,

নিরাপদ প্রসবের জন্য যা জরুরি

সময় ডেস্ক : আমাদের দেশে মাতৃমৃত্যুর একটা বড় কারণ প্রসবকালীন জটিলতা। গর্ভকালীন সবকিছু স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও দেখা দিতে পারে প্রসবকালীন জটিলতা, অনেক ক্ষেত্রে যা হয়ে উঠতে পারে মা ও শিশুর মৃত্যুর কারণ। এসব ক্ষেত্রে কী করবেন?
কোন প্রসবই ঝুঁকিমুক্ত নয় : প্রসবব্যথা শুরুর পর থেকে সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত সময়টাকে বলে প্রসবকাল (লেবার)। স্বাভাবিক প্রসবের সময়কাল প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা, দ্বিতীয়, তৃতীয় বা তার পরের সন্তানের ক্ষেত্রে ৮-১০ ঘণ্টা। প্রসবকালীন মা ও গর্ভস্থ সন্তানের অবস্থা নিরূপণ, পর্যবেক্ষণ একটি জরুরি বিষয়। অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে সময়মতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ প্রসবকালীন পরিচর্যার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চিকিৎসক, মিডওয়াইফ ও নার্স যৌথভাবে এই দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন।
মনে রাখতে হবে, কোনো প্রসবই ঝুঁকিমুক্ত নয়। আর কিছু কিছু জটিলতা এড়ানো যায় না। কারণ, এগুলো অনির্ধারিত। তবে জটিলতা তৎক্ষণাৎ নির্ণয় করে সময়মতো চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হলে রোগী ও সন্তানকে সুস্থ রাখা যায়।
প্রসবকালীন জটিলতা : জরায়ুর সংকোচনের মাত্রা ও গতি স্বাভাবিকের চেয়ে কম হওয়ার কারণে সাধারণত বিলম্বিত প্রসব হয়ে থাকে। সময়মতো চিকিৎসা দিতে না পারলে নবজাতকের অক্সিজেনশূন্যতা দেখা দেয়। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
প্রসবের মাঝখানে বাচ্চার মাথা আটকে যেতে পারে। বিশেষ করে প্রসবের পথ ছোট ও চাপা থাকলে, গর্ভস্থ শিশুর ওজন চার কেজির বেশি থাকলে, কিংবা শিশুর মাথা অপেক্ষাকৃত বড় হলে এই জটিলতা দেখা দেয়। প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে এই জটিলতা বেশি হয়।
সময়মতো চিকিৎসা না দিলে বা দেওয়া সম্ভব না হলে শিশুর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। মায়েরও গুরুতর জটিলতা দেখা দিতে পারে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। এই সমস্যা নির্ণীত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সিজারিয়ান করে প্রসব করাতে হবে। আর আগে থেকে যদি বোঝা যায়, তবে আগেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের সিদ্ধান্ত নিলে ভালো।
হঠাৎ শিশুর অবস্থা জটিল হওয়া বা ফিটাল ডিসট্রেস : প্রসবের প্রথম ও মাঝামাঝি সময়ে এই পরিস্থিতি দেখা দিলে চিকিৎসা অবশ্যই অস্ত্রোপচার। তবে লেবারের শেষের দুই ঘণ্টায় দেখা দিলে যন্ত্রের সাহায্য নিয়ে প্রসব করানো সম্ভব। কিছু কিছু বাচ্চা প্রসব ব্যথা বা জরায়ুর সংকোচন সহ্য করতে পারে না। অনির্ণীত কারণেও ঘটতে পারে এই সমস্যা। বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে গর্ভস্থ শিশুর হৃৎস্পন্দন পর্যবেক্ষণ করার ব্যবস্থা থাকলে এই সমস্যা সহজেই শনাক্ত করা যায়।
প্রসবের পর মায়ের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ : আমাদের দেশে মাতৃমৃত্যুর এটি প্রধান কারণ। এই সমস্যা স্বাভাবিক প্রসব বা অস্ত্রোপচার, দুই ক্ষেত্রেই হতে পারে। এ ক্ষেত্রে অতি দ্রুত বিভিন্ন ব্যবস্থার মাধ্যমে মায়ের জীবন রক্ষা করতে হয়। সাধারণত ২-১০ ব্যাগ রক্ত লাগে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এমনকি জরায়ু অপসারণ করেও মাকে বাঁচানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। এই পরিস্থিতি ঠেকাতে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব কিংবা প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফ বা নার্সের তত্ত্বাবধানে প্রসব হওয়া জরুরি।
নিরাপদ প্রসবের জন্য : প্রসবকালীন জটিলতার ৩টি বিশেষ কারণ মনে রাখতে হবে- ১. সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব। ২. স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছাতে বিলম্ব। ৩. চিকিৎসা গ্রহণে বিলম্ব। এই তিন কারণ মাথায় রেখে গর্ভবতী মা ও তাঁর পরিবার আসন্ন প্রসবের জন্য সব প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন। একে বলা হয় প্রসব পরিকল্পনা। প্রসবকালীন ও প্রসব–পরবর্তী সময়ে মা ও নবজাতককে সুস্থ রাখাই এর লক্ষ্য।
প্রসব পরিকল্পনার প্রস্তুতি গ্রহণ : কোথায় প্রসব করাবেন, তা আগে থেকেই স্থির করা। চিকিৎসক ও চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা। জরুরি প্রয়োজনে হাসপাতালে যাওয়ার ব্যবস্থা রাখা। হাসপাতালে সঙ্গে কে যাবেন, ঠিক করে রাখা। যানবাহনের ব্যবস্থা রাখা। হাসপাতালের দূরত্ব, ট্রাফিক জ্যাম, যানবাহনের ধরন, ড্রাইভারের সঙ্গে যোগাযোগ ইত্যাদি মাথায় রাখতে হবে। রক্তের গ্রুপ জেনে রাখা ও গ্রুপের রিপোর্ট সঙ্গে রাখা। রক্তদাতার টেলিফোন নম্বর রাখা। জরুরি প্রয়োজনে তাঁর হাজিরা নিশ্চিত করা। টাকা বা অর্থের সংস্থান রাখা।
গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী বিপদ : ১. রক্তের চাপ বা ব্লাড প্রেশার ১৪০/৯০ মিলিমিটার বা তার চেয়ে বেশি হওয়া। ২. পা, হাত, মুখ ও চোখে পানি আসা। ৩. তীব্র মাথাব্যথা ও চোখে ঝাপসা দেখা। ৪. খিঁচুনি হওয়া, চোখ স্থির হয়ে থাকা। ৫. জ্বর বা শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপরে ওঠা। ৬. ১২ ঘণ্টার বেশি প্রসববেদনা স্থায়ী হওয়া। ৭. প্রসবের সময় বাচ্চার মাথার পরিবর্তে হাত, পা কিংবা নাড়ি বের হয়ে আসা। ৮. গর্ভকালীন ও প্রসব পরবর্তী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়া। ৯. প্রসববেদনা শুরুর আগে পানি ভেঙে যাওয়া। ১০. প্রসব পরবর্তী সময়ে গন্ধযুক্ত পানি যাওয়া ও শরীরে জ্বর আসা।


     এই বিভাগের আরো খবর