,

নিরাপদ ডিজিটাল আঙিনা

সময় ডেস্ক : সবাই প্রায় ইমেইল, অনলাইন ব্যাংকিং বা অন্য কোনো সাইটে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন, যা নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি।হ্যাকাররা ব্যবহারকারীর ভুলের কারণে যে কোনো প্ল্যাটফর্মের পাসওয়ার্ড বের করতে পারলে বাকি সবখানে অ্যাকসেস করা তাদের জন্য সহজ হয়ে যায়। অভিনব সব প্রযুক্তি উদ্ভাবনের যুগে সাইবার হুমকি শঙ্কা বাড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) আবির্ভাবে সাইবার সিকিউরিটি কঠিন হুমকির সম্মুখীন। ইন্টারনেট দুনিয়ায় অসতর্কতার কারণে কমবেশি সবাই অনলাইনে বহুমাত্রিক সমস্যার মুখোমুখি হন। অনলাইনে পদচারণে দরকার সাইবার সিকিউরিটিবিষয়ক সচেতনতা। কীভাবে অনলাইনে নিরাপদ থাকব, তা জানা জরুরি।
সাইবার সিকিউরিটি কী : কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম ও নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে হ্যাকাররা ডিভাইসের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে। আবার অনেক সময় ডিভাইসে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। হ্যাকারদের এসব অনৈতিক কার্যক্রম থেকে রেহাই পেতে যে ধরনের নিরাপত্তা দিতে হয়, সেটাই সাইবার সিকিউরিটি। সাইবার সিকিউরিটির মাধ্যমে ডিজিটাল ডিভাইস ও তথ্য সুরক্ষিত থাকে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালে সাইবার সিকিউরিটির মার্কেট ভ্যালু ১৭২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে; যা গত বছর ছিল ১৫৩ বিলিয়ন ডলার। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছরে তা ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়বে।
সাইবার সিকিউরিটি কখন শুরু : ১৯৭০ সালে সাইবার সিকিউরিটির যাত্রা শুরু। ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালুর পর ‘ক্রিপার’ নামে প্রথম ম্যালওয়্যার প্রকাশ পায়, যা সময়ের সঙ্গে আপডেট হয়। ম্যালওয়্যার ঘরানার সব ভাইরাস ও হ্যাকারদের হ্যাকিং কৌশল দিন দিন আরও আপডেট হচ্ছে। ঘটনার সূত্রপাতে এভাবেই সামনে আসে সাইবার সিকিউরিটি।
সাইবার সিকিউরিটির গুরুত্ব : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে সাইবার নিরাপত্তা খুবই জরুরি। বলতে গেলে অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। হ্যাকাররা প্রথমে ব্যক্তিগত গোপন তথ্যের নিয়ন্ত্রণে প্রচেষ্টা চালায়; বিশ্বের বহু দেশের সরকারি বা বড় কোনো প্রতিষ্ঠানের ডেটা চুরি করে। তাই সাইবার সিকিউরিটি পদ্ধতি সংবেদনশীল সব তথ্যকে (ডেটা) সুরক্ষা দিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
জাতীয় নিরাপত্তা : বিশ্বে বহু দেশকে টার্গেট করে হ্যাকাররা সাইবার আক্রমণ পরিচালনা করে। এ ধরনের আক্রমণ আক্রান্ত দেশটির নিরাপত্তায় কঠিন হুমকিস্বরূপ। কারণ সরকারি বহু সংবেদনশীল তথ্য সার্ভারে সুরক্ষিত থাকে। সরকারি অবকাঠামো প্রতিরক্ষার তথ্যও সরকারি সব সংস্থা নিজস্ব সার্ভারে আপলোড রাখে। সার্ভারে সাইবার আক্রমণ দেশ ও জাতির জন্য বড় ধরনের হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই দেশের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য সাইবার নিরাপত্তা অত্যন্ত জরুরি।
ব্যক্তিগত গোপনীয়তা : প্রায় সবাই অনলাইনে ব্যক্তিগত কাজেই বেশির ভাগ সময় যুক্ত থাকেন। ভার্চুয়াল নিরাপত্তার মাধ্যমে অনলাইন দুনিয়া থেকে ব্যক্তিগত তথ্য গোপন করে তার সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
অর্থনৈতিক ক্ষতি : সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান সাইবার আক্রমণে আক্রান্ত হলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের যাবতীয় তথ্য নষ্ট হয়ে ব্যবসার ক্ষতি হয়। সুতরাং সাইবার সিকিউরিটি ডিজিটাল ঘরানার ব্যবসাকে কঠিন ক্ষতির হাত থেকে সুরক্ষা দিতে পারে।
যা জানা জরুরি : অনলাইনে নিরাপদ বিচরণের জন্য সাইবার সিকিউরিটির বেশ কিছু বিষয় জানা জরুরি, যার মধ্যে সাইবার সচেতনতা অগ্রগণ্য। অনলাইনে নিরাপদ থাকার অন্যতম উপায় হলো সাইবার সচেতনতা। সাইবার আক্রমণ কেন হয়, কীভাবে নিরাপদে অনলাইন ব্যবহার করলে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত হয়, সে বিষয়ে সম্যক ধারণা থাকা উচিত।
পাসওয়ার্ড সতর্কতা : প্রায় সবাই ইমেইল, অনলাইন ব্যাংকিং বা অন্য কোনো সাইটে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন, যা নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি। হ্যাকাররা ব্যবহারকারীর ভুলের কারণে যে কোনো প্ল্যাটফর্মের পাসওয়ার্ড বের করতে পারলে বাকি সবখানে অ্যাকসেস করা তাদের জন্য সহজ হয়ে যায়। তাই পাসওয়ার্ড তৈরিতে অবশ্যই দক্ষতার সঙ্গে হতে হবে বাড়তি সচেতন। সব সময় ১০ সংখ্যার বেশি পাসওয়ার্ড নিবন্ধন করা উচিত। পাসওয়ার্ড তৈরিতে বহু ধরনের অক্ষর বা প্রতীক ব্যবহার করা শ্রেয়।
লিঙ্ক সতর্কতা : যদি অচেনা বা অপরিচিত কেউ কোনো লিঙ্ক পাঠান, সেখানে ক্লিক করতে সতর্ক হতে হবে। লিঙ্কে ক্লিকের মাধ্যমে হ্যাকাররা টার্গেট ব্যক্তির ডিভাইসে স্ক্রিপ্ট ইনস্টল করে। ফলে ডিভাইস তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। তাই লিঙ্ক ক্লিক করার ক্ষেত্রে সব সময় অধিক সচেতন থাকতে হবে।
যা কিছু আপডেট জরুরি : নিজের ব্যবহৃত সব ধরনের সফটওয়্যার নিয়মিত আপডেট রাখা জরুরি, যা ভুললে গুনতে হবে মাশুল। অপারেটিং সিস্টেমের নিয়মিত ত্রুটি সারাতে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত আপডেট করে। ফলে সাইবার অপরাধীদের জন্য ওই ব্যক্তির ডিভাইসে নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সহজ হয় না। সুতরাং নিয়মিত ডিভাইসে ব্যবহৃত সব সফটওয়্যার আপডেট করাতেই হবে, তা না হলেই ঘটবে বিপত্তি।


     এই বিভাগের আরো খবর