,

চুনারুঘাটে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ও নারীদের আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

চুনারুঘাট প্রতিনিধি : চুনারুঘাট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ইভোলিউশন ৩৬০, আর্থপিডিয়া গ্লোবাল ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের যৌথ আয়োজনে প্রজেক্ট শ্রেয়শী মাধ্যমে নারীদের মেনস্ট্রুয়াল ও প্রজনন স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত ওয়ার্কশপ, স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন ও নারীদের আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) চুনারুঘাট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে উক্ত প্রশিক্ষণে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিদ্ধার্থ ভৌমিক। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আর্থপিডিয়া গ্লোবালের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সৈয়দা নাজনীন আহমদ সিলভী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফিয়া আমিন পাপ্পা, এভলিউশন ৩৬০ ট্রেইনার সিফাত ও নেলসন সহ স্কুলের সকল শিক্ষকবৃন্দ। এতে প্রায় শতাধিক স্কুলছাত্রী প্রশিক্ষণে অংশ নেন। প্রজেক্ট শ্রেয়শী মাধ্যমে ইউএন উইমেনের সিক্সটিন ডেইস অফ এক্টিভিজম পালন করা হয়। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে নারীর প্রতি যে কোনো ধরনের সহিংসতার প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে সর্বস্তরের মানুষকে উৎসাহিত করতে ৪ ঘন্টাব্যাপী প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী এবং সমাজের উন্নয়নে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু তারপরও নারীরা শান্তি, নিরাপত্তা ও অধিকারের দিক থেকে পুরুষের সমান নয়। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে, সামাজিক কাঠামোর পরিবর্তন হচ্ছে, বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবনধারা তারপরও নারী নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট মতে, প্রতি তিনজনের একজন নারী তার জীবনের কোনো না কোনো সময় শারীরিক, মানসিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হন। প্রতি তিনজন নারীর মধ্যে দুজন তাদের স্বামী বা বন্ধু বা বিপরীত লিঙ্গের সদস্যদের দ্বারা পারিবারিক সহিংসতার শিকার হন। নির্যাতনের শিকার নারীদের অধিকাংশই নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক ও প্রকাশ্য লজ্জার ভয়ে মুখ খোলে না। একজন নারী আত্মরক্ষার কৌশল গুড টাচ বেড টাচসহ নারীর প্রতি সহিংসতা সমতা, উন্নয়ন, শান্তি অর্জনের পাশাপাশি নারীর মানবাধিকার বাস্তবায়নে ইভোলিউশন ৩৬০, আর্থপিডিয়া গ্লোবাল ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন কাজ করে যাচ্ছে।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা একটি প্রধান সামাজিক সমস্যা। বিভিন্ন উপায়ে ও আকারে প্রতিনিয়তই এটি বাড়ছে। এটি একটি দুঃখজনক সত্য যে, এ ধরনের সহিংসতার কারণে প্রতি বছর অসংখ্য নারী নিহত হচ্ছেন। কারণ তারা খোলাখুলি এ বিষয়ে কথা বলতে পারে না বা তাদের কথা বলতে দেওয়া হয় না। নির্যাতনের পরও তাদের চাপের মধ্যে থাকতে হয়। দারিদ্র্য, বেকারত্ব, অশিক্ষাসহ নানা কারণে নারীরা নির্যাতিত হন। যৌতুকের দাবি মেটাতে না পেরে অনেক নারীর জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। যৌতুক, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ এবং অন্যান্য সম্পর্কিত বিষয়ে বিদ্যমান আইনগুলো পর্যাপ্তভাবে প্রয়োগ করা হয় না। অনেক নারী চাইলেও তাদের পরিবারের কাছে সহিংসতার কথা বলতে পারে না। দেখা যায়, অনেক সময় নির্যাতিত নারীকে দায়ী করে পরিবার। বিদ্যমান সমাজব্যবস্থায় সহিংসতার শিকার অনেক নারী চাইলেও আইনি আশ্রয় নিতে পারে না। পরিবার ও সন্তানের কথা ভেবে এসব নির্যাতন সহ্য করতে বাধ্য হন অনেক নারী। তবে প্রশিক্ষনের মাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ সম্ভব। প্রতিটি এলাকায় নিয়মিত সভা, সেমিনার এবং কর্মশালার আয়োজন করে জনমত গড়ে তোলা দরকার। সাধারণ মানুষ এসব আইন সম্পর্কে অবগত নয়। ইভোলিউশন ৩৬০, আর্থপিডিয়া গ্লোবাল ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন সংস্থার পাশাপাশি সবাইকে সচেতন করার পদক্ষেপ নিতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে উপরোক্ত উদ্যোগগুলো নিতে হলে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। নারীর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যই নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করতে পারে। এর মাধ্যমে নারীরা সহিংসতার প্রতিকার পাবে। হিংসামুক্ত সুন্দর সমাজ গড়ে উঠবে। তাই নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন ও নির্যাতন প্রতিরোধে পরিবার, সমাজসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।


     এই বিভাগের আরো খবর