,

মা ও বোনের বর্ণনা: সেই রাতে তিন্নীর সঙ্গে যা ঘটে

সময় ডেস্ক ॥ বোনের সাবেক স্বামীর হাতে লাঞ্চিত হওয়ার পর পরিবারের সাথে শেষ কথা ছিল, ‘বাইরের লোক কেন আসবে আমার রুমে। আমারতো সব শেষ, বেঁচে থেকে লাভ কী’ এরপর রাত ১২টার দিকে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় নিজ বাড়ি থেকে ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সদ্য স্নাতোকোত্তর শেষ করা উলফাত আরা তিন্নীর। ওই রাতে আসলে কী ঘটেছিল এই তিন্নীর সঙ্গে, তারই বর্ণনা উঠে এসেছে তার মা ও বোনের কথায়। গতকাল শনিবার সেসব কথা জানিয়েছেন তারা। তিন্নীর মা হালিমা বেগম বলেন, গত বৃহম্পতিবার তিন্নী বান্ধবীর বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কুষ্টিয়া গিয়েছিল। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফেরে রাত আনুমানিক ৮টার দিকে। তিনি জানান, রাত ৮টা বা তার কিছু পর কোনও এক সময় তার মেজো মেয়ের তালাকপ্রাপ্ত স্বামী একই গ্রামের কনুর উদ্দিনের ছেলে জামিরুল গোপনে তিন্নীর রুমে খাটের নিচে মিন্নীকে তুলে নিতে ওঁৎ পেতে থাকে। তিন্নী বাইরে থেকে এসে পোশাক বদলে অন্য পোশাক পরার পর বাসার নিচ তলায় তার সাথে দেখা করে একটু বসে। এরপর সে রুমে ঘুমাতে যায়। তিন্নীর মা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, এরপর তিন্নী বুঝতে পারে তার খাটের নিচে কেউ লুকিয়ে আছে। খাটের নিচ থেকে বের হয়ে এক পর্যায়ে তিন্নীকে জাপটে ধরে জামিরুল। শুরু হয় ধস্তাধস্তি, এ সময় চিৎকার দেয় তিন্নী। তিনি বলেন, আমরা তখন বুঝতে পারি বাসার চারপাশে জামিরুলের অনেক সহযোগী অপেক্ষা করছে। তারা আমাদের বলতে থাকে কোনও রকম হৈচৈ করবি না। আজ সবাইকে মেরে ফেলবো। এর পরের ঘটনা বর্ণনা দিয়ে তিন্নীর মেজো বোন মিন্নী বলেন, এরপর বোনের চিৎকারে তিনি ছুটে যান তিন্নীর রুমের সামনে। রুম ছিল ভেতর থেকে আটকানো। তিনি বলেন, আমি অনেক চেষ্টা করে দরজার লক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেই দেখি সাবেক স্বামী জামিরুল; তখনো তারা ধস্তাধাস্তি করছে। বাধা দিতে গেলে সে আমাকে মারতে আসলে আমি প্রাণ ভয়ে অন্য রুমে গিয়ে আত্মরক্ষা করি। এরপর অনেক সময় চলে তিন্নীর রুমে তাণ্ডব। পরে রুম থেকে বের হয়ে আমাকে ও আমার মাকে খুঁজতে থাকে সে। এক পর্যায়ে প্রতিবেশীদের উপস্থিতি টের পেয়ে জামিরুল রাত ১১টার দিকে পালিয়ে যায়। মা হালিমা বেগম জানান, জামিরুল বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর তিন্নী নিচে নেমে তার রুমে প্রবেশ করে। আমাকে সে প্রশ্ন করে ‘বাইরের লোক কেন আমার রুমে প্রবেশ করল মা? আমার তো সব শেষ! আমার আর বেঁচে থেকে লাভ কি!’ এই বলে সে নিজ রুমে চলে যায়। এরপর পর রাত আনুমানিক ১২টার দিকে তারা টের পান তিন্নী রুমে ফ্যানের সাথে ঝুলছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিন্নীর বোন মিন্নী জানান, যখন জামিরুল তার স্বামী ছিল তখন বাবার বাড়ি এসে তারা তিন্নীর রুমে রাত্রিযাপন করত। সে ভেবেছিল আমি এখনো এ রুমে বসবাস করি। আমাকে তুলে নিতে বা মেরে ফেলতে সে এ রুমে লুকিয়ে ছিল। তালাকের পর থেকে সে বিশ্বাস করেনি আমার আবার বিয়ে হয়েছে। সে আমাকে ফিরিয়ে নিতে চেষ্টা চালাতে থাকে। আমার কাছ থেকে মেয়েকে সে জোর করে তার কাছে নিয়ে যায়। এ নিয়ে কয়েকবার তিন্নীর সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়েছিল।
পরিবারের হালধরতে চেয়েছিলেন তিন্নী: তিন্নীদের কোনও ভাই না থাকায় চাকরি পেয়ে পরিবারের হাল ধরতে চেয়েছিলেন তিন্নী। কাঁদতে কাঁদতে তিন্নীর মা বলেন, আমি আর কী নিয়ে থাকব। অনেক চেষ্টা করেছি তাকে বিয়ে দিতে। কিন্তু সে কোনো সময় রাজি হয়নি। শুধু বলতো মা দোয়া করো আমি চাকরি পেয়ে সংসারের যেন হাল ধরতে পারি। ঝিনাইদহের শৈলকুপার শেখপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মৃত ইউসুফ আলীর মেয়ে ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ছিলেন তিন্নী। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। তিন্নীর স্বজনদের অভিযোগ, রাতে তার বোনের সাবেক স্বামী শেখ পাড়া গ্রামের কুনুরুদ্দীনের ছেলে ও তার তিন সহযোগী জোর করে তিন্নীদের বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। এ সময় তিন্নীর শোবার ঘরে ঢুকে তার শ্লীলতাহানি করায় সঙ্গে সঙ্গে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তিনি। এ ঘটনার পর থেকেই পলাতক জামিরুল।


     এই বিভাগের আরো খবর