,

জেলা সদরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ ঘণ্টাই থাকে না বিদ্যুৎ :: গরমে দুই শিশুর মৃত্যু

জুয়েল চৌধুরী : হবিগঞ্জ জেলা সদরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ ঘণ্টাই থাকে না বিদ্যুৎ। কোন সময় ঘণ্টায় ৫/৭ বার লোডশেডিং হচ্ছে। নিয়মবহির্ভূত বিদ্যুৎ ব্যবস্থপনার এমন অভিযোগ হবিগঞ্জ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি’) ও পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয়রা জানান, নিয়মবহির্ভূত ঘন-ঘন লোডশেডিংয়ের ফলে মানুষজন দিনের বেলা দৈন্যন্দিন কাজকর্মতো করতেই পারছেন না, রাতের বেলা যে শান্তিতে একটু নিদ্রায় যাবেন সেই উপায়ও নেই। বিদ্যুৎ একবার গেলে আর আসে না। আবার এলেও কোন কোন সময় ঘণ্টায় ৫/৭ বারও লোডশেডিং হচ্ছে। এতে রাতের বেলা ছাত্র-ছাত্রীদেরকে মোমবাতি জ্বালিয়ে লেখাপড়া করতে হচ্ছে। আবার শহরের অনেক বাসাবাড়ি ও ফ্ল্যাটে দিনের বেলাতেই জ¦ালাতে হচ্ছে মোমবাতি এমন দৃশ্যও দেখা গেছে।
হাসপাতালসহ চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা সেবা ব্যহত হচ্ছে। একেতো প্রচণ্ড গরম তার ওপর আবার ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’ হয়ে দাড়িয়েছে ঘন ঘন লোডশেডিং। প্রচন্ড গরমে বিদ্যুত না থাকায় অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন হিটস্ট্রোকেও।
গতকাল বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের ১০ তলা ভবনের মেডিসিন ও শিশু ওয়ার্ডে বিদ্যুত না থাকায় গরমে অতিষ্ঠ হয়ে দুই শিশু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পুরাতন ভবনে জেনারেটর থাকলেও নতুন ভবনে জেনারেটর চালু হয়নি। যে কারণে বিদ্যুত চলে গেলে বিকল্প কোনো উপায় নেই তাদের হাতে। ফলে রোগী ও তাদের স্বজনদের গরমে কষ্ট করতে হয়। গরমে অনেকে আবার হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হন।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, দেশে জ¦ালানি তেলের দাম বৃদ্ধি এমনিতেই দ্বিগুণ। এমন পরিস্থিতিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের ফলে খরচের পরিমাণ দুই থেকে তিনগুণ বেড়েছে। অনেকেই জানান, যাদের টাকা আছে তারা তো তেল দিয়ে জেনারেটর ও দিয়ে সাময়িক রক্ষা পাচ্ছেন কিন্তু মধ্যবিত্ত যারা তাদের গরমে অতিষ্ঠ হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।
হবিগঞ্জ শহরের একাধিক গ্রাহকদের অভিযোগ, দিনে রাতে আধা ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকার পর চলে যায় কয়েক ঘণ্টার জন্য। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৫ ঘণ্টা লোডশেডিং করার কথা থাকলেও ১২ ঘণ্টা থাকছেনা বিদ্যুৎ। বিদ্যুতের অসহনীয় লোডশেডিংয়ে এখন হবিগঞ্জ জেলাবাসী চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া অফিস আদালতের কাজকর্মেও ব্যাঘাত ঘটছে। ভ্যাপসা গরম ও রৌদ্রের প্রখরতার সাথে যেন পাল্লা দিয়ে চলছে হবিগঞ্জ শহর ও জেলা সদরে বিদ্যুতের লোডশেডিং। এ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে লাখ লাখ গ্রাহক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। হবিগঞ্জ শহরের বাইরে জেলা সদরের অন্যান্য স্থানের অবস্থা আরও করুণ। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাতে ও দিনে কমপক্ষে ১৫/২০ বার লোডশেডিং দেওয়া হয়। অথচ পাশর্^বর্তী জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৪/৫ ঘণ্টা লোডশেডিং করা হয় কিন্তু বিদ্যুত উৎপাদনকৃত জেলা হবিগঞ্জেই ব্যতিক্রম চিত্র।
উপজেলাবাসীদের অনেকেই জানান, সন্ধ্যা ৭টা থেকে কখনো কখনো মাঝ রাত পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকে না। ফলে আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ সকল শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অনেক সময় মৃদু হালকা বৃষ্টির অজুহাতেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকে। জেলার প্রায় সবকটি ইউনিয়ন থেকে এমন অভিযোগ প্রতিদিনই আসছে পল্লী বিদ্যুতের বিরুদ্ধেও।
অনেকেই হবিগঞ্জ শহরের পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলীসহ পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম, এজিএমদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে তাদের বদলির দাবি করেছেন।
ভুক্তভোগীরা আরও জানান, বিদ্যুতের লোডশেডিং-এর বিষয়ে হবিগঞ্জ পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী, পল্লীবিদ্যুতের ডিজিএম, এজিএম কিংবা জরুরি নম্বরে ফোন করলে তারা গ্রাহকের ফোন রিসিভ করেন না।
বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ে উপজেলা প্রশাসন, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ জরুরি অনেক কাজেও ব্যাঘাত ঘটছে প্রতিনিয়ত। এসব সমস্যা থেকে উত্তরনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা গ্রহণে জোর দাবি জানিয়েছে সর্বসাধারণ।


     এই বিভাগের আরো খবর