,

‘ডিজিটাল’ নগরে হাত নেড়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ!

নিজস্ব প্রতিনিধি : সিলেটকে দেশের প্রথম ডিজিটাল শহর হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলো সরকার। শহরজুড়ে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সেবা, ফেস রিকগনিশন ক্যামেরা স্থাপন ও সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অটোমেশন ব্যবস্থা চালুর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু এই তিনটির মধ্যে দুটি সেবা চালুর কিছুদিন পরই মুখ থুবড়ে পড়ে। আর একটি চালুই হয়নি, আছে থমকে। ‘নামের’ এই ডিজিটাল শহরে এখনো হাত নেড়ে করা হয় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ! যা মহানগবাসীর জন্য হতাশার। এই প্রযুক্তির সময়ে সিলেট মহানগরের মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা হাত নেড়ে কাজ সারলেও শুরুতে কিন্তু ছিলো সিগন্যাল বাতি। সময়ের ব্যবধানে আরও উন্নত প্রযুক্তি সংযুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও এ ক্ষেত্রে পিছিয়েছে সিলেট।
১৯৯৬ সালে পৌরসভা থাকাবস্থায় উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় শহরের ছয়টি ব্যস্ততম মোড়ে স্থাপন করা হয় ট্রাফিক সিগনাল বাতি। সেই সময় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে শহরের চৌহাট্টা, রিকাবীবাজার, নয়াসড়ক, সুরমা মার্কেট, নাইওরপুল ও আম্বরখানা পয়েন্টে বাতিগুলো লাগানো হয়। কয়েক মাস জ্বলেও ছিল বাতিগুলো। কিন্তু কিছু দিন জ্বলার পর একে একে বন্ধ হয়ে যায় সিগন্যাল বাতিগুলো। বন্ধ হওয়ার পর থেকে কোনো মেরামত না করেই হঠাৎ উধাও হয়ে যায় সিগন্যাল বাতিগুলো।
ডিজিটালাইজেশনের যুগে এসেও সিলেটের রাজপথে দেখা মিলছে না কোনো ট্রাফিক সিগন্যাল বাতির। এখনো সনাতন পদ্ধতিতে মহানগরের মোড়ে মোড়ে চলছে হাত নেড়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ। যানবাহন নিন্ত্রয়ণে রাখতে রাস্তার মোড়ে বসানো ট্রাফিক সিগন্যালে ব্যবহৃত লাল-হলুদ-সবুজ বাতির দেখা মিলছে না ২৮ বছর ধরে।
২০১৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন বাজেটে ট্রাফিক সিগন্যালসহ রাস্তাঘাটের বাতি সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও ২০১৭-১৮ সালের বাজেট থেকে নতুন করে ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপনে কোনো বরাদ্দ রাখা হয় নি। স্থাপিত ট্রাফিক সিগন্যাল বাতির স্টিলের খুঁটিগুলোর কোনো অস্তিত্ব নেই।
সিগন্যাল বাতি না থাকায় এখনো নগরীতে হাতের ইশরায়ই যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশকে। পুলিশের লোকবল সংকট ও ক্রমবর্ধমান যানবানের কারণে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশকে। আর দিনভর নগরীর বিভিন্ন মোড়ে লেগে থাকছে অসহনীয় যানজট।
২০১৭ সালে দেশের দুটি নগরকে ডিজিটাল সিটি হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। সে লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগও নেওয়া হয়। তবে এই ‘ডিজিটাল নগরে’ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এখনো রয়ে গেছে অ্যানালগ। এখনো হাতের ইশারায় নগরীতে চলাচলকারী যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশকে।
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘সিগন্যাল বাতি চালু হলে আমাদের পুলিশ সদস্যদের কাজ একটু সহজ হতো। সারা দিন সড়কে দাঁড়িয়ে হাত নাড়াতে হতো না।’
তিনি বলেন, সিগন্যাল লাইট কেন চালু হয়নি বা চালু হবে কী না, তা আমরা বলতে পারব না। এটি সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব। তবে কেবল লাইট চালু করলেই যানজট নিরসন হবে না। এ জন্য ফুটপাত থেকে হকার সরানো, সব মার্কেটে পার্কিং ব্যবস্থা চালু, নগর থেকে সবজি বাজার স্থানান্তর, নগরীর মোড়গুলোতে নির্মিত স্থাপনা ট্রাফিকবান্ধব করে গড়ে তোলাসহ আরও কিছু উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, প্রথম দিকে ট্রাফিক পুলিশের আপত্তি, অর্থাভাব ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সিগন্যাল বাতিগুলো চালু করা যায়নি। পরবর্তী সময়ে কয়েকটি বাজেটে এগুলো সংস্কারের জন্য আলাদা খাত রাখা হলেও বরাদ্দ না পাওয়ায় সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, বাজেট ঘোষণার সময় আমরা অনেক খাতই সংযুক্ত করি। কিন্তু তা বাস্তবায়নের জন্য সরকারি বরাদ্দের উপর নির্ভর করতে হয়। সরকার থেকে বরাদ্দ না পেলে এই কাজগুলো করা যায় না।


     এই বিভাগের আরো খবর