,

বীজ সংরক্ষণে কৃষককে আশার আলো দেখাচ্ছে ইরি কোকুন

জাবেদ তালুকদার : ধানের বীজ সংরক্ষণের জন্য নবীগঞ্জ উপজেলার ১০ জন এসএমই কৃষককে কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে প্রদান করা হয় ইরি কোকুন নামের রাবারের বড় ব্যাগ। প্রতিটি ব্যাগে ২৫ মণ ধানবীজ সংরক্ষণ করা যায়। পরবর্তী মৌসুমে কৃষকরা এসব বীজ নিজে ব্যবহার করেও গ্রামের অন্যান্য কৃষকের নিকট বাড়তি বীজ ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রয় করে। বীজ সংরক্ষণের বায়ুরোধী এ ব্যাগে আর্দ্রতা ও পোকামাকড় প্রবেশ করতে না পারায় বীজের গুণগত মান বজায় থাকে।
চৌশতপুর গ্রামের কৃষক আজহার আলীর সাথে কথা বলে জানা যায়, বিগত বর্ষাকাল ও বন্যায় তাদের খাবার অনেক ধান পানিতে ভিজে গেলেও ইরি কোকুনে রাখা বীজ ভালো অবস্থায় ছিলো। তিনি কৃষি অফিস থেকে একটি কোকুন পেয়েছেন। সেটা দেখে নিজে নিজে বস্তা দিয়ে আরেকটা বানিয়েছেন। তারমতে, নিজের বানানো কোকুন পোকামাকড় থেকে বীজকে রক্ষা করলেও আর্দ্রতা বজায় রাখতে রাবারের তৈরি কোকুনই সেরা। তিনি প্রায় ১শ পঞ্চাশ মণ বীজ সংরক্ষণ করেন এবং কৃষকের নিকট বিক্রি করেন। এসব ইরি কোকুন তাদের আরও দেয়া হলে দলের অন্যান্য কৃষকরাও নিশ্চিতে বীজ সংরক্ষণ করতে পারবেন বলে তিনি আশা করেন।
এ বিষয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ কে এম মাকসুদুল আলম জানান, একসময় কৃষকরা নিজের ধান নিজে সংরক্ষণ করতো। তখন গোলা, মাটির হাড়ি, চটের বস্তা ব্যবহার করায় সেখানে বাতাস প্রবেশ করে বীজের আয়ুষ্কাল কমিয়ে দিতো। এসব পাত্রে পোকামাকড়ও জন্ম নিতো। ক্রমান্বয়ে কৃষকরা বাজারের বীজের দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং নিজে বীজ সংরক্ষণ অনেক কমিয়ে দেয়। কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী শতভাগ বীজ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন হয়না। সকল কৃষক বীজের জন্য বাজারের উপর নির্ভরশীল হলে কৃষকরা প্রতারিত হওয়ার আশংকা তৈরি হবে। এজন্য আমরা আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ধান, গম ও পাট বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের আওতায় এসএমই কৃষক তৈরি করেছি। তাদের বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণে প্রশিক্ষণ দিয়েছি, ইরি কোকুনসহ আধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহ করেছি। ইরিকোকুন রাবারের তৈরি হওয়ার এর ভেতরে বীজের বস্তা রাখলে বাতাসের জলীয়বাষ্প ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনা। এটি পোকামাকড়ের আক্রমণ রোধ করে। সংরক্ষিত বীজ নিরাপদ থাকে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মূল্যায়ন দল কিছুদিন আগে কৃষকের এসব কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন। তাদের নিকট কৃষকরা ইরি কোকুনের উপকারিতা তুলে ধরেছেন এবং ধান সংরক্ষণের সর্বাধুনিক এ প্রযুক্তি আরও অধিক পরিমাণে প্রদান করার দাবি জানিয়েছেন। সর্বোপরি ইরি কোকুন প্রযুক্তিটি নবীগঞ্জের কৃষক উৎসাহের সাথে গ্রহণ করেছেন।


     এই বিভাগের আরো খবর