,

হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা শহরে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা

সময় ডেস্ক ॥ রাজধানী ঢাকার মতো দেশের বিভিন্ন জেলা শহরের হাসপাতালেও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বেশিরভাগ রোগী ঢাকায় জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কয়েকজন রোগীর ঢাকায় যাতায়াত না থাকা সত্ত্বেও আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে এসব এলাকার মানুষের মধ্যে ডেঙ্গু আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। এর মধ্যে ঢাকায় আক্রান্ত হয়ে ঝালকাঠির রাজাপুরের বাড়িতে ফিরে এক শিক্ষিকার মৃত্যু হয়েছে। এদিকে প্রতিদিন অনেক রোগী জ্বর নিয়ে হাসপাতালে গেলেও জেলা পর্যায়ের বেশিরভাগ সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্তের পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। ফলে বাইরের ক্লিনিক বা পাশের বড় শহরে গিয়ে অনেক বেশি টাকা খরচ করে ডেঙ্গুর পরীক্ষা করতে হচ্ছে তাদের।
রাজশাহী: রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে রবিবার পর্যন্ত ৪২ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ১৫ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ২৭ জন। তারা সবাই ঢাকায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। মনিরুল ইসলাম নামে হাসপাতালের এক ইন্টার্ন চিকিৎসকও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।
সিলেট: ডেঙ্গু রোগীর ক্রমবর্ধমান চাপ মোকাবেলায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আলাদা ডেঙ্গু কর্নার খোলা হয়েছে। হাসপাতালের পুরনো ভবনের নিচতলায় ২৭ নম্বর মেডিসিন পুরুষ বিভাগের ৮টি বেড দিয়ে এ কর্নার খোলা হয়েছে। সেখানে সাতজন চিকিৎসাধীন আছেন। তারা সবাই ঢাকায় আক্রান্ত হয়েছেন।
হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জে কলেজছাত্রসহ পাঁচজনকে ডেঙ্গুর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে দু’জনের অবস্থার অবনতি হওয়ায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রথীন্দ্র চন্দ্র দেব জানান, হবিগঞ্জের রোগীরা সবাই ঢাকাফেরত। হবিগঞ্জের কোথাও এখনও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যায়নি।
বগুড়া: বগুড়ায় শনিবার দুপুর ২টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘন্টায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরও ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। ওই হাসপাতালে বর্তমানে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৩৬। তারা সবাই ঢাকায় আক্রান্ত হয়েছেন। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আরিফুর রহমান তালুকদার জানান, গত ৪ জুলাই থেকে রবিবার পর্যন্ত মোট ৫৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৪ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছেন। ৬ জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
চাঁদপুর: চাঁদপুর সদর হাসপাতালে রবিবার পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত ৭৩ জন রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ২৩ জন। প্রতিদিন নতুন রোগী ভর্তি হওয়ায় এ সংখ্যা বাড়ছে। গত ৮ দিনেই চিকিৎসা নিয়েছেন ৪৬ জন রোগী। এখানে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের বেশিরভাগই ঢাকায় আক্রান্ত হয়েছেন।
মাগুরা: মাগুরা সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র আসিফ হোসেন। গত ২৫ জুলাই ঢাকায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি। পরে মাগুরায় বাড়িতে ফিরে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন।
জামালপুর: জামালপুরের কোনো সরকারি হাসপাতালেই ডেঙ্গু জ্বর শনাক্ত করার পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। এর মধ্যেই সদর হাসপাতালে এখন ১০ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তারা সবাই বাইরে পরীক্ষা করে এসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. প্রফুল্ল কুমার সাহা জানান, গত সপ্তাহে ১৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। তারা সবাই ঢাকায় আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর পরীক্ষার স্ট্রিপ না থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিপাকে পড়েছে।
ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালসহ জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। এজন্য জ্বরে আক্রান্তদের বাইরে থেকে অনেক বেশি টাকায় পরীক্ষা করতে হচ্ছে। গত ২২ দিনে ১০ জন ডেঙ্গু রোগী সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ছয়জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এখন চিকিৎসাধীন আছেন একজন।
মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারে রবিবার পর্যন্ত ৯ জন ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা নেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৮ জনই বিভিন্ন প্রয়োজনে ঢাকায় যাতায়াত করেছেন। তবে আব্দুর রহমান নামে মৌলভীবাজার পলিটেকনিকের এক ছাত্র গত দুই মাস ধরে এ জেলায়ই অবস্থান করছেন।
দিনাজপুর: দিনাজপুর আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন মোট আটজন। তাদের তিনজন সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গেছেন। তাদের সবাই ঢাকায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ জেলায়ও সরকারিভাবে ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের প্রয়োজনীয় উপকরণ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন রোগীরা। বেসরকারি ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিকে অনেক বেশি টাকায় এসব পরীক্ষা করতে হচ্ছে। হাসপাতালের পরিচালক আবু মো. খাইরুল কবির জানান, ডেঙ্গু পরীক্ষার প্রয়োজনীয় উপকরণ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বরগুনা: বরগুনায় এখন পর্যন্ত ১৪ জন ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ছয়জন এখনও হাসপাতালে ভর্তি আছেন। দু’জনকে বরিশালে পাঠানো হয়েছে। আক্রান্তদের ছয়জন সম্প্রতি ঢাকা থেকে বরগুনায় ফিরেছেন। বাকিরা বাড়িতে থেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে।
বাগেরহাট: বাগেরহাট হাসপাতালে এখন পর্যন্ত মোট চারজন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. জি কে এম সামসুজ্জামান। তাদের মধ্যে তিনজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। শিপন নামে একজন হাসপাতালে এখনও চিকিৎসাধীন।
মাদারীপুর: মাদারীপুরের সরকারি হাসপাতালগুলোতেও ডেঙ্গু শনাক্ত করার ব্যবস্থা নেই। বেসরকারি ক্লিনিক থেকে পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। গত ৫ জুলাই থেকে গতকাল পর্যন্ত সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩ জন। তার মধ্যে গত এক সপ্তাহেই ভর্তি হয়েছেন ১০ জন। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শশাঙ্ক চন্দ্র ঘোষ জানান, এসব রোগীর ১১ জনই ঢাকা আক্রান্ত হন। দু’জন এলাকায় থেকেই আক্রান্ত হয়েছেন। পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় আক্রান্ত সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসার ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
লালমনিরহাট: ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি আছেন দু’জন। তারা দু’জনই ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। সিভিল সার্জন আবুল কাশেম জানান, তারাই এ জেলায় প্রথম ডেঙ্গু রোগী। হাসপাতালে তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
নাটোর: প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাবে নাটোর সদর হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা যায়নি। তবে শহরের বেসরকারি সততা হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ১৫ জনের পরীক্ষা করে সাতজনের ডেঙ্গু পাওয়া গেছে। তারা সবাই ঢাকা থেকে নাটোরে এসেছেন। সিভিল সার্জন ডা. আজিজুল ইসলাম জানান, ডেঙ্গু পরীক্ষার উপকরণ সংগ্রহের জন্য ঢাকায় লোক পাঠানো হয়েছে।
টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলে রবিবার বিকেল পর্যন্ত জ্বর নিয়ে ২২ রোগী সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত সবাই ঢাকায় বাস করেন। বাড়িতে আসার পর পরীক্ষা করে ডেঙ্গু ধরা পড়ে।
সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় রবিবার পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯ জন। তারা সাতক্ষীরা সদর ও সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে সাতজন ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে সাতক্ষীরায় এসেছেন। দু’জন নিজের এলাকায় থেকেই আক্রান্ত হয়েছেন।
সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জে ডেঙ্গু আক্রান্ত চার রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। তারা সবাই ঢাকায় আক্রান্ত হয়ে সুনামগঞ্জে এসেছেন। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা ও ডেঙ্গু শনাক্তের ব্যবস্থা না থাকায় সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পরই এসব রোগীকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জে এক সপ্তাহে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ জনে। তাদের মধ্যে ১৬ জন সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আক্রান্তদের মধ্যে চারজন এলাকায় থেকে আক্রান্ত হয়েছেন। বাকিরা ঢাকা ও গাজীপুরে আক্রান্ত হয়ে মানিকগঞ্জে চিকিৎসা নিচ্ছেন। রবিবার বিশেষ ব্যবস্থায় মানিকগঞ্জ হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার রিয়েজেন্ট আনা হয়।
ঝালকাঠি: ঢাকায় বেড়াতে গিয়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে মারা গেছেন ঝালকাঠির রাজাপুরের স্কুলশিক্ষিকা নিগার সুলতানা (৩৫)। তিনি উপজেলার দক্ষিণ তারাবুনিয়া গ্রামের মৃত শাহজাহান হাওলাদারের মেয়ে।
বাজিতপুর (কিশোরগঞ্জ): বাজিতপুরে নতুন করে আরও পাঁচজন ডেঙ্গু রোগী জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ হাসপাতালে মোট ১৮ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। রবিবার একজনকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।


     এই বিভাগের আরো খবর