,

এসডিজি পুরস্কার পেলেন প্রধানমন্ত্রী- পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর জন্য পাঁচ প্রস্তাব

সময় ডেস্ক ॥ দারিদ্র্র দূরীকরণ, পৃথিবীর সুরক্ষা এবং সকলের জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণের বৈশ্বিক আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের সঠিক পথে অগ্রসরের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার পেয়েছেন। জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশনস নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন) ওই পুরস্কার প্রদান করে। নিউ ইয়র্ক সফররত প্রধানমন্ত্রী পুরস্কারটি গ্রহণ করে এটি বাংলাদেশের জনগণকে উৎসর্গ করেছেন বলে স্থানীয় সময় গত সোমবার জানিয়েছেন তার সফরসঙ্গী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। এদিকে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি থেকে স্থায়ীভাবে উত্তরণ নিশ্চিত করে ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্য একটি বৈশ্বিক রোডম্যাপের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টেকসই উন্নয়নের ওপর নবম বার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দেয়া ভার্চ্যুয়াল বক্তব্যে তিনি এ সংক্রান্ত পাঁচ দফা প্রস্তাবনা দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদেরকে এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে ফিরে যাওয়ার জন্য একটি সাহসী ও উচ্চাভিলাষী বৈশ্বিক রোডম্যাপ প্রণয়ন করা প্রয়োজন, যাতে কেউ পেছনে পড়ে না থাকে। আর্থ ইনস্টিটিউট, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, গ্লোবাল মাস্টার্স অব ডেভেলপমেন্ট প্র্যাকটিস এবং ইউএন সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশনস নেটওয়ার্ক সম্মেলনটির আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী পাঁচ দফা প্রস্তাবনায় বলেন, প্রথমত: এই বৈশ্বিক মহামারি থেকে টেকসই উত্তরণের ওপরেই এসডিজি’র সাফল্য নির্ভর করছে। ফলে বিশ্বের সব স্থানে ভ্যাকসিন নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি এবং তা অতি জরুরি। দ্বিতীয়ত: ২০৩০ এজেন্ডা বাস্তবায়নে আমাদের সম্পদের যে বিশাল ব্যবধান রয়েছে, তা অবশ্যই কমাতে হবে। তৃতীয়ত: চলমান বৈশ্বিক মহামারির অভিঘাতের কারণে ১৯৯৮ সালের পর এই প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাপী দাদ্র্র্যি বৃদ্ধি পাচ্ছে তার জন্য আমরা উদ্বিগ্ন। অধিকন্তু, আমাদের পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক সুরক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনীর ওপর অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। চতুর্থত: আমরা বিশ্বাস করি যে- কোভিড-১৯ পরিস্থিতি থেকে পুনরুদ্ধার পদক্ষেপগুলো ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের বিপর্যয় বা দুর্যোগ মোকাবিলায় জোরালো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণকে পূর্ণতা দেবে। সর্বশেষ এসডিজি বাস্তবায়নে অবশ্যই পর্যবেক্ষণ জোদ্রার করা ও যান্ত্রিক সহায়তার ওপর আরও গুরুত্ব দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে জাতিসংঘের সমন্বয় বাড়ানো উচিত। জরুরি পরিস্থিতি ও বিপর্যয় মোকাবিলায় যথাযথ ও সময়োপযোগী সহায়তা পদক্ষেপ নিশ্চিত করার ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন। প্রধানমন্ত্রী মহামারি ও অন্যান্য জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রতিটি স্তরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রস্তুতি বৃদ্ধির পরামর্শ দেন। ২০৩০ এজেন্ডাকে একটি বৈশ্বিক চুক্তি আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এটি সকলের অন্তর্ভুক্তিতে আমাদের টেকসই বৈশ্বিক উন্নয়নের একটি ব্লুপ্রিন্ট। কোনো দেশ একা এই এজেন্ডা অর্জন করতে পারবে না। এই এজেন্ডা অর্জনে আমাদের বৈশ্বিক সহযোগিতা ও সংহতি বাড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই ডিকেড অব ডেলিভারি এবং অ্যাকশন অব দ্য এজেন্ডাতে প্রবেশ করলেও, লক্ষ্য এখনো দূরেই রয়ে গেছে। এমনকি কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির আগেও অনেক দেশ এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে ছিল না। এই মহামারি তাদেরকে সেই পথ থেকে আরও পিছিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ বিশ্বকে হতাশ করেছে। এই বৈশ্বিক প্রাণঘাতী মহামারি বহু মানুষের জীবন কেড়ে নেয়ার পাশাপাশি এর কারণে অসংখ্য মানুষ তাদের জীবিকা হারিয়েছে। মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষ দদ্র্রি হয়ে পড়েছে ও ক্ষুধার্ত রয়েছে। মহামারির কারণে শিক্ষার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে, বিশেষত শিশুদের শিক্ষা। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি এই মহামারিতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর ফলে আমাদের উন্নয়নের অর্জন ও এসডিজিএস অগ্রগতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনে অ্যাডাপটেশন ও মিটিগেশন প্রচেষ্টায় পথিকৃত। আমরা সম্প্রতি একটি উচ্চাভিলাষী ও আধুনিক এসডিজি পেশ করেছি। আমরা সবুজ উন্নয়নের মাধ্যমে সমৃদ্ধি অর্জন, লবণাক্ততা সহিষ্ণুতা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে প্রাধান্য দিয়ে ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপারিটি প্ল্যান’ গ্রহণ করেছি। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ২০২১-এর বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘২০১৫ সাল থেকে এসডিজি সূচকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি লাভ করেছে। প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে প্রথম পাঁচটি দ্রুততম অর্থনৈতিক অগ্রগতির দেশের মধ্যে অন্যতম এবং জিডিপিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৪১তম। তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘ এ বছর বাংলাদেশকে এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের স্বীকৃতি দিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৫ সাল থেকে আমরা আমাদের জাতীয় পরিকল্পনা ও নীতিমালায় এজেন্ডা ২০৩০ অঙ্গীভূত করতে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি। এসডিজি বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যে ২০১৭ এবং ২০২০ সালে দুটি ভিএনআর জমা দিয়েছি। আমরা আমাদের ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় নির্দিষ্ট খাতভিত্তিক মূল্যায়ন এবং সমন্বিত এসডিজি করেছি। আমাদের দ্বিতীয় পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনাও এসডিজির সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে অবকাঠামোগত সক্ষমতায় প্রচুর বিনিয়োগ করা হয়েছে। আমরা পদ্মা সেতু, ঢাকা মেট্রোরেল, কর্ণফুলি টানেল এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো মেগা অবকাঠামো প্রকল্প চালু করছি। জাতীয় উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমে নারীদের মূলধারার মধ্যে রাখা হয়েছে এবং তারা এখন আরএমজি’র মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাতের মেরুদ-। ডিজিটাইজেশন ও সংযোগে বাংলাদেশের বিনিয়োগ ডিজিটাল অর্থনীতি, তরুণদের নেতৃত্বে উদ্ভাবন এবং রূপান্তরমূলক আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনকে উৎসাহিত করেছে। এটি এখন আমাদের কোভিড-১৯ মহামারিকে আরও ভালোভাবে মোকাবিলা করতে সহায়তা করছে। তিনি বলেন, আমাদের তরুণদের সংখ্যা প্রচুর। ডিজিটাল অর্থনীতি এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের সর্বাধিক সুবিধা পেতে তাদের সহায়তা করার জন্য আমরা তাদের শিক্ষা এবং দক্ষতা বিকাশে প্রচুর বিনিয়োগ করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অস্থিরতার মুখে তিনি বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা এবং ‘আরও ভালোভাবে এগিয়ে যাওয়া’ এবং ২০৩০ সালের এজেন্ডা প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অর্জনের পথে ফিরে আসার বিষয়ে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি ভাগ করে নেয়ার সুযোগের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান। নীতি নির্ধারক হিসেবে বিশ্ব উন্নয়ন আলোচনার সঙ্গে আমার সম্পর্ক দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি ২০০০ সালে সহগ্রাব্দ উন্নয়ন শীর্ষ সম্মেলনে, ২০৩০ সালের যুগান্তকারী এজেন্ডা গ্রহণ এবং ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি গ্রহণে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছি। এমডিজিতে আমাদের সাফল্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের সাফল্যের জন্য একটি ‘অলৌকিক উন্নয়ন’ হিসেবে স্বীকৃত দিয়েছে, বিশেষ করে দাদ্র্র্যিতা হ্রাস, খাদ্য নিরাপত্তা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লিঙ্গ অগ্রাধিকার, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, লিঙ্গ সমতা ইত্যাদি। সম্মেলনে তিনি বলেন, গত এক দশকে আমাদের দাদ্র্র্যিতার হার ৩১.৫% থেকে কমে ২০.৫% হয়েছে এবং আমাদের মাথাপিছু আয় তিন গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। শিশু মৃত্যুর হার প্রতি ১,০০০-এ ২৩.৬৭ ও মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি ১ লাখে ১৭৩ জন হ্রাস পেয়েছে এবং জীবনের দীর্ঘায়ু বেড়ে ৭৩ বছর হয়েছে। তারা মূলত মহিলা এবং শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা প্রদানের জন্য ১৮ হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করেছেন।


     এই বিভাগের আরো খবর