,

ট্রেন দূর্ঘটনায় ভেঙ্গে গেল কত সুখের সংসার

মতিউর রহমান মুন্না ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভয়াবহ ট্রেন দূর্ঘটনায় নিহত ১৭ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এর মধ্যে হবিগঞ্জের ৭ জন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ। নিহতরা হচ্ছেন হবিগঞ্জ শহরতলীর বড় বহুলা গ্রামের আলমগীর আলমের ছেলে ইয়াছিন আলম, আনোয়ারপুর এলাকার বাসিন্দা জেলা ছাত্রদল সহ-সভাপতি আলী মোহাম্মদ ইউসুফ, বানিয়াচং উপজেলার তাম্বুলিটুলা গ্রামের সোহেল মিয়ার আড়াই বছরের মেয়ে আদিবা আক্তার সোহা, একই উপজেলার মদনমুরত গ্রামের আল-আমিন, চুনারুঘাট উপজেলার উবাহাটা গ্রামের পশ্চিম তালুকদারবাড়ির ফটিক মিয়া তালুকদারের ছেলে রুবেল মিয়া তালুকদার (২৫), একই উপজেলার মিরাশী ইউনিয়নের পাকুড়িয়া গ্রামের আবুল হাসিম মিয়ার ছেলে সুজন মিয়া (৩০), একই উপজেলার আহমদাবাদ গ্রামের পেয়ারা বেগম (৬৫), নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের ইসলামপুরের হারুন মিয়ার পুত্র নজরুল ইলাম (২০)। নিহত আল-আমিনের চাচা বানিয়াচংয়ের বড়ইউড়ি ইউপির সাবেক মেম্বার কুতুব উদ্দিন জানান, আল-আমিন চট্টগ্রামে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। ১৯ দিন পূর্বে তার এক ছেলের জন্ম হয়। ছেলের নাম রাখতে তিনি সম্প্রতি বাড়িতে আসেন। একমাত্র ছেলের নাম রাখেন ইয়ামিন। তার আরও দুটি রনিহা (৬) ও নুছরা (৮) নামে দুটি মেয়ে রয়েছে। তিনি জানান, ছেলের নাম রেখে চাচা মনু মিয়া ও ফুফাতো ভাই শামীমকে নিয়ে সোমবার রাতে উদয়ন ট্রেনে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওয়ানা হন আল-আমিন। রেল দূর্ঘটনায় তিনি মারা যান। অপর দুইজন মনু মিয়া ও শামীম গুরুতর আহত হন। নিহত আল-আমিনের কোনো ভাই-বোন নেই। অনেক আগেই মারা গেছেন মা-বাবাও। বানিয়াচং উপজেলার তাম্বুলিটুলা গ্রামের সোহেল মিয়া জানান, তিনি ও তার স্ত্রী নাজমা বেগম চট্টগ্রামের একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। গত বৃহস্পতিবার তারা বাড়ি আসেন। সোমবার স্ত্রী ও ২ সন্তানকে নিয়ে কর্মস্থলের উদ্দেশে রওয়ানা হন। পথে ট্রেন দূর্ঘটনায় আড়াই বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে আদিবা আক্তার সোহা মারা যায়। আহত হন তিনি, তার স্ত্রী ও সাড়ে ৪ বছর বয়সী ছেলে নাছির। তারা এখন ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেয়ের মৃত্যুতে নির্বাক হয়ে পড়েছেন নিহত সোহার মা-বাবা। হবিগঞ্জ শহরের আনোয়ারপুর গ্রামের আবদুল আহাদ জানান, তার চাচাতো ভাই আলী মোহাম্মদ ইউসুফ বৃন্দাবন সরকারি কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করে স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনে অধ্য হিসেবে কমর্রত ছিলেন। তার স্ত্রী চিশতিয়া বেগম চট্টগ্রামে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কমর্রত। স্ত্রী ও দেড় বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে ইশা আক্তারকে বাড়িতে আনার উদ্দেশে চট্টগ্রামে যাচ্ছিলেন। ট্রেন দুর্ঘটনায় তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রুবেল আহমেদ চৌধুরী জানান, নিহত আলী মোহাম্মদ ইউসুফ জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি চার ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয়। তার বাবা মারা গেছেন ২০১১ সালে। আর বড় ভাই উসমান গণি ২০১৭ সালে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এখন ইউসুফই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। ট্রেন দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন শহরতলীর বড়বহুলা গ্রামের আলমগীর আলমের ছেলে ইয়াছিন আলম (১১)। সে বাবার সঙ্গে চট্টগ্রামে যাচ্ছিল সাগর ও দর্শনীয় স্থান দেখতে। আহত হন তার বাবা পৌর আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীর আলম। নিহত ইয়াছিন স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। সে স্টুডেন্ট কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্য ছিল। ছেলেকে হারিয়ে তার মা হাসিনা আক্তার বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন চুনারুঘাট উপজেলার উবাহাটা গ্রামের রুবেল মিয়া তালুকদার। বন্ধুদের নিয়ে কক্সবাজারে বেড়ানোর উদ্দেশে যাচ্ছিল ওই গ্রামের পশ্চিম তালুকার বাড়ির ফটিক মিয়া তালুকদারের ছেলে রুবেল। সে স্থানীয় শানখলা মাদ্রাসার দাখিল শ্রেণির ছাত্র। ট্রেন দূর্ঘটনায় তার মৃত্যুর খবর পেয়ে পরিবারসহ পুরো গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। একই উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের সুজন মিয়া চাকরির ইন্টারভিউ দিতে চট্টগ্রামে যাচ্ছিলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেন দূর্ঘটনায় তিনি মারা যান। নিহত সুজন হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজে অনার্সের ছাত্র। পাশাপাশি তিনি হবিগঞ্জ আদালতে মোহরার হিসেবে কাজ করতেন। তিনি ওই গ্রামের আবুল হাসিম মিয়ার ছেলে। ৪ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। চুনারুঘাট উপজেলার আহমদাবাদ ইউনিয়নের ছয়শ্রী গ্রামের আব্দুস সালামের স্ত্রী পেয়ারা বেগম সোমবার রাতে পিত্রালয়ে যাচ্ছিলেন। একাই তিনি বাড়ি থেকে রওয়ানা হন। পথে উদয়ন ট্রেন দূর্ঘটনায় তিনি মারা যান। তার ৪ সন্তান রয়েছে। খবর পেয়ে সকালে তার স্বামী আবদুস সালাম লাশ আনতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যান। এ বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন চুনারুঘাট উপজেলার আহমদাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত চৌধুরী। এদিকে, নবীগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের নিখোঁজ মাদ্রাসা ছাত্র ভবঘুরে নজরুল ইসলাম (২০) দীর্ঘ দুই মাস পরে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরছে। মায়ের জন্য নয়া কাপড়ের পরিবর্তে নিজেই সাদা নয়া কাপড় পড়ে বাড়ি ফিরছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় যাত্রীবাহী দুই ট্রেনের মধ্যে মুখোঁমুখি সংঘর্ষে নিহত ১৬ জনের মধ্যে মাদ্রাসা ছাত্র ভবঘুরে নজরুলের  লাশ ও পরিচয় পাওয়া গেছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ তার মা বাবাকে মোবাইলে নজরুলের নিহত হবার কথা জানান।


     এই বিভাগের আরো খবর