাতে অত্যন্ত নিম্মানের চাল ও ময়দা ব্যবহার করা হয়েছে। ভেজাল ও পোড়া তেলে এসব সেমাই ভাজা হয়েছে। সুস্বাদুর জন্য এতে ব্যবহার করা হয়েছে এক ধরণের বন্যপ্রাণীর চর্বি। একইভাবে চর্বি ও রাসায়নিক ব্যবহার করে তৈরী করা হয় ফুলকলির নুডলস। এরমধ্যে মরা মুরগির মাংস ব্যবহার করে চিকেন নুডলস, পঁচা ডিম ব্যবহার করে এগ নুডলস তৈরী করা হয়েছে। এছাড়া ফুলকলিতে নানা রকম মিষ্টিও তৈরী করা হয়। যেখানে মানবদেহের শরীরের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। নিম্মামানের চিনি ও দুধের ফ্লেভারও ব্যবহার করা হয় এতে। নানা ধরণের বিস্কুট, কেক, পাউরুটি, টোস্ট বিস্কুটও তৈরী করা হয় সম্পূর্ণ অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে। শ্রমিকরা জানান, ভোগ্যপণ্যের অধিকাংশই নগরীর বাকলিয়া এলাকার রাহাত্তারপূল কারখানায় তৈরী করা হলেও তা বায়েজীদ এলাকার অত্যাধুনিক কারখানায় প্রস্তুত বলে প্রচার করে ফুলকলি। একইভাবে আইএসও সনদ লাভের নামে বিদেশেও রপ্তানীর কথা প্রচার করে। অথচ ভেজাল ও নিম্মমানের হওয়ায় বিদেশে ফুলকলির কোন পন্যই রপ্তানী হয় না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শ্রমিক জানান, কারখানায় চাল, আটা, ময়দাসহ ভোগ্যপণ্য তৈরীর সকল উপকরণ হাত ও পায়ে মাড়িয়ে তৈরী করা হয়। শ্রমিকদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কোন ব্যবস্থাও ফুলকলির নেই। শ্রমিকদের কেউ কেউ হাতের নখ কাটলেও অনেকেই নখে ময়লা নিয়ে কাজ করে। মাথার চুল খোলা, শরীরের ঘাম, নাকের লালা, পায়খানা-প্রস্তাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নেই বললেই চলে। যা দেখলে মানুষ জীবনেও এসব খাবার খাবে না।


     এই বিভাগের আরো খবর