,

নবীগঞ্জে বরাক নদীর উপর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে মাপজোক নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

মতিউর রহমান মুন্না ॥ নবীগঞ্জ শহরতলীর শাখা-বরাক নদীতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ নিয়ে শহরজুড়ে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। সূত্রে জানা গেছে, মাপজোক শেষ করে অবৈধ দখলদারদের তালিকা প্রকাশ করেই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষনা দিয়ে এই ‘শাখা বরাক নদীর জায়গা’ উদ্ধারে অভিযান শুরু হয়েছে। প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তা স্পষ্ট করে বলেছেন ‘যারা আপত্তি করেছেন, তারা আবেদন করেছিলেন। এরই প্রেক্ষিতে ফের জরিপ করা হয়েছে। আবেদন নিস্পত্তির পরই উচ্ছেদের তারিখ নির্ধারণ করা হয়।’ কিন্তু ইতিপূর্বে লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করা কয়েকটি স্থাপনা এখন আবার নতুন করে মাপজোক চলছে। এমনকি লাল রং দিয়ে দেয়া সংকেত মুছে ফেলার কারনে রহস্যর সৃষ্টি, অভিযানে অংশ নেয়া সংশ্লিষ্ট সার্ভেয়ারদের প্রতি। অপরদিকে মাপজোকে নিয়োজিত সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে অর্থ-বানিজ্যের গুঞ্জন উঠেছে। এনিয়ে পরিবেশ বাদী ও স্থানীয়দের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ। স্থানীয় লোকজন ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সারাদেশের ন্যায় নবীগঞ্জে প্রায় ২০ কিঃ মিঃ জুড়ে শাখা বরাক নদীর খনন কাজকে সামনে রেখে নদী ও খালে অবস্থানরত অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযানের সিদ্ধান্ত হয়। এরই প্রেক্ষিতে উচ্ছেদ অভিযানের পূর্বে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর সার্ভেয়ার, নবীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর সার্ভেয়ার এবং নবীগঞ্জ পৌরসভার সার্ভেয়ার মিলে মাপজোক করে লাল দাগ দিয়ে চিহ্নিত করেন ‘অবৈধভাবে দখলকৃত’ স্থাপনা গুলো। ফলে তালিকা প্রণয়ন ও উচ্ছেদের তালিকা প্রকাশ করা হয় হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কর্তৃক এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে। তালিকা অনুযায়ী শাখা-বরাক নদীতে নির্মাণকৃত ১শ ১টি বাড়ি-দোকান পাটসহ অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। নবীগঞ্জ উপজেলার হাট নবীগঞ্জ, শিবপাশা ও রিফাতপুর মৌজায় অন্তর্গত শাখা বরাক নদীর তীরবর্তী চরগাঁও ব্রীজ হতে রিফাতপুর, বরাকনগর এলাকায় অবৈধ বসবাসকারীরা শাখা বরাক নদীর ভূমিতে অবৈধভাবে গড়ে উঠা বসত বাড়ী/দোকানভিটি নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ওই তালিকা নিয়ে গত মঙ্গলবার শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান। চরগাওঁ ব্রীজের মুখ থেকে শুরু হয় ওই অভিযান। শুরুতেই পৌরসভার ৬টি পাকা ঘর (সবজির দোকান), অনেকের বহুতল ভবনের অংশ বিশেষ ভেঙ্গে ফেলা হয়। গতকাল বুধবার দ্বিতীয় দিনের অভিযানে চরগাঁও ব্রীজ থেকে চারু বাবু’র ব্রীজ পর্যন্ত অবৈধভাবে গড়ে উঠা বসত বাড়ী/দোকানভিট গুলি উচ্ছেদ করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সার্ভেয়ার তুহিন রেজা, জেলা প্রশাসক অফিসের সার্ভেয়ার মোঃ শাহীন আলম ও নবীগঞ্জ পৌরসভার সার্ভেয়ার সোহাগ হোসেন পুণঃরায় মাপ জোকে সৃষ্টি করেছেন নাঠকীয়তার। এ ঘটনায় শহর জুড়ে চলছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়। এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে- মাপজোকের সময় বিলাশবহুল একটি মার্কেটকে আওতায়ই আনেননি সার্ভেয়ারা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন সার্ভেয়ারদের বিরুদ্ধে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগের গুঞ্জণটি খুবই দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। যেহেতু মাপজোক নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনা উঠেছে সেজন্য দ্রুত ডিজিটাল ম্যাপের মাধ্যমে মাপজোক করার জোর দাবী জানাচ্ছি।
গতকাল বুধবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন হবিগঞ্জ জেলার সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও অভিযানের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লুসি কান্ত হাজং। সহযোগিতা করেন নবীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমাইয়া মমিন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিনহাজ আহমেদ শোভনসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও নবীগঞ্জ থানার একদল পুলিশ। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এমএল সৈকত বলেন, নবীগঞ্জ পৌরসভা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩ প্রতিষ্ঠানের সার্ভেয়ারের সমন্বয়ে মাপজোক হয়। সার্ভেয়ারদের উৎকোচ গ্রহন এবং মাপজোকে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে বাণিজ্যের কোন সুযোগ নেই।
নবীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমাইয়া মমিন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আজ বৃহস্পতিবার উচ্ছেদ অভিযান হচ্ছে না। তিনি জরুরী কাজে ঢাকায় থাকবেন, আগামী রবিবার থেকে আবারো অভিযান চলবে। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার পাল জানান, আজ খোয়াই নদীতে উচ্ছেদ অভিযান চলবে তাই আজ নবীগঞ্জে উচ্ছেদ অভিযান সাময়িক ভাবে স্থগিত থাকবে।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, অবৈধভাবে নদী দখল উচ্ছেদ অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটি অব্যাহত থাকবে। মাপজোকে সার্ভেয়াররা অনিয়ম দুর্নীতি করেছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবৈধ স্থাপনা মাপজোকের সময় যারা আপত্তি করে লিখিত আবেদন করেছেন তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে পুনরায় অনেক জায়গায় আবার মাপজোক করা হয়েছে। এতে কোনো অনিয়ম হয়নি। প্রয়োজনে পুনরায় মাপজোক করা হবে। সরকারের ইঞ্চি পরিমান জায়গা ছাড় দেয়া হবেনা।


     এই বিভাগের আরো খবর