,

শিক্ষাবিদ মুহিবুর রহমান চৌধুরী স্মৃতি পাঠাগার পাড়াগাঁয়ে জ্ঞানের বাতি

মোঃ আবু তালেব, নবীগঞ্জ : নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী কসবা ফরহাদপুর চৌধুরী বাড়িতে ২০০৩খ্রিঃ ২৩ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত হয় “শিক্ষাবিদ মুহিবুর রহমান চৌধুরী স্মৃতি পাঠাগার”। কসবা গ্রামের কৃতি সন্তান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মরহুম মুহিবুর রহমান চৌধুরীর ভাতিজা কবি, সাংবাদিক ও সমাজকর্মী এম.গৌছুজ্জামান চৌধুরী এবং তাঁর সহোদর তরুণ কবি ও গবেষক এম.শহিদুজ্জামান চৌধুরীকে নিয়ে এই পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠা করেন। এ পাঠাগারটি আজ মফস্বল এলাকার অজো পাড়া গাঁয়ে জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চায় বেশ সুনাম অর্জন করেছে। এ পাঠাগারে রয়েছে ইতিহাস, গবেষণা, ধর্ম, বিজ্ঞান সহ সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার প্রায় ৩ সহস্রাধিক বই এবং দেশি বিদেশী পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন এবং জার্নাল। এছাড়াও পাঠাগারে রয়েছে পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা এম গৌছুজ্জামান চৌধুরীর প্রপিতামহ খাদিমুল ইসলাম মুন্সি রেহান উদ্দিন চৌধুরীর স্বহস্তে উর্দুতে লেখা গ্রন্থ এবং তাঁর দাদা সুনামগঞ্জের তাহিরপুর এম.ই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শিক্ষাবিদ আলহাজ্ব আব্দুল ওয়াহাব চৌধুরী ওরফে কালা মিয়া মাষ্টারের স্বহস্তে প্রণীত বিভিন্ন পান্ডুলিপি সহ ১৯০৩, ১৯০৯, ১৯১৭, ১৯৩৩, ১৯৩৬ প্রেরিত ইংরেজি চিঠি সংরক্ষিত আছে।
উক্ত পাঠাগার তথা সংগ্রহশালাটি পরিদর্শনে অনেক জ্ঞানী গুণী ব্যক্তিবর্গ নিয়মিত আসেন। তাদের তালিকা পাঠাগারের মন্তব্য বহিতে লিপিবদ্ধ আছে। যাদের মধ্যে পিরোজপুর জেলার বিশিষ্ট কবি ও ইসলামী ব্যাংক লিঃ অডিট শাখার ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম মুসাফির, ঢাকা থেকে প্রকাশিত কাব্যকথার সম্পাদক কবি জালাল খান ইউসুফি, গ্রীণ ডেল্টা ইন্সুরেন্স কোম্পানির উর্ধ্বতন কর্মকর্তা কবি সাদেক আহমদ, যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ ছোটন, ঢাকার অরুণালোক প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী কবি ও প্রকাশক তৈয়ব খান, সিলেটের বিশিষ্ট কবি, লেখক ও কাব্য সমালোচক অধ্যাপক বাছিত ইবনে হাবিব, মাসিক বুড়িনদীর বাঁকে সম্পাদক শেখ ফয়সল আহমদ, হবিগঞ্জ সাহিত্য পরিষদের যুগ্ন সম্পাদক কবি এডভোকেট এসএম ইলিয়াস, হবিগঞ্জ জজকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী নজরুল ইসলাম, নবীগঞ্জ উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আশরাফ আলী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা বেগম, কবি দিলওয়ার পরিষদ সিলেট এর সহ সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কবি দীনুল ইসলাম বাবুল, রাজশাহীর মহাকালগড় বার্তা সম্পাদক এসএম হাসনাত, সাপ্তাহিক বৈচিত্র্যময় সিলেট সম্পাদক আবুল কাশেম রুমন, মাসিক রাণীগঞ্জ দর্পণ সম্পাদক আবুল কাশেম আকমল, জগন্নাথপুরের সাপ্তাহিক মুক্তধারার সম্পাদক প্রভাষক সৈয়দ আয়েশ মিয়া, আলোকিত দাওরাই সম্পাদক গবেষক আবু সায়েদ লেবু মিয়া, ইনাতগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নুরুল আমীন, ইনাতগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বদরুল আলম ইলাক, মস্তফাপুর আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুন নুর, পোয়েটস ক্লাব হবিগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি কবি ও সাংবাদিক নিলুপা ইসলাম নিলু, জাতীয় পার্টি নবীগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি ডাঃ শাহ আবুল খায়ের, ইনাতগঞ্জ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন, ইনাতগঞ্জ উজ্জীবন শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি সাংবাদিক আহমদ আবুল কালাম, বাজু সুনাইত্যা কসবা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক বিজয় কৃষ্ণ দাস, বর্তমান প্রধান শিক্ষক তপন পাল, নবীগঞ্জ ঐতিহ্য সংসদ এর সভাপতি লেখক মাওলানা আলতাব উদ্দিন, বনকাদিপুর আমজদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক কবি শেখ আব্দুল আজিজ, শেভরন শিক্ষা কর্মসূচি বিডিএস এর কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন ও অলিউর রহমান প্রমুখ অন্যতম। এসকল গুণীজন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে পাঠাগার তথা সংগ্রহশালা দেখে এবং পরিবেশে মুগ্ধ হয়ে পাঠাগার পরিদর্শন বহিতে মন্তব্য সহ স্বাক্ষর করেছেন। এ পাঠাগারে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রকাশিত পত্রিকা-ম্যাগাজিন এবং নানা লেখকদের প্রকাশিত গ্রন্থাবলি ডাগযোগে, কুরিয়ার যোগে এসে থাকে। এছাড়াও ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন দেশের দুতাবাস থেকেও প্রকাশিত ম্যাগাজিন ও জার্নাল এসে থাকে। এ পাঠাগারের সবচেয়ে প্রশংসনীয় কাজ হচ্ছে বিভিন্ন জাতীয় দিবস সমূহে পাঠাগারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সাময়িকী যেমন বিজয় দিবস উপলক্ষে বিজয় নিশান, ২১ শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বর্ণমালা প্রকাশ সহ ইতিমধ্যে পাঠাগারের পক্ষ থেকে অনেক পত্রিকা-ম্যাগাজিন সহ অসংখ্য গ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে। যেই সমাজে গুণীজনের মূল্যায়ন হয়না সে সমাজে গুণীনের জন্ম হয়না। তাই গুণীজনের মূল্যায়নে এই পাঠাগারের পক্ষ থেকে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন বাছাই করে এরকম ২৪ জন গুণী ব্যক্তিবর্গকে ২০১৫ খ্রিঃ শিক্ষাবিদ মুহিবুর রহমান চৌধুরী স্মৃতি পদক সম্মাননা প্রদান করা হয়।
পারিবারিক পাঠাগার আলোকিত পরিবারের প্রতিচ্ছবি এই মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে কবি ও সাংবাদিক এম গৌছুজ্জামান চৌধুরী এ পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করেন, একমাত্র বই মানুষ কে প্রকৃত জ্ঞানী হিসেবে গড়ে তুলে। তার উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় অনেকেই তাদের নিজ বাড়িতে পাঠাগার প্রতিষ্ঠায় উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত হয়েছেন এবং ইতিমধ্যে নিজ বাড়িতে পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেছেন।
এম গৌছুজ্জামান চৌধুরী ১৯৯৬ খ্রিঃ নবীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজে অধ্যায়ন কালীন সময়ে সাংবাদিকতা ও লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৯৬ খ্রিঃ ১৬ ই ডিসেম্বর নবীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ থেকে তাঁর সম্পাদনায় শুভেচ্ছা নামে একটি বিজয় স্মরণিকা (ম্যাগাজিন) প্রকাশিত হয়। তাঁর লেখা অসংখ্য কবিতা, প্রবন্ধ, ফিচার ও রম্যরচনা দেশের বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন ও সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে দৈনিক বাংলাবাজার, দৈনিক সিলেটের ডাক, দৈনিক শ্যামল সিলেট, দৈনিক মানচিত্র, দৈনিক বার্তাবাহক, বিবিয়ানা, মাসিক টেলিভিশন, মাসিক পরওয়ানা, মাসিক বিশ্ববাংলা, মাসিক তৌহিদী পরিক্রমা, মাসিক বাসিয়া, রাণীগঞ্জ দর্পণ, সাপ্তাহিক হবিগঞ্জ পরিক্রমা, পাতাকুঁড়ির দেশ, বৈচিত্র্যময় সিলেট, ক্রাইম রিপোর্ট ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
এম গৌছুজ্জামান চৌধুরী ইনাতগঞ্জ থেকে প্রকাশিত মাসিক বিবিয়ানা’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি মাসিক বিবিয়ানা বার্তা, কবি ও কবিতা এবং সর্বশেষ নবীগঞ্জ দর্পণ নামে পাঠক নন্দিত তিনটি পত্রিকার প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। নিজেস্ব প্রতিনিধি হিসেবে দৈনিক শ্যামল সিলেট, সাপ্তাহিক বৈচিত্র্যময় সিলেট, হবিগঞ্জ পরিক্রমা, সিলেট পরিক্রমা, পাঁতাকুড়ির দেশ, ক্রাইম রিপোর্ট, নিউজ সিন্ডিকেট, তৌহিদী পরিক্রমায় অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সাথে সাংবাদিকতা করেছেন। তিনি জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার কেন্দ্রীয় সদস্য, কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের আজীবন সদস্য, জাতীয় সাহিত্য সংগঠন বাংলাদেশ পোয়েটস ক্লাব হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সহ আরো অসংখ্য সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে সমাসীন রয়েছেন। আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা দি হাঙ্গার প্রজেক্টের উজ্জীবক এবং প্রশিক্ষক হিসেবেও তিনি আত্মনির্ভরশীল ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর মেধা ও সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে অনেক পুরুস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। তিনি ২০০৪ খ্রিঃ সাংবাদিকতায় অসামান্য অবদানের জন্য ইনাতগঞ্জ ডিগ্রী কলেজে ইতিহাসবিদ ড. মুমিনুল হক একাডেমী এ্যাওয়ার্ড লাভ করেন, জাতীয় কবিতা পরিষদ হবিগঞ্জ জেলা শাখার পক্ষ থেকে নবীগঞ্জ উপজেলা মিলনায়তনে ৯’ই এপ্রিল ২০১৬ খ্রিঃ বসন্ত সাহিত্য উৎসব ২০১৬ সম্মাননা লাভ করেন, নবীগঞ্জ পৌরসভা কর্তৃক অমর একুশে বইমেলা ২০১৭ সম্মাননা, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০১৮ উপলক্ষে ইনাতগঞ্জ উজ্জীবন শিল্পী গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক, ২০১৯ সালের ১৫’ই ডিসেম্বর জাতীয় প্রেস কাউন্সিল মিলনায়তন ঢাকায় পাক্ষিক সালাম পত্রিকার ৩০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে সম্মাননা সহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভুষিত হয়েছেন। ছোটবেলা থেকে ভ্রমণ পিপাসু এম গৌছুজ্জামান চৌধুরী ইতিমধ্যে ভারত ও ব্রিটেন ভ্রমণ করেছেন। ভারত ভ্রমণের উপর ২০০৫ খ্রিঃ তাঁর লেখা ভ্রমণ কাহিনী “ঘুরে এলাম বৈচিত্র্যময় ভারত” বিভিন্ন পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে এবং বিপুল পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এম গৌছুজ্জামান চৌধুরী ২ রা জুলাই ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের কসবা (ফরহাদপুর) চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আজিজ আহমদ চৌধুরী এবং মাতার নাম দিলারা খানম চৌধুরী।


     এই বিভাগের আরো খবর