,

বসন্তে অ্যালার্জি প্রতিরোধে

সময় ডেস্ক : চলছে বসন্তকাল। প্রকৃতি সেজেছে রংবেরঙের ফুলে। ফুল সবার পছন্দের হলেও মাঝেমধ্যে তা অনেকের জন্য বিপদ বয়ে আনে। গাছে ফুল আসে আর এই ফুলের রেণু বাতাসে ভেসে বেড়ায়। বাতাসবাহিত এই রেণু আমাদের চোখ, নাক, ফুসফুসে প্রবেশ করে; যার ফলাফল ভয়াবহ অ্যালার্জি। এর ফলে চোখে কনজাংটিভাইটিস, ফুসফুসে প্রদাহজনিত রোগ বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এ ছাড়া অনেকের ত্বকেও নানা রকমের সমস্যা হয়।
ফুলের রেণু আমাদের শরীরে ইমিউনো সেলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে। কোষ থেকে হিস্টামিন নামে এক ধরনের রাসায়নিক বের হয়। এ হিস্টামিনই নানা রকম অ্যালার্জি, চোখের প্রদাহ ও ত্বকের রোগের জন্য দায়ী। হিস্টামিন মানুষের রক্ত থেকে ফ্লুইড বের করে দেয়। এর ফলে চোখ লাল হয়। বসন্তকালেই অ্যালার্জিজনিত কারণে অ্যাজমা বা হাঁপানি বাড়ে। সিওপিডির রোগীদের কষ্ট আরও বেড়ে যায়। কারও কারও এ ঋতুতে অ্যালার্জিক এলভিওলাইটিস দেখা দেয়। এটা হাঁপানির মতো এক ধরনের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ। এক জাতীয় ছত্রাক বা ফুলের রেণু নিঃশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে ঢুকে এই রোগের জন্ম দেয়।
এ ব্যাপারে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং হেড-নেক সার্জন ডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফী জানান, ফুলের রেণুতে অ্যালার্জেন (যা অ্যালার্জি সৃষ্টি করে) থাকে। যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তারা অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে এলে রক্তে আইজিইর মাত্রা অনেক বেড়ে যায় এবং এই আইজিই নাকের ভেতরে থাকা মাস্ট সেল নামক কোষকে ভেঙে দেয়। ফলে এই কোষ থেকে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ বের হয়ে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে নাকে প্রদাহ ঘটায়। এর ফলে নাক চুলকানো, একনাগাড়ে কয়েকটি হাঁচি, নাক দিয়ে পানি ঝরে যাওয়া, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, গলা খুশখুশ করা, মাঝেমধ্যে এর সঙ্গে মাথাব্যথা দেখা দেয়। অনেক সময় এসবের সঙ্গে কারও কারও চোখ দিয়ে পানি পড়ে এবং চোখ লাল হয়ে যায়। অনেক দিন ধরে এ ধরনের অ্যালার্জিতে আক্রান্ত রোগীদের নাসারন্ধ্রের পার্শ্ববর্তী মাংসপিণ্ড (ইনফিরিয়র টারবিনেট) ফুলে গিয়ে থলির মতো বড় এবং বিবর্ণ হয়ে যায়। কারও কারও আবার চোখের চারপাশে ফোলা ভাব দেখা দেয়। ডা. শাফী আরও জানান, যাদের অ্যালার্জিজনিত হাঁপানির সমস্যা আছে, তারা এ সময় বেশি সমস্যায় পড়েন।
কী করবেন? ডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফীর মতে, অ্যালার্জি প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হলো কারণ শনাক্ত করে তা এড়িয়ে চলা। এ জন্য রোগীকে সতর্কতার সঙ্গে খুঁজে বের করতে হবে, তার শরীরে কী কী কারণে অ্যালার্জি হয়। এ জন্য বলা হয়ে থাকে, অ্যালার্জি চিকিৎসার প্রথম ধাপ হলো হেলথ এডুকেশন। যাদের এ সমস্যা আছে তারা যতটা সম্ভব ধুলাবালি, ফুলের বাগান এড়িয়ে চলবেন। এ জন্য অবশ্যই নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি শিশুরা যাতে এ সময় ফুলের বাগানে বা ঘাস নিয়ে খেলা না করে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ঘরের দরজা-জানালা সব সময় খোলা রাখলে ফুলের রেণু সহজেই ঘরে প্রবেশ করতে পারে। যাদের অ্যালার্জির সমস্যা তীব্র তারা ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন। ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ের তাপমাত্রার হঠাৎ তারতম্যের কারণে অনেকের সর্দি-কাশির সমস্যাও বাড়ে। সে ক্ষেত্রে প্রথমে ঘরোয়া চিকিৎসা নিন। সর্দির-কাশির সঙ্গে অ্যালার্জির সমস্যা যোগ হয়ে পরিস্থিতি খারাপ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।


     এই বিভাগের আরো খবর