,

শুক্রবার পেট ভরে ভাত খান তাঁরা

সময় ডেস্ক : গত শুক্রবার বেলা আড়াইটা। রেস্টুরেন্টে খাওয়ার জন্য ঢুকতেই মুরাদ আহমদ নামের একজন এগিয়ে এসে বললেন, ‘আপনারা ভেতরের কক্ষে বসুন। সামনের কক্ষে ভিক্ষুক ও এতিমদের খাবার দেওয়া হবে।’ কৌতূহল নিয়ে কে খাওয়াবে জানতে চাইলেই বললেন, ‘ইখানোতো শুক্রবারে হারা বছর তাঁরা খায়।’ এ তথ্য জানিয়ে খাবার দেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে গেলেন মুরাদ। প্রতি শুক্রবার এমন দৃশ্যের দেখা মেলে জগন্নাথপুরে মাহিমা রেস্টুরেন্টে।
পৌর শহরের ব্যারিস্টার আব্দুল মতিন মার্কেটে ২০১৭ সালে চালু হয় মাহিমা রেস্টুরেন্ট। শুরু থেকেই মালিক মকবুল হোসেন ভূঁইয়া প্রতি শুক্রবার দুপুরে ফকির, মিসকিন ও এতিমদের খাবারের আয়োজন করেন। খাবারের মেনুতে ভাতের সঙ্গে থাকে ডাল, সবজি ও মুরগির মাংস। এটি হোটেলের নিজস্ব মেনু। তবে কেউ সহযোগিতা করলে এর সঙ্গে মাছসহ যুক্ত করা হয় অন্য খাবারও।
কর্মচারীরা জানান, শুরুতে ৩০-৪০ জন করে প্রতিবন্ধী ও হতদরিদ্র এসে খেতেন। ক্রমেই সেটি বাড়তে থাকে। এখন প্রায় ২০০ জনের খাবার তৈরি করতে হয়। কর্মচারী মুরাদ আহমদ বলেন, শুক্রবার দুপুরের খাদিমদারি করে যে তৃপ্তি পান, সারা সপ্তাহে আর কোনো কাজে তা পান না।
বিনা পয়সায় ওই রেস্টুরেন্টে খাওয়া শেষে রহিমা বেগম বলেন, ‘গেছে শুক্করবারে আইতাম পারছি না। ১০-১২ দিন ভালা খাওয়া অইছে না। পেট ভইরা খাইলাম।’ হিরন মিয়ার ভাষ্য, ‘ভাত খাইতাম পারি না। বেটায় রুটি কাইট্টা মাংস দিয়া দিছইন।’
মার্কেটের মালিক মির্জা আবু তাহের বলেন, মাহিমা রেস্টুরেন্টের মালিক মকবুল হোসেন বন্যার সময় খিচুড়ি রান্না করে বন্যার্তদের বাড়ি বাড়ি পাঠিয়েছেন। এতিমখানার এতিমদেরও একই দিনে দুপুরে খাওয়ানো হচ্ছে তাঁর উদ্যোগে।
মকবুল হোসেনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি প্রথমে প্রচারে আগ্রহী নন বলে জানান। পরে কথা বলতে রাজি হন। তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে খরচ বেড়েছে। এরপরও ব্যবসায় লোকসান হচ্ছে না। প্রতি শুক্রবার ২০০ জনকে খাওয়ানোর খরচও ব্যবসার আয় থেকে চলছে। মকবুল বলেন, কয়েকজন প্রবাসী অর্থ সহায়তা পাঠিয়েছেন। তবে তাঁদের বলে দিয়েছেন, খাবারের আয়োজন তাঁর উদ্যোগেই হবে।
ইউএনও সাজেদুল ইসলাম বলেন, একদিন দাঁড়িয়ে দেখেছেন দৃশ্যটি। ওই ব্যবসায়ী মন থেকেই এ কাজ করে তৃপ্তি পান।


     এই বিভাগের আরো খবর