,

যেখানে-সেখানেই আনমনা হয়ে ঘুরছে তারা, নবীগঞ্জে মানসিক ভারসাম্যহীন লোকদের সংখ্যা বৃদ্ধি

শাহ্ সুলতান আহমেদ ॥ যে ছেলে-মেয়ে পরিবারের হাল ধরার কথা ছিলো এবং বিভিন্ন কাজে কর্মে পিতা-মাতার পাশে থাকারও কথা। সেই ছেলে মেয়েরাই এখন মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে সমাজের কাছে পরিচিতি পাচ্ছে। যেখানে সেখানে আনমনা হয়ে ঘুরছে তারা। বেশ কিছু দিন যাবৎ দেখা যাচ্ছে, নবীগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন হাট বাজার ও গ্রাম্য এলাকায় মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক-যুবতীদের আনা-গোনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা এক সময় সমাজে বুদ্ধিমান ও বুদ্ধিমতী হিসেবে পরিচিতি পেলেও এখন মানসিক ও আনমনা হয়ে চলাফেরা করায় তাদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করছেন সমাজের সচেতন মহলসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজন। বর্তমানে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন বাজার ও গ্রাম্য এলাকায় ভারসাম্যহীন যুবক-যুবতীরা মনের সুখে চলাফেরা করে যাচ্ছেন। তারা এক সময় ছিলো পরিবারের ও সমাজের ভিত্তি। কিন্তু মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে চলাফেরা করায় তাদের এখন সমাজে আগের চেয়ে তেমন মূল্যায়ন নেই। কারণ তারা হিতাহিত জ্ঞানের অধিকারী নয়। গত এক সপ্তাহে নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন বাজার ও  গ্রাম এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে এমন দৃশ্য। হিসেব করে দেখা গেছে উপজেলার প্রায় ২০ থেকে ২৫ টি বাজারেই তাদের আনা-গোনা বেশী রয়েছে। এমনকি বিভিন্ন গ্রাম এলাকায় ও রয়েছেন অনেকই। বাজার এলাকায় যারা অবস্থান করছেন তারা বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে খাবার চেয়ে খাচ্ছেন, আবার কারো কাছ থেকে জোর করে খাবার ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে সারাদিন ব্যাপী বাজারের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরাফেরা করছেন মনের আনন্দে। গ্রাম এলাকায় যারা রয়েছেন, তারা অনেকে বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনদের দেখা-শোনার মধ্যে থাকলেও শুনছেন না তাদের কোন কথাই। যা পরিবার পরিজ্বনদের পথের কাটা হিসেবে রয়েছেন বললেই চলে। খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, যারাই আজ মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে সমাজে পরিচিতি নিচ্ছেন, তারা এক সময় পরিবার পরিজ্বনের কাছে খুব প্রিয় এবং অনেকেই শিক্ষিত লোক হিসেবে ছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডার গার্টেন স্কুল, কলেজ, মাদরাসাসহ বিভিন্ন স্কুলে লেখা-পড়া করেছিলেন। এমন কি মেধাবী হিসেবে ছিলো তাদের ব্যাপক পরিচিতি। তাদের এমন হবার বিষয়ে অনেকে এখন সমালোচনা করে বলছেন, হয়তো বা তারা কোন চাপের কারণে এমন অবস্থা হয়েছে। ইদানিং দেখা গেছে নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন বাজার ও গ্রাম এলাকায় মিলে প্রায় অর্ধশতাধিক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক-যুবতী রয়েছেন। তাদের মধ্যে বিশেষ করে আউশকান্দি বাজারে তিন জন, ইনাতগঞ্জ বাজারে দুইজন, পানিউমদা বাজারে দুইজন, কাজিগঞ্জ বাজারে একজন, বান্দের বাজারে একজন, নবীগঞ্জ বাজারে ছয় জন, ইমাবাড়ি বাজারে দুই জন, রসুলগঞ্জ বাজারে একজন, টুকের বাজারে একজন, গোপলার বাজারে দুই জন, রইছগঞ্জ বাজারে একজন। তাদের মতো বেশির ভাগই বিভিন্ন গ্রাম এলাকায় বসবাস করছেন। অনেককে পরিবারের লোকজন তাদের সাধ্যমতো বিভিন্ন ডাক্তার এবং কবিরাজের কাছে গিয়ে মাসের পর মাস টাকা খরচ করে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। এই সুযোগে এক শ্রেনীর নামেমাত্র চিকিৎসকদের দেখা যাচ্ছে, যারা তাদেরকে নিয়ে চিকিৎসার নামে ফাঁয়দা হাসিলে ব্যস্ত রয়েছেন। কিন্তু তাদের রোগ নিরাময়ের কোন পরিবর্তন হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। কেন তারা এমন হলেন? এনিয়ে অনেকে মন্তব্য করছেন। কেহ বলছেন জন্মগত ভাবে অনেকে মানসিক ভারসাম্যহীন হিসেবে পৃথিবীতে এসেছেন। আবার অনেকে জন্মের ১০/১৫ বছর পর মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে ঘুরাফেরা করছেন। মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবতীর অভিভাবক বলেন, তার মেয়ে জন্মের পর খুবই ভালো জ্ঞানের অধিকারী ছিলো। এমন কি লেখা পড়াতেও খুব ভাল ছাত্রী হিসেবে ছিল। কিন্তু জন্মের ১২ বছর পর সে হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হবার পরই এখন মানসিক ভারসাম্যহীন হিসেবে রয়েছে। শুধু তাই নয় তার মতো অনেকের জন্মের ১৫/২০ বছর পর মানসিক ভারসাম্যহীন হিসেবে সমাজে পরিচিতি লাভ করেছেন। তাদের সবারই সুত্রপাত হয়েছে সাধারণ রোগের সুত্র ধরেই। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত টিএইচও ডাঃ আব্দুস সামাদ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখন কোন লোকের ব্রেইনে বেশি চাপ পড়ে, তখন সে ভারসাম্যহীন হয়। এরই সুত্র ধরেই মানসিক রোগের সুত্রপাত হয়ে তাকে। তার মতে যখনই কোন লোকের এমন অবস্থার সৃষ্টি বা সুত্রপাত দেখা যাবে, তখনই তাকে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের কাছে নিয়ে চিকিৎসা করালে সে সুস্থ হবার সম্ভাবনা রয়েছে।


     এই বিভাগের আরো খবর