,

অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন নিরাপদ কার্যকর

সময় ডেস্ক ॥ করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর হিসেবে প্রথম ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে স্বীকৃতি পেয়েছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন। ভ্যাকসিনটি নিরাপদ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সক্ষম বলে প্রমাণিত হয়েছে। ফলাফলে দেখা গেছে, পরীক্ষার ৫৬ দিন পর্যন্ত শক্তিশালী অ্যান্টিবডি উৎপাদন ও টি-সেল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলেছে। দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার পর এ ফল আরও বেশি হতে পারে। গতকাল আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেটে ভ্যাকসিনটির প্রথম ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তবে দ্বিতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফল প্রকাশের পরই এটি বাজারজাত করা হবে। বিবিসি বলছে, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির তৈরি ভ্যাকসিনটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল প্রকাশ করে বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ৭৭ জনের ওপর ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হয়। ইনজেকশনের মাধ্যমে ভ্যাকসিনটি মানবদেহে প্রয়োগ করা হয়। তাতে দেখা গেছে, ভ্যাকসিনটি নতুন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উপযুক্ত করে তুলতে সহায়তা করে। একই সঙ্গে তৈরি করে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি ও শ্বেত রক্তকণিকা, যা নতুন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম। সংশ্লিষ্ট গবেষকরা বলছেন, প্রাথমিকভাবে যে ফলাফল পাওয়া গেছে, তার ভিত্তিতে বলা যায় যে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটির সম্ভাবনা অনেক বেশি। জানা যায়, একই ধরনের ভাইরাসের ক্ষেত্রে আগে যে ওষুধ কার্যকর হয়েছিল, তার ওপর ভিত্তি করেই অক্সফোর্ডের গবেষকরা অধ্যাপক সারাহ গিলবার্টের নেতৃত্বে ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শুরু করেন। ভ্যাকসিনটির নাম দেয়া হয়েছে এজেডডি ১২২২। এজেডডি ১২২২ নামের ভ্যাকসিনটি তৈরির পেছনে মূল কাজ করেছে ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। ব্রিটেন-সুইডিশ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা ফার্মাসিউটিক্যাল পার্টনার হিসেবে এ ভ্যাকসিন উৎপাদন ও বণ্টনের কাজ করছে। বিশ্ববাসী যেন খুব দ্রুতই এ ভ্যাকসিন পেতে পারে এজন্য ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মধ্যেই ভ্যাকসিনের উৎপাদন শুরু করেছে অ্যাস্ট্রাজেনকা। খুব তাড়াতাড়ি ২০০ কোটি ডোজ করোনার ভ্যাকসিন উৎপাদন ও বণ্টন করতে যাচ্ছে কোম্পানি। এর মধ্যে ৪০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন বরাদ্দ থাকছে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের জন্য। আর নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর জন্য থাকছে ১০০ কোটি ডোজ। প্রথমে পাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন। এরপর নতুন বছরের শুরুতেই বিশ্বব্যাপী বণ্টন করা হবে এ ভ্যাকসিন। অ্যাস্ট্রজেনেকার সিইও প্যাসক্যাল সোরিয়েট বলেন, নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর মধ্যে ১০০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন বণ্টনের জন্য এরই মধ্যে ভারতীয় কোম্পানি সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে। এর উৎপাদন হবে ব্রাজিলেও। বছরের শেষ দিকে ৪০ কোটি ডোজ হস্তান্তর করা হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এ ভ্যাকসিনের দাম হাতের নাগালের মধ্যেই রাখা হবে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলছে, তারা কয়েক’শ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন তৈরি করতে যাচ্ছে। আর প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনের দাম রাখা হতে পারে এক কাপ কফির দামের সমান।
বাংলাদেশ করোনা ভ্যাকসিন বিনামূল্যেই পাবে : বিশ্বে করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলে সবার আগে তা বাংলাদেশে আসবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান। সচিব বলেন, যুক্তরাজ্য, চীনসহ অনেক দেশই ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দ্বার প্রান্তে রয়েছে। তথ্যমতে, বিশ্বের যেসব দেশের মাথাপিছু আয় ৪ হাজার ডলারের নিচে, সে সব দেশ এ ভ্যাকসিন বিনামূল্যে পাবে। যেহেতু বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২ হাজার মার্কিন ডলারের কাছাকাছি, সুতরাং বাংলাদেশ এ ভ্যাকসিন বিনামূল্যেই পেয়ে যাবে। গতকাল সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনলাইনভিত্তিক মিটিং প্ল্যাটফরম ‘জুম’-এর মাধ্যমে ‘জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি’র এক বিশেষ সভায় সভাপতির বক্তব্যে সচিব এসব কথা বলেন। অনলাইন সভায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) শেখ মুজিবর রহমানসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভার কার্যক্রম সঞ্চালনের দায়িত্বে ছিলেন জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ।


     এই বিভাগের আরো খবর