,

গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষে চুনারুঘাটের কৃষকদের সফলতা

নিজস্ব প্রতিনিধি ॥ গ্রামীণ মেঠোপথ দিয়ে এগোতেই হঠাৎ চোখে পড়ে সবুজের সমারোহ। সেখানে একপা দুপা করে হেঁটে গেলে দেখা মিলে সারি সারি টমেটোর ক্ষেত। লাল-সবুজ রঙের টমেটো এখন সেখানকার কৃষকদের স্বপ্ন। গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটোর চাষাবাদ করে লাভবান হচ্ছেন চুনারুঘাট উপজেলার কৃষকরা। বন বেগুন গাছের সঙ্গে বারি টমেটো-৮ জাতের চারার গ্রাফটিং পদ্ধতি অবলম্বন করে কৃষকরা বাড়িতে বসেই আয়ের এই পথ বেঁচে নিয়েছেন। ফলে সারা বছর চারা পেয়ে মালচিং শীট পদ্ধতিতে গ্রীষ্মকালীন সময়েও কৃষকরা টমেটো চাষাবাদে লাভবান হয়ে উঠছেন। কৃষকদের পাশাপাশি বিদেশ ফেরত তরুণ ও শিক্ষিত বেকার যুবকরাও এ পেশায় ঝুকছেন। উৎপাদিত এসব টমেটো এ উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায় সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। কৃষি অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত সিলেট বিভাগের চুনারুঘাট, সারা বছরই থাকছে এখানে কোন না কোন ফসল। চুনারুঘাট উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার গাজীপুর, আহম্মদাবাদ, দেওরগাছ, শানখলা, সাটিয়াজুড়ী, মিরাশী ও পৌর এলাকার বিভিন্ন গ্রামে গ্রীষ্মকালীন সময়ে ১০ থেকে ১৫ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষাবাদ হয়েছে। এসব এলাকা ছাড়াও পুরো উপজেলা মিলিয়ে গ্রীষ্মকালীন সবজি হিসেবে এ পর্যন্ত ৫০ হেক্টরেরও বেশি জমিতে টমেটো চাষাবাদ হয়েছে। অনেকেই ধান চাষের চেয়ে টমেটো চাষে উৎসাহী হয়ে উঠছেন। উপজেলা কৃষি অফিসার জালাল উদ্দিন সরকার বলেন, আমাদের চুনারুঘাটে এ বছর গ্রাফটিং পদ্ধতিতে ৫০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষাবাদ করেছেন এখানকার কৃষকরা। সরেজমিনে টমেটো চাষাবাদের চিত্র না দেখলে তা সহজে বোঝা যাবে না। কৃষি বিভাগের সার্বণিক তদারকি ও পরামর্শ মোতাবেক এ এলাকায় টমেটোর চাষাবাদ হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের অন্যান্য স্থানেও এই পদ্ধতি অবলম্বন করে লাভবান হওয়া সম্ভব। আমরা কৃষকদেরকে চারা, মালচিং শীট সরবরাহ ও প্রশিক্ষণসহ সার্বক্ষণিক পরামর্শ সেবা প্রদান করে আসছি। তাছাড়া পরিমানমত কৃষকদেরকে কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। দিন দিন এ অঞ্চলে এর আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং টমেটো চাষাবাদ করে চুনারুঘাটের কৃষকরা যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনি এ এলাকার চাহিদা পূরণ করে অন্য এলাকার চাহিদাও পূরণ করার চেষ্টা করছেন তারা। সরেজমিন কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কৃষকদের চাষাবাদ করা ফসলি জমিতে গাছে গাছে পাকা ও আধাপাকা টমেটো ঝুলছে। একই অবস্থা উপজেলার গাজীপুর ও দেওরগাছ ইউনিয়নের টমেটো েেতর। উপজেলার শানখলা ইউনিয়নের পাইকুরা গ্রামের মোঃ আবুল কালাম তার ২৮ শতাংশ জমিতে এ পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করেন। খরচ বাদে তিনি এ বছর ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা মূল্যে টমেটো বিক্রি করে লাভ করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী। দেওরগাছ ইউনিয়নের আবু তাহের তিনিও একই পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করেছেন। গত বছর তিনি তার জমিতে ৩ বিঘা টমেটো চাষ করে খরচ বাদে ১০ লক্ষ টাকা লাভ করেছেন। এবছরও তিনি তার জমিতে এ পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করেছেন। এবারও তিনি টমেটো বিক্রি করে দিগুন লাভের আশা করছেন। তাদের দেখাদেখি আব্দুল খালেক, শাহ আলম, হান্নান ও কামাল মিয়াসহ অর্ধশতাধিক কৃষক এ পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করেছেন। তারাও আশা করছেন অধিক ফলন ও বেশি লাভের। এ পদ্ধতিতে টমেটো চাষাবাদ ও বিক্রি করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্নও দেখছেন এখানকার কৃষকরা। কৃষকরা বলছেন, টমেটো চাষাবাদে বালাইনাশক ব্যবহার ছাড়া ছত্রাক ও পোকামাকড়ের হাত থেকে ফসল রা করা সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে বালাইনাশক ব্যবহার করতে হচ্ছে। এভাবে চাষাবাদ করে অভাবের সংসার ঘুচাতে সম হয়েছি। আর কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, মাত্রাতিরিক্ত বালাইনাশক ব্যবহার করা যাবে না, পরিমান মত বালাইনাশক ব্যবহার করতে হবে। সম্প্রতি স্থানীয় কৃষকদের এ পদ্ধতিতে টমেটো চাষের জমি পরিদর্শন করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামার বাড়ীর (প্রশাসন ও অর্থ) পরিচালক আলহাজ্ব উদ্দিন আহমেদ, হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তমিজ উদ্দিন খান, অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শষ্য) মোঃ জালাল উদ্দিনসহ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।


     এই বিভাগের আরো খবর