,

নবীগঞ্জের পাঞ্জারাই গ্রামে মন্দিরে গ্রুপিং করে বিশৃংখলা ও দাঙ্গা হাঙ্গামা রোধকল্পে ইউএনও বরাবর অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার : নবীগঞ্জ উপজেলার ৭নং করগাঁও ইউনিয়নের পাঞ্জারাই গ্রামে মন্দিরে গ্রুপিং করে বিশৃংখলা ও দাঙ্গা হাঙ্গামা রোধকল্পে জন্মাষ্টমি ও ধর্মীয় বড় উৎসব দুর্গা পূজাসহ সকল ধর্মীয় উৎসব নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মীয় বিধি মোতাবেক পালন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য গতকাল মঙ্গলবার পাঞ্জারাই গ্রামের হিন্দু ধর্মালম্বী লোকজনের পক্ষে রাধিকা রায়ের পুত্র রঘু রায় (৫১) একই গ্রামের হরেন্দ্র দাশের পুত্র হরিপদ দাশ (৪৮) এর বিরুদ্ধে ইউএনও বরারবর অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়- নবীগঞ্জ উপজেলার ৭নং করগাঁও ইউনিয়নের পাঞ্জারাই গ্রামে প্রায় ১০০-১৫০ হিন্দু পরিবারের বসবাস। যুগ যুগ ধরে ধর্মপ্রান হিন্দু লোকজন মিলেমিশে সরকারী আচরণ বিধি মেনে বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় আচার অনুষ্টান করে আসছেন। কখনও কোন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে মতবিরোধ, মতানৈক্য ও বিশৃংখলা হয়নি। গত ২০১৯ সালে গ্রামের নাট মন্দিরে দূর্গা পূজার একটি সাধারণ সভার আয়োজন করা হয়। উক্ত সভায় হরিপদ দাশ উপস্থিত থেকে তার অনুসারীদেরকে নিয়ে একটি মনগড়া রেজুলেশন প্রস্তত করে নিজেকে সভাপতি দাবী করেন। তার রেজুলেশনের সাথে গ্রামের বেশীরভাগ লোকজন একমত পোষন না করলেও ধর্মীয় উপসনার স্বার্থে নিরবে মেনে নেন। হরিপদ দাশ তার বাহাদুরী জাহির করার জন্য ২০১৯ সালের দূর্গা পূজার সময় গ্রামের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে ব্যানার/ফেস্টুন ঝুলিয়ে রাখে। হরিপদ দাশের ঝুলানো ব্যানার/ফেস্টুন নিয়ে গ্রামে দাঙ্গা হাঙ্গামার ঘটনা ঘটে। পূজার স্বার্থে গ্রামের হিন্দু মুসলিম সবাই এক হয়ে নবীগঞ্জ থানায় বিষয়টি অবহিত করলে তৎকালীন নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, থানার ওসি এবং এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ মিলে ঘটনার বিষয় আপোষে মিমাংসা করে দেন। পূজার মাস খানেক পরে গ্রামবাসীর টাকায় নির্মিত নাট মন্দিরের নাম হরিপদ দাশের মামা হীরন দাশের নামে নামকরণের জন্য জোর চেষ্টা চালায়। তার মামার নামে নাকরণের কারণে জানতে চাইলে হরিপদ দাশ জানায় তাহার মামা নাট মন্দিরে অনেক অনুদান দিয়াছে। নাট মন্দিরে নাম হরিপদ দাশের মামা হীরন দাশের নামে নামকরণে গ্রামবাসী আপত্তি জানাইলে এতে হরিপদ দাশ ক্ষিপ্ত হয়ে তার ভাই-ভাতিজা ও সহযোগীদের নিয়ে দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র সহকারে গ্রামবাসীর উপড় আক্রমন করে তাদেরকে রক্তাক্ত জখম করে। এর আগেও কীর্ত্তনে গ্রামবাসীর উপর হামলা করার সংবাদ পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হরিপদ দাশ ও তার লোকজনের কবল থেকে গ্রামের লোকজনদের উদ্ধার করে প্রাথমিক ব্যবস্থা করেন। পরবর্তীতে থানায় উপজেলার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বিষয়টি মিমাংসা করিয়ে একটি কমিটি গঠন করে দেন। উপজেলার গন্যমান্য ব্যক্তিগন কর্তৃক গঠিত কমিটিকে সে অমান্য করে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং গ্রামে গিয়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের রাস্তা বেছে নেয়। গত ২০২১ সালে জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে কমিটি ছাড়া হরিপদ দাশ তার একক সিদ্ধান্তে জন্মাষ্টমী অনুষ্ঠান করার প্রস্ততি নেয়। এতে গ্রামের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনার পরিবেশ সৃষ্টি হলে থানার গোলঘরে দূর্গা পূজার একটি মিটিং করে নবীগঞ্জ উপজেলার গন্যমান্য ব্যক্তিবগসহ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ ২ বছরের জন্য ৫ সদস্য বিশিষ্ট করে ২টি কমিটি গঠন করে দেন। এতে হরিপদ দাশ আরো হিংস্র হয়ে গ্রামের কিছু পেশাদার নেশাগ্রস্থদের মাধ্যমে মাষ্টার গ্রুপ নামে একটি গ্রুপ তৈরী করে। প্রতি বছর ২৪শে ফাল্গুন গ্রামের হিন্দু ধর্মালম্বীগন একটি বাৎসরিক মহোৎসব করেন। কিন্তু হরিপদ দাশ ঘোষনা করে তার মতামত ছাড়া গ্রামে কোন কীর্তন, অন্য কোন ধর্মীয় অনুষ্টান হতে দিবে না। যদি কেউ কীর্ত্তন উৎসব করে তবে রক্ত গঙ্গা বইয়ে দিবে বলে প্রকাশ্যে হুমকি দেয়। তাহার উক্ত রূপ হুমকিতে বাৎসরিক মহোৎসবের অনুষ্ঠান করা যায় নাই। সামনে হিন্দুদের জন্মাষ্টমি ও ধর্মীয় বড় উৎসব দূর্গা পূজা। কোন উৎসব কমিটিতে সদস্যপদ না থাকা সত্বেও তার বাহিনী দ্বারা হরিপদ দাশ গ্রামবাসী ব্যতীত একা করবে বলিয়া বলাবলি করতেছে। হরিপদ মাষ্টার আরো প্রচার করতেছে মন্দির গ্রাম বাসীর নয়, এটা মাষ্টার মন্দির। গ্রামের কোন হিন্দুকে সে মন্দিরে ঢুকতে দিবেনা। তার অনুমতি ছাড়া মন্দিরে কেউ আসলে হত্যা করবে। হরিপদ দাশ মাষ্টার বলে সে মাষ্টার, তার বউ মাষ্টার এবং তার মামা হীরন দাশ অনেক টাকার মালিক। হরিপদ দাশ তার ইচ্ছামতো চলবে । তার মতের সহিত একমত না হলে মন্দিরে কউকে আসতে দেবেনা।
হরিপদ দাশের এসব কর্মকান্ডে গ্রামের ধর্মপ্রান হিন্দু লোকজনের মধ্যে ভয় ও আতংক বিরাজ করতেছে। গ্রামের সহজ সরল ধর্মপ্রান লোকজন জন্মাষ্টমি ও ধর্মীয় বড় উৎসব দূর্গা পূজাসহ সকল ধর্মীয় উৎসব নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্নভাবে ধর্মীয় বিধি মোতাবেক পালন করতে পারেন সেই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
এ বিষয়ে হরিপদ দাশ বলেন- আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সাথে আমি জড়িত নই। আমি সকল প্রকার ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও সহযোগীতা করি। বিষয়টি তদন্ত করলেই প্রকৃত সত্য ঘটনা উদঘাটন হবে।


     এই বিভাগের আরো খবর