,

নবীগঞ্জে নোয়াগাঁও’য়ে তান্ডবের ঘটনায় মূল হোতা নুর উদ্দিন এখনও অধরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নবীগঞ্জে পানিউমদা ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে ১৩টি বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও নারকীয় তান্ডবের মূল হোতা সাতাইহাল গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা নুর উদ্দিন আহমদ রয়েছেন এখনও অধরা। পুলিশ এ পর্যন্ত ৮ জনকে গ্রেফতার করলেও ঘটনার মূল হোতা নুর উদ্দিন (বীর প্রতীক)কে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। স্থানীয় সুত্রে জানাযায়, উপজেলার গজনাইপুর ইউপির সাতাইহাল গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা নুর উদ্দিন এঁর মালিকানা একটি মৎস্য খামার রয়েছে পানিউন্দা ইউপির ভাটি অঞ্চল খ্যাত নোয়াগাওঁ রুক্ষারপাড় হাওরে। গত ২৬ মে রাতে উক্ত খামারে তার
পাহাড়াদার আবুল মিয়া ও তার স্ত্রী জারু বেগমকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে দুর্বৃত্তরা। আহত স্বামী স্ত্রী সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় ৭ জনকে আসামী করে মামলা করেন মুক্তিযোদ্ধা নুর উদ্দিন। এ ঘটনাকে পুজিঁ করে গত ২৯ মে শনিবার রাতে সাতাইহাল গ্রামসহ ৬ মৌজার লোকজনদের ডাকেন তিনি। ওই বৈঠকে লোকদের ক্ষেপিয়ে তুলা হয়। এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত হয় ৩০ মে রবিবার সকালে নোয়াগাঁও রুক্ষারপাড় হাওর এলাকার বাসিন্দাদের বাড়িঘরে হামলা করা হবে। ৩০ মে রবিবার ৬ মৌজার কেউ বাহিরে যেতে পারবে না। গেলে তাদেরকে জরিমানা দিতে হবে। বৈঠকের এমন সিদ্ধান্তের খবর ছড়িয়ে পড়ে পুরো পরগনায়। খবর পৌছে নোয়াগাঁও রুক্ষারপাড় হাওর পাড়ের মানুষজনের কাছে। বিষয়টি পানিউমন্দা ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশকে জানান। ফলে ৩০ মে গত রোববার সকালে হায়রারঘাট এলাকায় প্রশাসনের সঙ্গে সাতাইহাল এলাকার নেতৃস্থানীয়দের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক চলার এক পর্যায়ে প্রশাসনের উপস্থিতিতে সাতাইহাল গ্রামসহ ৬ মৌজার কয়েক হাজার লোক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নোয়াগাঁও গ্রামের রুক্ষারপাড়ে অবস্থিত বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর করে তান্ডব চালায়। এতে প্রায় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার নোয়াগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুস শহীদের পুত্র জামাল হোসেন বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুল ও মুক্তিযোদ্ধা নুর উদ্দিনসহ ৪৭ জনের নাম উল্লেখ করে ও আরও ২০০-২৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের তৎপরতা লক্ষ্য করা গেলেও ঘটনার ৫ দিন অতিবাহিত হলেও ঘটনার মুল হোতা মুক্তিযোদ্ধা নুর উদ্দিন আহমদকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ক্ষতিগ্রস্থদের দাবী অনতিবিলম্বে ঘটনার মুল হোতা নুর উদ্দিনকে গ্রেফতারের দাবী জানান। পুলিশ এ পর্যন্ত উপজেলা আওয়ামীলীগের বরখাস্তকৃত ইউপি চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুলসহ ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। এ ছাড়াও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে নজরদারি করছে হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়। অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে খাদ্যসামগ্রী এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহানের নির্দেশনায় সহায়তা পৌঁছে দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মহি উদ্দিন। এ ছাড়াও গতকাল বৃহস্পতিবার ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১ বান ঢেউটিন ও নগদ ৩ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্যাহ পিপিএম, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক গেল পৌর নির্বাচনে অল্প ভোটে পরাজিত আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী গোলাম রসুল চৌধুরী রাহেলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা। নেতৃবৃন্দ নবীগঞ্জে শান্তি ফিরিয়ে আনতে বিষয়টি শালিসে নিঃস্পত্তির উদ্যোগ গ্রহনের গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে। এদিকে রির্পোট লেখা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে জানাগেছে। কান্না ও আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে।


     এই বিভাগের আরো খবর