,

‘বড় ম্যাডামে আমরারে পরীক্ষার আগের দিন প্রশ্নপত্র দেখাইন’

নবীগঞ্জে এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ

প্রধান শিক্ষিকা ও সভাপতির বিরোধে বিদ্যালয়ের বারোটা!

মতিউর রহমান মুন্না: গ্রাম্য রাজনীতির চক্করে নবীগঞ্জ উপজেলার মুক্তাহার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্বক ভাবে ভেঙ্গে পড়ছে। প্রধান শিক্ষিকা ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দ্ব›েদ্বর কারণে ওই বিদ্যালয়ের পাঠদান ব্যহত হচ্ছে। প্রধান শিক্ষিকা সেলিনা বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে,  তার কাছে প্রাইভেট পড়ার সুবাধে মনোনিত শিক্ষার্থীদের মাঝে পরীক্ষার আগের দিন প্রশ্নপত্র ফাঁসের। এ ঘটনায় কয়েকজন ক্ষুব্ধ অভিভাবক স্বাক্ষর দিয়ে মহা-পরিচালক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অপর দিকে, সকল অভিযোগ অস্বীকার
করে শিক্ষিকা দাবী করছেন তিনি বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শৈলেন চন্দ্র দাশের কথামতো তার কাছে বিদ্যালয়ের নামে সরকারের বিভিন্ন বরাদ্দকৃত টাকা না দেওয়ায় এসব ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। সচেতন মহলের ভাষ্য, গ্রামের রাজনীতি থেকে প্রধান শিক্ষিকা ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এসব বিরোধের কারণে বিদ্যালয়ের বারোটা বাজছে। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার একটি অবহেলিত জনপদের নাম করগাঁও ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের মুক্তাহার গ্রামে রয়েছে ১৯৫৬ সালে স্থাপিত মুক্তাহার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ে প্রায় ৮ বছর ধরে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছেন সেলিনা বেগম। সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে, সেলিনা বেগম তার বিদ্যালয়ের নিকটবর্তী মুক্তাহার গ্রামের আব্দাল মিয়ার বাড়ির একটি কক্ষে তার বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে কোচিং সেন্টার পরিচালনা করে আসছেন। বিগত ৬ই আগষ্ট থেকে ১৪ই আগষ্ট পর্যন্ত দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। সরেজমিনে গেলে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, সেলিনা বেগমের কোচিং সেন্টারে যারা প্রাইভেট পড়ে তাদেরকে পরীক্ষার আগের দিন এবং পরীক্ষার দিন সকালেও প্রশ্ন পত্র দেখানো হয়। আর যারা কোচিংয়ে পড়ে নাই তাদেরকে ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন প্রধান শিক্ষিকা।
৫ম শ্রেণীর ছাত্র অনিক দাশ জানায়, ‘২য় সাময়িক পরীক্ষার সময় পরীক্ষার আগের দিন শেলিনা ম্যাডামে আমরারে প্রশ্ন দেখাইন, পরীক্ষার দিন সকালেও দেখাইন। আমরা পরীক্ষার খাতায় সবতা লেখছি।’
আরেক ছাত্র গৌতম দাশ জানায়, ‘পরীক্ষার আগের দিন সকালে ম্যাডামে প্রশ্ন কম দেখাইছন, বিকালে আর রাইত সব দেখাইছইন, আমরা দেইক্কা দেইক্কা সবতা খাতার মাঝে লেইক্কা আনছি। পরে সবতা মুখস্ত কইরা পরীক্ষায় লেখছি।’
এ ঘটনায় ৮জন অভিভাবক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য গত ১৬ই সেপ্টেম্বর ঢাকাস্থ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা পরিচালক ও নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট  লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এদিকে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মোছাঃ সেলিনা বেগম জানান, ‘তার মানসম্মান ক্ষুন্ন করতে এমন ঘটনা সাজিয়েছেন বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শৈলেন চন্দ্র দাশ। তিনি কোন কোচিং সেন্টার করেননি, তবে মাঝে মধ্যে তিনি পড়াতেন এবং প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা। গ্রামের মধ্যে বিরোধ আছে তারা শিক্ষার্থীদের শিখিয়ে দিয়েছে এমন কথা বলার জন্য।’
তিনি আরো বলেন, ‘তার বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শৈলেন চন্দ্র দাশের সাথে বিভিন্ন বিষয়াধি নিয়ে বিরোধ চলছে। কারণ সম্প্রতি ¯øীপ ও রুটিন মেন্টিনের ৪৮ হাজার টাকা বরাদ্ধ আসে। ওই টাকা সভাপতির কথামতো তার কাছে না দেওয়ায় এমন ষড়যন্ত্রে করা হচ্ছে। এরই জের নিয়ে সভাপতি তার মানসম্মান নষ্ট করতে আপ্রাণ চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। ’
শিক্ষিকার এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে শৈলেন চন্দ্র দাশের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে কয়েকজন অভিভাবক আমাকে জানায়, আমি বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছি, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে ঘটনা সত্য।’ তিনি আরো বলেন, ‘সরকারী বিভিন্ন বরাদ্দে প্রধান শিক্ষিকা জাল স্বাক্ষর দিয়ে ভূয়া কমিটি বানিয়ে মনগড়াভাবে কাজ করেন।’ ¯øীপের টাকা চাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘¯øীপের ও রুটিন মেনটিনের বরাদ্দকৃত টাকা ভ‚য়া বাউচার বানিয়ে শিক্ষা অফিসে জমা দিয়েছেন শিক্ষিকা সেলিনা বেগম। এইসব হিসাব চাওয়া হলে তিনি তা দিতে পারেননি।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ-বিন-হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, অভিযোগটি তদন্তের জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়ীত্বভার দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পঞ্চানন কুমার সানা বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তদন্তে দোষী প্রমানিত হলে প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ইতিপূর্বেও প্রধান শিক্ষিকা সেলিনা বেগমের বিরুদ্ধে ক্ষুদ্র মেরামত, ¯øীপের, প্রাক-প্রাথমিকের বরাদ্দকৃত টাকা, বিদ্যালয় প্রাঙ্গণের গাছ বিক্রি, জাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্পের প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা উত্তোলনসহ বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ এনে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শৈলেন চন্দ্র দাশ  সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করেন।


     এই বিভাগের আরো খবর