,

শেরপুরে ‘মাছের মেলা’

সময় ডেস্ক : আনুমানিক ১৫০ বছর আগে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মনুর মুখ এলাকায় পৌষ সংক্রান্তিকে কেন্দ্র মাছের মেলার আয়োজন করেন মথুর বাবু নামে এক জমিদার। সেই থেকে প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তিতে এ মেলা আয়োজিত হয়ে আসছে। যদিও পরবর্তীতে মেলাটি স্থানান্তর হয় উপজেলার শেরপুরে। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের শেরপুরে কুশিয়ারা নদীর পারে এই মেলা বসে। এ বছরও গতকাল শনিবার রাতে বসেছিল শেরপুরের মাছের মেলা। রাতজুড়েই মেলায় পাইকারি মাছ বিক্রি হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল থেকে সারা দিন ধরে খুচরা মাছ বিক্রি হয়েছে।
মৎস্য ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, শনিবার বিকেল থেকেই মাছের মেলা জমতে শুরু করে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দক্ষিণ দিকে এবং মৌলভীবাজার-শেরপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পশ্চিমের মাঠে বেরি বিল-সংলগ্ন স্থানে এই মেলা বসেছিল। মেলাটি স্থানীয় হাওর-বাঁওড় ও নদ-নদীর মাছের জন্য বেশি আকর্ষণীয়।
বৃহত্তর সিলেটের সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারের হাকালুকি, কাউয়াদীঘি, হাইল হাওরসহ কুশিয়ারা নদীর মাছের জোগান থাকে এই মেলায়। এবারও স্থানীয় মুক্ত জলাশয়ের মাছ মেলায় উঠেছে। আড়তগুলোতে সেই মাছ সাজিয়ে রাখা হয়েছে। তবে স্থানীয় মাছের পরিমাণ কম। দামও বেশি।
গতকাল মেলা ঘুরে দেখা যায়, কয়েকজন ব্যবসায়ী বড় আকারের বেশ কিছু বাঘাড়, বোয়াল, আইড়জাতীয় মাছ মেলায় নিয়ে এসেছেন। প্রায় ৪৪ কেজি ওজনের একটি বাঘাড়ের দাম চাওয়া হয়েছে ১ লাখ টাকা। ১০ থেকে ১৮ কেজি ওজনের বোয়ালের কেজিপ্রতি দাম চাওয়া হয়েছে ১ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা। ১১ থেকে ১২ কেজি ওজনের আইড় মাছের কেজি চাওয়া হয়েছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা।
এ ছাড়া রুই, কাতলা, মৃগেল, চিতল, কালবাউশসহ বিভিন্ন জাতের ছোট-বড় মাছ উঠেছে মেলায়। এসব মাছ সারা বছর ধরে শেরপুরের মাছের মেলার জন্য সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। মেলার কিছুদিন আগে থেকে এই মাছ ধরা, সংগ্রহ করা শুরু হয়।
রাজশাহী, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাছ নিয়ে হাজির হয়েছেন বিক্রেতারা। স্থানীয় অনেক খুচরা বিক্রেতা বিভিন্ন স্থান থেকে মাছ সংগ্রহ করে মেলায় নিয়ে এসেছেন। অনেক কৌতূহলী মানুষ মাছ দেখতে মেলায় ভিড় করেন। কেউ কেউ মাছ কিনে বাড়ি ফিরেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থেকে আসা একজন ক্রেতা জানান, এখানে মাছের দাম অনেকটাই কম। আমি ও আমার ভাই এখান থেকে মাছ কিনেছি। আমার মায়ের বয়স ১০০ বছর। মা যদি এক-দুই টুকরো মাছ খান তাতেই স্বার্থক। মাছ কিনে আনন্দ পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মনুমুখ ইউনিয়নের মনু নদ-তীরবর্তী মনুমুখ নামের একটি স্থানে শত বছর আগে এই মাছের মেলা শুরু হয়েছিল। তখন নদপথেই যোগাযোগ সহজ ছিল। স্থানীয় হাওর-নদীর বিভিন্ন জাতের বিশাল সব মাছে মেলা পরিপূর্ণ থাকত। মনু নদের ভাঙনে মনুমুখ বাজারের আয়তন ছোট হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে মেলাটিকে সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের শেরপুর এলাকায় স্থানান্তর করা হয়। এরপর অর্ধশতাধিক বছর ধরে শেরপুরেই এই মাছের মেলা বসছে। পৌষসংক্রান্তির একদিন আগে বসে এই মেলা। মেলায় আনাজ-তরকারি, কৃষিপণ্য, গার্হস্থ্য জীবনের অন্য সব পণ্য উঠলেও এটা মাছের মেলা নামেই পরিচিতি পেয়ে এসেছে।
শেরপুরের আফরোজগঞ্জ মৎস্য আড়তদার বহুমুখী সমবায় সমিতির কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান জানান, অন্যবারের তুলনায় এবার স্থানীয় মাছ কম। স্থানীয় মাছের দামও বেশি। তবে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাছ আসে।
খলিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু মিয়া চৌধুরী বলেন, ব্যক্তিমালিকানার জায়গায় মেলা হয়। প্রতিবছর জায়গা কমছে। ঐতিহ্যবাহী বাজার, নির্দিষ্ট জায়গা নেই। মেলার একদিন আগে ডাক (ইজারা) দেওয়া হয়। প্রস্তুতি নেওয়া যায় না। আগে হলে প্রস্তুতি নেওয়া যেত, মানুষ জানত।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাসরিন চৌধুরী বলেন, ‘মেলায় গিয়েছিলাম, চাষের মাছই বেশি দেখলাম। আগের মতো নদীর মাছ নেই। নির্বাচনের জন্য সময় কম ছিল, তাই প্রকাশ্য নিলামে ইজারা দেওয়া হয়েছে। পরেরবার থেকে এক মাস বা ১৫ দিন আগে টেন্ডার দেওয়া হবে। এবার এই মেলা ইজারা থেকে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।


     এই বিভাগের আরো খবর