,

সুদ থেকে বাঁচুন

সুদভিত্তিক পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা প্রায় বিগত একশত বছরে সম্রাজ্যবাদের ছত্রছায়ায় শুধু ইসলাম আর মুসলমানদের; বরং পৃথিবীর মানব সন্তানের ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে প্রায় শতকরা আশি ভাগ আদম সন্তানকে স্বাস্থ্য মেধা চরিত্র-আখলাক ও কৃষ্টি-কালচারের দিক থেকে ধ্বংসের প্রান্তে নিয়ে গেছে। আল্লাহ সুদকে হারাম করেছেন। কেননা, সুদ এমন একটি গুনাহ, যা মানুষের অর্থনৈতিক জীবনে চরম বৈষম্যের সৃষ্টি করে। সুদী ব্যবস্থায় ধনী আরো ধনী হিয়, গরীব আরো অধিক অসহায়ে পরিণত হয়। সুদ আজ যেভাবে বিশ্বব্যাপী তার আগ্রাসী থাবা বিস্তার করে রেখেছে; যবান ব্যবহার করেও তার বর্ণনা শেষ করা যাবে না; এমনকি কলমের কালি দিয়েও তা থেকে বিশ্ব মানবতাকে উদ্বার করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো মুসলমান সুদী কারবারে জড়িত হতে পারে না। কারণ, এতে কোনো কল্যাণ নেই এবং এতে কোনো শান্তি নেই। সুদের ধন বিলীন হয়ে যায় এবং এতে বরকত হয় না; বরং মূলধনও নষ্ট হয়ে যায়। যেমন, হাদীসে রয়েছে, সুদের মাল যতই বর্ধিত হোক, ওর পরিণতি দরিদ্র। যে কারবারে সুদী লেনদেন থাকবে, ওটা বরকত শুন্য হবে। যেমন, কুরআনে কারীমে রয়েছে- “আল্লাহ তা’আলা সুদকে বিলীন করেন এবং দান-খয়রাতকে বর্ধিত করেন। আর আল্লাহ কোনো অকৃতজ্ঞ পাপীকে পছন্দ করেন না।” [সূরা বাকারা: ২৭৬] সুদের ভয়াবহ অবস্থা জানার পর, যারা তাতে জড়িত হবে, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন ধমকি ও ভয়াবহ শাস্তি। যে শাস্তির চেয়ে ভয়ানক ও বেশি, মানুষের জন্য আর কোনো শাস্তি হতে পারে না। সুদ জানার পর যারা সুদী লেনদেন ছাড়েনি, তাদের জন্য রয়েছে চিরকাল জাহান্নামে থাকার দুঃসংবাদ। যেমন, কুরআনে কারীমে রয়েছে- “অতএব যার নিকট তার প্রভুর পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে সুদ থেকে বিরত হয়ে গিয়েছে, তো অতীতে যা নেয়া হয়েছে তা তারই। আর তার পরকালীন ব্যাপার আল্লাহর কাছে ন্যস্ত। এরপর পুনরায় যারা তা করবে, ওরা জাহান্নামী; ওরা তাতে চিরকাল থাকবে।” [সূরা বাকারা: ২৭৫] উক্ত আয়াতটি থেকে আমাদের কাছে একথা পরিস্কার হল, কোনো কারবার সম্পর্কে স্পষ্ট সুদী কারবার জানার পর কোনো মুসলমান ওই কারবারে জড়িত হলে, তাকে চিরকাল জাহান্নামের আগুনে জলতে হবে। আয়াতটির ব্যাখ্যা নবী করীম (সাঃ)-এর কিছু হাদীস দ্বারা আরো স্পষ্ট হয়। যেমন, হাদীসে রয়েছে- নবী করীম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, “যে দেহের গোশত হারাম মালে গঠিত, তা বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না। হারাম মালে গঠিত দেহের জন্য দোযখই সমীচীন।” [মুসনাদে আহমাদ: হাদীস নং-১৪৪৪১] অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে- “নবী করীম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, যেই দেহ হারাম দ্বারা প্রতিপালিত, তা বেহেশতে প্রবেশ করবে না।” [আল-মু’জামুল আওসাত লিত-তাবরানী: হাদীস নং- ৫৯৬১] আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সুদী কারবারীদের সাথে যুদ্ধের ঘোষণা করেছেন। কাজেই যে সুদের বিরুদ্ধে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন, তা কোনো জাতির জন্য পৃথিবীর কোনো অঞ্চলে কোনো প্রকার কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। সুদী অর্থব্যবস্থার ভয়াবহতার ব্যাপারে কুরআনে কারীমে যেমন বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে; নবীজীর অসংখ্য হাদীস থেকেও এমন অনেক হাদীস রয়েছে, যেগুলোতে সুদের অনিষ্টতা ও করুণ পরিণতির কথা স্পষ্ট করা হয়েছে। সুদ সম্পর্কিত হাদীসগুলো নিয়ে গবেষণা করা হলে একথা পরিস্কার হয় যে, সুদের কঠিন থাবার কবলে আমরা নিপতিত। কেননা, নবীজী (সাঃ) ভবিষ্যতবাণী করেছেন- একটা সময় এমন আসবে; মানুষ হালাল-হারামের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ করবে না। যেমন, হাদীসে বর্ণিত হয়েছে- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, “মানুষের সম্মুখে এমন এক যুগ আসবে। কেউই পরোয়া করবে না যে, কী উপায়ে তারা মাল উপার্জন করল; হারাম উপায়ে নাকি হালাল উপায়ে।” [বুখারী: হাদীস নং-২০৫৯] অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, “সুদের গুনাহের সত্তরটি অংশ রয়েছে। এর ক্ষুদ্রতম অংশ হল, কোনো ব্যক্তি নিজ মায়ের সঙ্গে সঙ্গম করা।” [ইবনে মাজাহ: হাদীস নং-২২৭৪] অন্য এক হাদীসে রয়েছে- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, “মে’রাজের রাতে আমাকে এমন এক শ্রেণীর লোকের কাছে নেয়া হল, যাদের পেট ঘরের ন্যায় বড়। এর ভিতরে বহু সাপ রয়েছে, যা তাদের পেটের বাহির থেকে দেখা যায়। (আমার সঙ্গীকে) আমি জিজ্ঞাসা করলাম; হে জিবরাঈল! ওরা কারা? তিনি বললেন, ওরা সুদখোর। [মুসনাদে আহমাদ: হাদীস নং-৮৭৫৭] হাদীসগুলোতে সুদ সম্পর্কে কত কঠিন থেকে কঠিনতর অপরাধ ও শাস্তির কথা বলা হয়েছে; তবে অন্য কোনো অপরাধের ক্ষেত্রে এত বলা হয়নি। সবচে’ ভয়ানক ও অপমানজনক হল, নিজ মায়ের সাথে সঙ্গম করার তুলনা করা। আবার বলা হয়েছে যে, সুদখোরেরা দুনিয়াতে সুদ খেয়ে খেয়ে পেট মোটা করছে বা আরামবোধ করছে, পরকালে কিন্তু সেই পেটকে আরো বড় করে সেখানে সাপের অবস্থান বানানো হবে। আর ওগুলো তাকে কষ্ট দিতে থাকবে অনাদি কাল পর্যন্ত। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে সুদ থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন! আমীন

লেখাক : মাওলানা নাঈম আহমদ ১০ নং দেবপাড়া (৮ নং-ওয়ার্ড), নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ।


     এই বিভাগের আরো খবর